ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার কেড়ে নিল মিতা চৌধুরীর প্রাণ

02 Jul 2023, 02:36 PM শ্রদ্ধাঞ্জলি শেয়ার:
ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার কেড়ে নিল মিতা চৌধুরীর প্রাণ

গুণী অভিনয়শিল্পী মিতা চৌধুরী চিরবিদায় নিলেন ২৯ জুন ২০২৩। বাংলাদেশে সেদিন ছিল ঈদুল আজহা। মিতা চৌধুরী তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মিতা চৌধুরীর জন্ম। বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক চৌধুরী, মা নূর-ই আক্তার বানু ছিলেন গৃহিণী।

গত শতকের সাত ও আটের দশকে মঞ্চ ও টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ছিলেন মিতা চৌধুরী। তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্মীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে হলিক্রস গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিত মেধাতালিকায় অষ্টম স্থান অর্জন করেন।

দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন মিতা চৌধুরী নাট্যজগতে যুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ বেতারে খবর পড়তেন, এর পাশাপাশি ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক, অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে মিতা চৌধুরীর প্রথম নাটক আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘আকেরটি শহর চাই’। প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘শান্তি কুটির’, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রচারিত ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে অভিনয় করে মিতা স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন। এই নাটকে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল ‘লিলি’। হুমায়ূন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘নন্দিত নরকে’ নাটকে ‘রাবেয়া’ চরিত্রে অভিনয় তাঁর আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী মিতা চৌধুরী হঠাৎ করেই বিয়ে করে জীবনসঙ্গী শহীদুর রহমানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী হন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে এসে পুনরায় অভিনয় করতে শুরু করেন। এসময়ে তিনি টেলিভিশনে ‘ডলস হাউজ’, ‘যোগ-বিয়েগ’সহ বেশ ক’টি নাটকে অভিনয় করেন। ব্রিটিশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘দিস ইজ গোয়িং টু হার্ট’, ‘ইউ আর লেডি পার্টস’, ‘গুড কর্মা হসপিটাল’ প্রভৃতি নাটকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন মিতা চৌধুরী।

মঞ্চে অভিনয় করেন ‘সূচনা’, ‘গুড নাইট মা’, ‘অমানুষ’ নাটকে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মামুনুর রশীদের সঙ্গে ‘অমানুষ’ নাটকে অভিনয়ই দেশের মঞ্চে তাঁর শেষ উপস্থিতি।

মিতা চৌধুরী কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ‘বিষ’, ‘আন্ডার কনস্ট্রকশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ উল্লেখযোগ্য।

মিতা চৌধুরীর জীবনসঙ্গী শহীদুর রহমান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে পরলোক গমন করেন। মিতা চৌধুরীর জীবনপ্রদীপও নিবে গেল ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারের কারণেই। এই দম্পতির দুই সন্তান মেয়ে ‘নবীন’ ও ছেলে ‘মিরান’। মিতা চৌধুরীর মরদেহ লন্ডনে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরী। নিজস্ব অভিনয়শৈলীর জন্য বাংলাদেশের মানুষ মিতা চৌধুরীকে বহুকাল মনে রাখবেন।


আনন্দভুবন ডেস্ক