বাড়ি পাচ্ছেন হামিদা বানু

26 Sep 2023, 04:01 PM খবর শেয়ার:
বাড়ি পাচ্ছেন হামিদা বানু

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একসময় জেলে যেতে হয়েছিল হামিদা বানুকে। সেখান থেকে গানের দৌলতে মুক্তি মেলে। কিছুদিন আগেও হাসন রাজার বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন হামিদা। ‘দিলারাম’ গানের সুবাদে এখন সারাদেশ চেনে হামিদা বানুকে।

সুনামগঞ্জের এই শিল্পীর জীবনসংগ্রামের গল্প নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠ’র অবসর পাতায়। শিরোনাম ‘জেলখানা থেকে সংগীতের মঞ্চে’। সেই প্রতিবেদনটি নজরে আসে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের। এরপর শিল্পী হামিদা বানুর আবাসনের ব্যবস্থা করছে তারা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাঁকে একটি বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হামিদা বানুকে নিয়ে কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে আমরা খোঁজখবর নিতে শুরু করি। সম্প্রতি তাঁর খালি কণ্ঠের গানও শুনি। তিনি একটি বাড়ি চেয়েছিলেন। এখন একটি বসতবাড়ি তৈরি করে দেব আমরা। জেলা প্রশাসন তাঁকে হারমোনিয়ামও উপহার দিয়েছে। হামিদা বানু আড়ালের এক মেধাবী শিল্পী। তিনি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগামীতে আরো ভালো করবেন।’

সুনামগঞ্জের রঙ্গারচর ইউনিয়নের বনগাঁওয়ে জন্ম হামিদার। বাবা লাল মিয়া বয়াতিও শিল্পী ছিলেন। বাবার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন। একসময় বিভিন্ন ওরস মাহফিলে যেতেন গান গাইতে। এমনই এক অনুষ্ঠানে একদিন সুনামগঞ্জের তৎকালীন মেয়র ও হাসন রাজার প্রপৌত্র মমিনুল মউজদীনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি হামিদাকে আমন্ত্রণ জানান হাসন উৎসবে গাইতে।

এর কিছুদিন পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় গান গাওয়া! একসময় ভাগ্যবদলের আশায় সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ধরা পড়েন। ১৬ বছরের জেল হয় তাঁর। তবে প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল খাটার পর মুক্তি মেলে। জেলখানায় একবার এক দুর্গাপূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনটি গান পরিবেশনের সুযোগ পেয়েছিলেন হামিদা বানু। ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হামিদার গানে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁকে সাজা কমিয়ে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। 

পরে অবশ্য কাশ্মীর গিয়ে আট বছর ছিলেন হামিদা। দেশে ফিরলে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তাঁর ঠাঁই হয় হাসন রাজা জাদুঘরে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে এখন হাসন রাজার প্রপৌত্র ও হাসন রাজা মিউজিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামারীন দেওয়ানের আশ্রয়ে আছেন। হাসন রাজার দুই শতাধিক গান জানেন হামিদা।