বৃক্ষমেলায় একদিন

19 Jun 2023, 04:51 PM খবর শেয়ার:
বৃক্ষমেলায় একদিন

এবারের বৃক্ষমেলা ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে 'গাছ লাগিয়ে যত্ন করি সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি'। এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেলাটি। ৫ জুন ২০২৩ থেকে শুরু হয়েছে এবারের বৃক্ষমেলা। একটানা ২৬ জুন পর্যন্ত চলবে। পরবর্তীসময়ে ঈদের ছুটি শেষে আবার ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে মেলা। মেলা খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশ করলেই সবারই মনে হবে কোনো সবুজে ঘেরা বিশাল বনে ঢুকে পড়েছেন। এ যেন এক ঘন সবুজে ঘেরা অরণ্য। আম-কাঁঠাল থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য গাছ, বিভিন্ন প্রজাতির ফুল-ফল সবই আছে বৃক্ষমেলায়। মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছে থোকায় থোকায় ফল ও ফুল ধরে রয়েছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এছাড়া বনজ, ফলজ, ঔষধি গাছ কিংবা ঘর সাজানোর অর্কিড, বনসাই সবই আছে মেলায়!

মনীষা চক্রবর্তী পছন্দের আঠগোলাপ দেখছেন।

নানান বয়সী ক্রেতাদের পদচারণায় বেশ সরব হয়ে উঠেছে এবারের বৃক্ষমেলা। ১৫ জুন ২০২৩ বিকেলে আমি এবং ফটো সাংবাদিক জাকির হোসেন যাই বৃক্ষমেলায়। আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমের কারণে আজকে ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেল। যেসব ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন তারা গাছ কেনার চেয়ে ঘুরে ঘুরেই দেখছেন বেশি। যারা ঘুরে ঘুরে পছন্দ করে কিনছেন তারা পছন্দের গাছ নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

সুমাইয়া নাসরিন তুলি একটি ভেন্ডা গাছ কিনেছেন এক হাজার ছয়শ' টাকা দিয়ে।

শহীদ সহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের থার্ড ইয়ারের ছাত্রী মনিষা চক্রবর্তী পছন্দের গাছ কেনার জন্য বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তিনি বলেন, 'সবগুলোই সুন্দর। কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনব ভেবে পাচ্ছি না। আসলে আমি এসেছি কাঠগোলাপ কেনার জন্য। তাছাড়া আমি হলে থাকি। হলে রাখার মতো কোনো সিলেক্টিভ গাছ পেলেও কিনব।'

সুমাইয়া নাসরিন তুলি এসেছেন ধানমন্ডি থেকে। তিনি একটি ভেন্ডাগাছ কিনেছেন ১৬ শ’ টাকা দিয়ে। পছন্দের আরও কিছু গাছ কিনবেন।

মেলায় মোহাম্মদপুর থেকে আসা সোমা আরেফিনকে দেখা গেল কয়েকটি ফুলগাছ কিনতে। কথা বলে জানা গেল বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি তার বিল্ডিংয়ের ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের বাগান করছেন। পুরো ছাদ জুড়ে তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। আরো কিছু পছন্দের গাছ কেনার জন্য তিনি মেলায় এসেছেন।

এবারের মেলায় উন্নতমানের আম, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, ডুমুর, করমচা, কাজুবাদাম, লাল কাঁঠাল, কিউই ফল, চেরি ফল, ড্রাগন ফল, জামির, স্ট্রবেরি, পেয়ারা এবং নাশপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল রয়েছে। পাশাপাশি এসব গাছের চারাও রয়েছে মেলায়।

এছাড়া বিভিন্ন স্টাইলের সরাসরি সাজানো ফুল গাছের মধ্যে জবা, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাঁপা, বাসন্তী, মালতি, নয়নতারা ফুল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

প্রতিবছর উপজেলা পর্যায়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। প্রতিবছর ৫ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার বাণিজ্যমেলার মাঠের পাশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে বিশাল চত্বর জুড়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

বন্যপ্রাণী গবেষণা কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের তথ্যমতে এবারের মেলায় ৭৮টি ছোটো বড়ো স্টল স্থান পেয়েছে। ৫ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ৯ দিনে চারা বিক্রি হয়েছে ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩ শত ৩০টি। 

৯ দিনে বিক্রিকৃত টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৭ হাজার একশত টাকা।

প্রতিবেদন : শহিদুল ইসলাম এমেল