নজরকাড়া রেখা

23 Jul 2023, 01:26 PM বলিউড শেয়ার:
নজরকাড়া রেখা

অনেক বছর আগের কথা। চেন্নাইয়ের ভানুরেখা গণেশন নামের মিষ্টি মেয়েটি স্বপ্ন দেখতো আকাশে উড়ে বেড়াবার। এয়ার হোস্টেজ হয়ে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে এমনটাই ছিল তার ইচ্ছে। হ্যাঁ, তিনি পুরোবিশ^ ঘুরে বেড়িয়েছেন তবে এয়ার হোস্টেজ হয়ে নয়, বলিউড কুইন হয়ে। বলছিলাম বলিউডের বর্তমান বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রেখার কথা। তিনি নিজেকে নিমজ্জিত রেখেছেন এক রহস্যময় মায়াজালে। এই ৬৯ বছর বয়সেও তিনি টক্কর দিতে পারবেন বর্তমান নায়িকাদের। সম্প্রতি ভোগ ম্যাগাজিনে কাভার গার্ল হয়েছেন তিনি ; এর দরুন আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। রেখা থাকছেন এবারের বলিউড আয়োজনে...

৬৮ বছর বয়সে ‘ভোগ অ্যারাবিয়া’য় রাজকীয় বেশে কাভার গার্ল হয়ে নতুন করে আলোচনায় বলিউডের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেখা। তার এই সাজসজ্জা দেখে কারো বোঝার উপায় নেই যে তিনি ৬৮-এর ঘরে আছেন। একটি ছবিতে রেখার মাথায় জরির কারুকার্যময় টুপিসহ সোনালি জরি এবং ছোটো পাথরের কাজ করা পোশাকে দেখা যায়। উইংগড লাইনার, মেরুন লিপস্টিকের সঙ্গে খোঁপা, জড়োয়ার গয়নায় নজর কেড়েছেন তিনি। আরেকটি ছবিতে তাকে ইজিপশিয়ান রানির বেশে দেখা যায়। তার মাথায় ময়ূরের পেখমের মতো মুকুট, কানে পেল্লাই সাইজের একজোড়া দুল। পরনে মুকুটের সঙ্গে ম্যাচ করা সোনালি পোশাক, যেখানে নীল-সোনালি জরির কাজ করা কলার এবং হাতা দেখা যাচ্ছে। আরব দেশের রানির বেশেও ধরা দিয়েছেন রেখা। এ ছবিতে তার মাথায় টিকলি, ফুল স্লিভ ব্লাউজের সঙ্গে সোনালি রঙের শাড়ি। পায়ে পরেছেন স্টিলেটো। রেখার সাজসজ্জার পেছনের কারিগর হলেন মণীষ মালহোত্রা। ওই ম্যাগাজিন সংস্থার তরফে রেখার একাধিক ছবি আপলোড করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেই ছবি দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছেন নেটিজেনরা। এই ম্যাগাজিন রেখার জীবনের নানা বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেছে।

রেখার পুরো নাম ভানুরেখা গণেশন। রেখা তামিল চলচ্চিত্র অভিনেতা জেমিনি গণেশন ও তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যাল্লির ঘরে ১০ অক্টোবর, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান ভারতের চেন্ন্াই। রেখা ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তিনি কখনো চাননি অভিনেত্রী হতে। তিনি বলেন, আমার মা সবসময় চাইতেন আমি যেন চলচ্চিত্রে কাজ করি। কিন্তু মনে হয় কমপক্ষে প্রথম ছয়-সাত বছর আমি আভিনয় করতে একেবারেই পচ্ছন্দ করতাম না। শুটিংয়ে অনেক সময় আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো, আমি ডাবল শিফট করতাম, যা আমার একেবারেই পছন্দ ছিল না।’

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে রাঙ্গুলা রতœম নামে একটি তেলেগু ছবির মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্রে পা রাখা। কিন্তু নায়িকা হিসেবে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ‘শাওন ভাদো’ নামে একটি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউডে যাত্রা শুরু করেন। পরে মাত্র ১৫ বছর বয়সে একজন পূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। এর পর বহু জনপ্রিয় ছবি রয়েছে তার কেরিয়ার জীবনের ঝুলিতে। সত্তর ও আশির দশকে হিন্দি সিনেমায় একচেটিয়া রাজত্ব করেছেন রেখা। ‘উমরাও জান’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার তার ঝুলিতে যায়। ‘খুবসুরত’, ‘ঘর’, ‘জুদাই’, ‘খুন ভরি মাংগ’, ‘সিলসিলা’-র মতো অনেক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন রেখা। তিনি দারুণ একজন নৃত্যশিল্পীও বটে। ১৯৮১ খ্র্টিাব্দের ‘উমরাও জান’ সিনেমায় ‘ইন আঁখো কি মাস্তি’ গানের সাথে তার নাচ আজো অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। অভিনেতা অমিতাভের জন্য তার গোপন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে রয়েছে নানা রহস্য। রেখা ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির প্রখ্যাত শিল্পপতি মুকেশ আগারওয়ালকে বিয়ে করেন। একবছর পর যখন রেখা অমেরিকাতে তখন মুকেশ কয়েকবার চেষ্টার পর আত্মহত্যা করেন এবং চিরকুটে লিখে যান কারো কোনো দোষ নেই। বর্তমানে রেখা মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় তার নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। রেখা সবসময় তার ব্যক্তিত্ব, তার ফ্যাশন, তার চিরসবুুজ নিটোল চেহারা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন। তিনি আরো অনেকদিন বলিউডের নতুন প্রজন্মের অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন এই প্রত্যাশা সবার। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন