সহজপাঠের বার্ষিক উৎসব মুগ্ধ করল দর্শক-শ্রোতাকে

25 Jun 2023, 12:04 PM খবর শেয়ার:
সহজপাঠের বার্ষিক উৎসব মুগ্ধ করল দর্শক-শ্রোতাকে

সহজপাঠ বিদ্যালয়। গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরে শিশুর সামূহিক বিকাশকে গুরুত্ব দিয়ে গড়ে ওঠা এক ভিন্নধর্মী বিদ্যালয়।

এই শিক্ষায়তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা-গবেষকেরা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিক্ষা-ধারায় সংযুক্ত। বর্তমান নতুন শিক্ষা-কার্যক্রম ও পাঠ্যক্রমের এক বাস্তব উদাহরণ ও প্রচেষ্টা সহজপাঠ বিদ্যালয়। ঢাকার লালমাটিয়ায় এর শিক্ষাপ্রাঙ্গণ। শিক্ষাকর্মীরা একে বলেন ‘শিশুদের অভয়ারণ্য’।

এখানে শিশুরা সকল বিষয় শেখে নাচ-গান-পাঠাভিনয়-অভিনয় এর মধ্যদিয়ে। মুখস্থবিদ্যার বদলে বিশ্বকে জানার অপার আগ্রহ ও পাঠাভ্যাসকে আনন্দদায়ক করে তুলতে, গদ-বাঁধা বই বা নির্ধারিত পাঠ্যক্রমে আটকে না থেকে তারা বিভিন্ন ভাষার বই পড়ে ও সে অনুযায়ী কাজ করে।

২০২৩-এ শুরু হওয়া নতুন শিক্ষা-কার্যক্রম অনেক আগে থেকেই এখানে পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের শিক্ষা-ধারার মূল স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন সংস্কৃতিজন, শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক।

তাই, ওয়াহিদুল হকের এই শিক্ষা-চিন্তায় ব্রতী প্রতিষ্ঠান সহজপাঠ, প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বার্ষিক উৎসব পালন করে থাকে।

এবছর, ২১ ও ২২ মে সহজপাঠ এই বার্ষিক উৎসবের আয়োজন করেছিল। উৎসবের সিংহভাগ কাজ করেছে সহজপাঠের শিশুরা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শিক্ষাকর্মীরা।

দুইদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শিশুদের লেখা ও ছবি আঁকার প্রদর্শনীও দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়েছে গান- ‘মাঝিরে, আজি ঝড়-তুফানে চালাও তরী’ ও ‘স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারি’,

নাচ- ‘নাচতো দেখি আমার পুতুল সোনা’, ‘তালটুকে তালগাছ’ ও ‘আদিবাসী নাচ’, ছড়া- ‘গুটুল-মুটুল’, ছড়াগান- ‘হরিণ হরিণ’, গল্প- ‘গোল রুটি’, ব্রতচারী- ‘কাউয়ায় ধান খাইলো রে’, ‘ডালে বসে কাক ডাকে’, ‘একটি বাঁদরে’ ও ‘এক যে ছিল শেয়াল’। শ্রুতিনাটক- ‘ছন্দযুদ্ধ’, সহজপাঠের শিশুদের লেখা পুঁথিপাঠ [নতুন শিক্ষাকার্যক্রম বিষয়ে] এবং সহজপাঠের শিশুদের লেখা নানা-নাতির গম্ভীরা [নতুন শিক্ষা-কার্যক্রম বিষয়ে]। সবশেষে পরিবেশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য ‘তাসের দেশ’। সমবেতকণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়।

সম্পূর্ণ উৎসবে প্রত্যেক শ্রেণির প্রতিজন শিশুর অংশগ্রহণ ছিল। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের অংশগ্রহণ বিশেষ আকর্ষণীয়। নাটকে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণির অনেক শিশুর একসাথে দল বেঁধে কাজ করা তাদের মধ্যে আনন্দ আর উৎসাহের সঞ্চার ঘটায়।উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিশুদের লেখা পুঁথি ও গম্ভীরার পরিবেশনা। তারা এভাবেই নিজেদের কাজ সবসময় নিজেরাই করে।

উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন। শিশুদের এই পরিবেশনায় তাঁরাও মুগ্ধ হয়েছেন ও তাদের প্রশংসায় বিহ্বল করে তুলেছেন। অন্যান্য দর্শকও নিজেদের ভালো লাগা ও ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। ‘তাসের দেশ’ নাটকের মূলসুরে নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে স্বতন্ত্র আত্মাকে খুঁজে নিয়ে ইচ্ছে ও আনন্দের জয়গান গেয়ে শিশুরা নতুন শিক্ষা-কার্যক্রমের নতুন ধারা ও জ্ঞানের অভিনব অনুশীলনকে স্বাগত জানিয়েছে। এই শিক্ষাব্যবস্থাও তাদের স্বাতন্ত্র্য খুঁজে নিতে সাহায্য করবে।

শিশুদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা, দলীয় কাজ, অনুশীলন ও আনন্দময় উৎসবের একটি অংশ এই বার্ষিক উৎসব। এছাড়াও তারা সারাবছর ঋতুভিত্তিক, বিষয়ভিত্তিক অন্যান্য আরো উৎসব করে। এমনকি বার্ষিক মূল্যায়নও তাদের জন্য উৎসবের মতোই। এভাবেই উৎসবমুখর পরিবেশে ও বিভিন্ন চর্চার মধ্যদিয়ে তারা সামূহিক দিক থেকে বেড়ে উঠছে, বিকশিত হচ্ছে ক্রমশ। সহজাপাঠের শিশুদের এই নিয়ত চেষ্টায় তাদের ও তাদের শিক্ষাকর্মীদের জন্য রইল শুভকামনা।

লেখা : অমিয়া অমানিতা