ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ

10 Jul 2023, 02:35 PM জন্মদিন শেয়ার:
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ

ভারতীয় উপমহাদেশের বাঙালি বহুভাষাবিদ ও দার্শনিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশপরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ [বর্তমান এইচএসসি’র সমমান] পাশ করেন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে সম্মানসহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ [১৯১২] ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়াও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি [১৯২৮] লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করার আগেই কিছুকাল তিনি যশোর জিলা স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

পড়াশোনা শেষ করে বহু বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্যের জটিল সমস্যার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তিনি পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন।

এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন ভাষার প্রতি অতি উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং একাধিক ভাষা শিক্ষা শুরু করেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। এর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তার উল্লেখযোগ্য পাণ্ডিত্য ছিল। 'বাংলা', 'উর্দু', 'ফারসি', 'আরবি', 'ইংরেজি', 'অসমীয়া', 'উড়িয়া', 'মৈথিলী', 'হিন্দি', 'পাঞ্জাবি', 'গুজরাতি', 'মারাঠি', 'কাশ্মীরি', 'নেপালি', 'সিংহলি', 'তিব্বতি', 'সিন্ধি', 'সংস্কৃত', 'পালি' ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য ভাষা।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সবসময়ই সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এম.এ পাশ করার পরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি এবং উর্দু অভিধান প্রকল্পেরও সম্পাদক ছিলেন। 

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ : 'বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত', 'রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম', 'নবী করিম মুহাম্মাদ', 'বাংলা সাহিত্যের কথা' [দুই খণ্ড], 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ', 'ব্যাকরণ পরিচয়',

'বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান', 'মহররম শরীফ'।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অব দ্য অর্ডারস অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি. লিট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে তাকে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরণ করা হয়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র জন্মদিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।