চলে গেলেন বাংলাদেশের গ্যালেলিও -মীর মাসরুর জামান

19 Jan 2021, 02:47 PM শ্রদ্ধাঞ্জলি শেয়ার:
চলে গেলেন বাংলাদেশের গ্যালেলিও -মীর মাসরুর জামান

উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় তাঁর বাবা মারা যান। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় মা, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় বড়ো বোন মারা যান। জীবনের সবচেয়ে বড়ো শোকগুলো এত অল্প বয়সে এত অল্প দিনের মধ্যে সয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্মাতক ও স্মাতকোত্তর পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্র অবস্থায়ই তাঁকে চাকরি করতে হয়েছে। কাজ করেছেন মার্কিন একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে। ইন্টারভিউ নিয়ে সেই চাকরি নেওয়ার প্রস্তুতির জন্য তিনি ৪৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো না দেখে পড়েছেন। লিবারেল আর্টসের ছাত্র হয়ে সায়েন্স পড়াদের চাকরি তিনি অর্জন করেছেন। এর মাঝে তার লেখাপড়ায় কোনো ছেদ পড়েনি। সাফল্যেরও কমতি নেই। প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যুক্ত থাকেন তিনি।

পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে যোগ দিতে হয়েছে আরো ভালো চাকরিতে। তাঁর বয়স যখন ২৪ তখন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওই বিজ্ঞাপনী সংস্থাটির স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। প্রতিষ্ঠান তাকে ভালো বেতন, গাড়ি আর ঢাকার রাজারবাগে একটি ফ্ল্যাট দেয়। সেই ফ্ল্যাট থেকেই একাত্তরের ২৫শে মার্চ রাতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলা-হত্যাযজ্ঞ দেখেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে বীর বাঙালির প্রতিরোধ দেখেন। বুঝে যান, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভালো বেতনের চাকরি, গাড়ি, ফ্ল্যাট সব তুচ্ছ হয়ে যায়। সব ফেলে যুদ্ধে চলে যান এই তরুণ। জীবনযুদ্ধে সফল হতে থাকা আলী যাকের মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিকও ছিলেন তিনি।

স্বাধীন দেশে আলী যাকের দেশের অন্যতম শীর্ষ বিজ্ঞাপনী ও বিপণন-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটি’র কর্ণধার, জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী, বরেণ্য নাট্যজন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি- সব মিলে সত্যিকারের কিংবদন্তি।

আলী যাকেরের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ই নভেম্বর। জন্মস্থান- সে সময়ের চট্টগ্রাম জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার [বর্তমানে জেলা] রতনপুর ইউনিয়ন। বাবা মাহমুদ তাহের এবং মা রেজিয়া তাহেরের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে কুষ্টিয়া এবং মাদারীপুরে তার শৈশবের বড়ো অংশ কাটে। আলী যাকের ১৯৬০ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।


নাটকের জীবন

আলী যাকের ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরই তিনি নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ে যোগ দেন। এখানে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে প্রথমবারের মতো নির্দেশনা দেন। এই নাটকটির মধ্যদিয়েই বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যপ্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়।

এছাড়াও আলী যাকেরের অভিনয় করা বিখ্যাত মঞ্চনাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে : দেওয়ান গাজীর কিস্সা, ম্যাকবেথ, টেমপেস্ট, কবর দিয়ে দাও এবং গ্যালিলিও। তাঁর নিজের নির্দেশনায় অভিনয় করা নাটকগুলো হলো- বিদগ্ধ রমণী কুল, তৈল সংকট, এই নিষিদ্ধ পল্লিতে, সৎ মানুষের খোঁজে, অচলায়তন, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, নূরলদীনের সারাজীবন এবং কাঁঠাল বাগান (চেরি অরচার্ড)।

চলচ্চিত্রেও শক্তিমান অভিনেতা আলী যাকের। খুব বেশি না হলেও মুক্ত ও পূর্ণদৈর্ঘ্য মিলিয়ে যে চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে- আগামী (১৯৮৬), নদীর নাম মধুমতী (১৯৯৬), লালসালু (২০০১), রাবেয়া (২০০৮)।

টেলিভিশন নাটকের দর্শকদের মাঝেও আলী যাকেরের অসামান্য জনপ্রিয়তা রয়েছে। ধারাবাহিক এবং এক পর্বের নাটকগুলোর মধ্যে বিখ্যাত- বহুব্রীহি (১৯৮৮), আজ রবিবার (১৯৯৯), একদিন হঠাৎ (১৯৮৬), নীতু তোমাকে ভালোবাসি, পাথর সময়, অচিনবৃক্ষ, আইসক্রিম, পান্ডুলিপি এবং গণি মিয়ার পাথর।

জোরালো কণ্ঠের অধিকারী আলী যাকের বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন। কবিতা আবৃত্তি করেও উজ্জীবিত করেছেন মানুষকে। অসম্ভব মেধাবী এই গুণী যা করেছেন, তাতেই ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন। মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলেছেন।


তবু কিছু মনিহার

কোনো পুরস্কারই আলী যাকেরের চেয়ে বড়ো নয়। তাঁর সব চেয়ে বড় পুরস্কার বরং মানুষের মনে তাঁর অনন্য আসন। তারপরও তিনি শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ভ‚ষিত হযেছেন। এছাড়া তিনি পেয়েছেনÑ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক, অভিনয়ের জন্য দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সেলিব্রিটিং লাইফ (২০১৮) এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০১৯)।


সমাজে একজন

আলী যাকের তখন বেশ অসুস্থ। বাসা থেকে বের হওয়ার অবস্থা তাঁর নেই। এর মাঝে এ বছরের জানুয়ারিতে চলে গেলেন অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক ও মঞ্চকুশলী ইশরাত নিশাত। শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। হঠাৎ দেখা গেল আলী যাকের। হুইল চেয়ারে বসা হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ। সন্তানতুল্য নাট্যকর্মী ইশরাত নিশাতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলেন।

বেশ কয়েক বছর আগে। শিশু একাডেমিতে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা চলছে। আলী যাকের অন্যতম বিচারক। প্রতিযোগিতা শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সে সময় তিনি খুব জোর দিয়ে যা বললেন, তা হলো- সন্তানদের কিছু বানাতে চেয়ে জোর করতে হয় না। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে হয় না। পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা বলা যায়, যাতে তারা তাদের সঠিক পথ বেছে নিতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, তাঁর নিজের ছেলেকে তিনি অভিনেতা বানাতে চেয়ে জোর করেন না, বরং ছেলে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে এবং তিনি তাতেই উৎসাহ দেন।

আলী যাকের মানুষের সত্তার স্বাধীনতা আর চিন্তার মৌলিকত্বে বিশ্বাস করতেন। অনেক জায়গায় অনেকবার বলেছেন, ব্যক্তিত্ব নির্মাণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনকে কতটা গুরুত্ব দেন তিনি।


আলী যাকের আরও

সৌখিন আলোকচিত্রশিল্পী ছিলেন আলী যাকের। তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য ছিলেন। শিল্পীর রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংগঠনিক দায়বদ্ধতায় আলী যাকের ছিলেন সামনের সারিতে। নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ের সভাপতি আলী যাকের গ্রæপ থিয়েটার ফেডারেশনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, একাত্তরের ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন-সংগ্রামে মঞ্চ-রাজপথ-গণমাধ্যমে সোচ্চার ছিলেন আলী যাকের।

সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখে সামাজিক-রাজনৈতিক অসঙ্গতি তুলে ধরে নিজের স্পষ্ট মত প্রকাশ করে গেছেন তিনি। ক্রিকেট খেলার ধারাবর্ণনায়ও বহুমুখী গুণী আালী যাকেরকে পাওয়া গেছে।

আলী যাকের এবং সারা যাকের ১৯৭৭ সালে বিয়ে বন্ধনে যুক্ত হন। সারা যাকের দেশের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী, সংগঠক এবং উদ্যোক্তা। তাঁদের দুই সন্তানÑ ছেলে ইরেশ যাকের এবং মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া। ইরেশ এবং শ্রিয়াও তাঁদের নাট্য প্রতিভায় উজ্জ্বল। আলী যাকের-সারা যাকেরের সংসারে আরও আছেন ইরেশের স্ত্রী মিম রশিদ এবং তাঁদের মেয়ে নেহা।


তবু অনন্ত জাগে

বছর চারেক আগে আলী যাকেরের কান্সার ধরা পড়ে। এরপর অভিনয় থেকে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিলেও সবশেষ ২০১৯ সালে আবার গ্যালিলিও হয়ে মঞ্চে আসেন তিনি। নভেম্বরের মাঝামাঝি শারীরিক সমস্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বাসায় নেওয়া হলেও অবস্থা জটিল হয়ে গেলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে-সময় তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসও শনাক্ত হয়। ২৭শে নভেম্বর ৭৬ বছর বয়সে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন আলী যাকের। পরদিন শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

আলী যাকেরকে তবু বিদায় বলা যায় না। যেখানে তিনি ছিলেন সেখানে তিনিই থাকবেন। একজনই আলী যাকের।


আলী যাকের : ফিরে দেখা

১৯৯৬ সাল থেকে আলী যাকের নানাসময়ে নানাভাবে আনন্দভুবনে উপস্থাপতি। কখনও প্রতিবেদকের বিশ্লেষণে, কখনও পরিবারসমেত আবার কখনও-বা বন্ধুর দৃষ্টিতে। তারই দু-একটি চম্বুক অংশ এখানে পত্রস্থ করা হলো-


‘আমাদের সময় তো এরকম টিভি বা অন্যসব মিডিয়া ছিল না। আমরা আনন্দটা পেতাম প্রকৃতির কাছ থেকে’- বললেন আলী যাকের। ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মেছিলেন চট্টগ্রামে। তাই তো তাকে দেশ বিভাগ বা দাঙ্গার রূপগুলো দেখতে বা বুঝতে হয়নি। তার বদলে দেখতে হয়েছে, কাটাতে হয়েছে নিপাট একটি ছেলেবেলা। বাবার ছিল বদলির চাকরি। সেই সুবাদে নানা জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। এরমধ্যে শৈশবের ভাগটা পড়েছে কুষ্টিয়ায়। গড়াই নদী, কাশবন আর রেললাইনে বেড়ানোর সেই অপূর্ব শৈশব। মুলিবাঁশের বন্দুক থেকে বৈচি ফলের গুলি ছোঁড়া, মেলা থেকে কাগজ, মাটি আর কাঠের খেলনা কেনা- এইতো তখন বড়ো কাজ। ঘরে বসে রবীন্দ্রনাথ পড়া, মা অর্গান বাজাতেন, সেইটাই মনোযোগ দিয়ে শোনা ; দিদির সেতার বাদনে মোহিত হওয়া- একেই না বলে শৈশব। নিজেদের বাড়িতেই বসত নিয়মিত সাহিত্য বাসর, সে আড্ডায় আলী যাকেরও ছিলেন অংশীদার। পাড়ায় নিজেরাই বের করতেন দেয়াল পত্রিকা। লেখার মাধ্যমে চলত প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিতা চলত খেলার মাঠেও। ‘আসলে আমরা সেই প্রজন্মের মানুষ যারা বাল্যকালে বীরপুরুষ পড়ে চোখের জলে ভাসতাম’- বললেন তিনি। তবে বীরপুরুষ হওয়ার জন্য হাতে বন্দুক তুলতে হয়নি তাকে, মনের ভেতরে জোরটা বাড়িয়েছেন, শক্তি রচনা করেছেন নিজের ভেতরে। করেছেন মুকুল মেলা। আহা সবাই মিলে স্টেডিয়ামে প্যারেড করা, ড্রাম বাজানো- কী সব মজার দিন !


এক ভুবনের দুই বাসিন্দা

এশিয়াটিক প্রধানত একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা, কর্র্ণধার আলী যাকের। সাথে রয়েছেন স্ত্রী সারা যাকের এবং একান্ত বন্ধুজন আসাদুজ্জামান নূর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পেশাগত [বিজ্ঞাপন] দেখা সাক্ষাৎ এবং সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি নেশাগত [মঞ্চনাটক] দেখা সাক্ষাৎ ঘটে দু’জনার। সপ্তাহের পাঁচদিন এভাবেই কাটে তাদের। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘদিন। সকালে এসে আলী যাকের তৃতীয় তলা থেকে নেমে আসেন দোতলায়। সেখানেই কনফারেন্স রুমে কাটে দুপুর অব্দি। প্রায়ই সঙ্গে থাকেন সারা আর নূর। সেই ’৭৯-এ আলী যাকের এশিয়াটিক কিনে নেওয়ার পর সহকর্মী হিসেবে বেছে নিলেন নাট্যসহকর্মী নূরকে। অসংখ্য পেশা বদলের পর এটাই হলো নূরের জীবনের দীর্ঘমেয়াদি পেশা। তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী- শেষাবধি আলী যাকেরই আমাকে থিতু করলেন।

[৪ বর্ষ ১-২ সংখ্যা ১ জুন ১৯৯৯, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬]


তার একদিন, সারা যাকের

নির্দেশক আলী যাকের, অভিনেতা আলী যাকের, অ্যাডভার্টাইজিংম্যান আলী যাকের। তবে যার সাথে আমার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কেটেছে, এইসব পরিচয়ের ওপরে একজন মানুষ। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছ’টা পত্রিকা নিয়ে বসে। পাশে এক ফ্লাস্ক কফি, চিরতার পানি...। ছ’টার মধ্যে সব ক’টা পত্রিকা দখল করা চাই। যে একটি মাত্র যুক্তি তাকে ছ’টার মধ্যে একটি পত্রিকা আমার জন্য ছেড়ে দিতে বাধ্য করে তা হলো, এ না হলে তার জীবনসঙ্গী রাজনীতি এবং পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে অবগত হবে না। হ্যাঁ একদিকে যেমন একজন আধুনিক মানুষ অন্য দিকে ভীষণ রাজনৈতিক। আমি অনেক রাজনীতি করা মানুষ দেখেছি। কিন্তু এরকম আবেগপ্রবণ বাঙালি আমি দেখিনি। পত্রিকার পাতায় নিবিষ্ট হওয়ার অর্থ আমার কাছে, তার বাঙালি সত্তাকে রোজ সকালে পরখ করে দেখা। আজ তার বাংলাদেশ কেমন আছে ?

[৪ বর্ষ ১-২ সংখ্যা ১ জুন ১৯৯৯, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬]