যিনি রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন

27 Sep 2023, 03:43 PM সারেগারে শেয়ার:
যিনি রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন

‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ছবিতে প্লেব্যাকে ফিমেল সিঙ্গার হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ ফিল্মস অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া এই প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন লাবণ্য। কণ্ঠ দিয়েছেন বেশকিছু নাটক ও সিনেমার গানে। কিছুদিন আগে সংগীতের ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে। তার অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে অল্প সময়ের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে। ইয়াসমিন লাবণ্যের সংগীতজীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


‘যিনি রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন’ কথাটি যেন শতভাগ সত্য ইয়াসমিন লাবণ্যর বেলায়। গান গাইতে যেমন ভালোবাসেন তেমনি পছন্দ করেন সাইকেল চালাতেও। বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতীম দুই সংগীত প্রতিভার নাম ধারণ করা লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য- বিষয়টি বেশ উপভোগও করেন। লাবণ্য কিছুদিন আগে নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে ‘বেদনা পারাবার করে হাহাকার’ শিরোনামে একটি মিউডজিক ভিডিও নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ করেন। এছাড়া সম্প্রতি নজরুলের প্রয়াণদিবসে ‘নাইবা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার’ শিরোনামে আরেকটি মিউডজিক ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেন। এই গান দুটো একদমই নতুন। এছাড়া দুটো মৌলিক গানের কাজ করছেন। একটা মিনহাজ জুয়েলের সুর ও সংগীতে এবং মাহবুবুর রহমানের কথায় ‘কিছু কিছু কথা একা যায় ভিজে’ গানটি। গানটি একটি নাটকে অথবা ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। আরেকটি গান সালাহউদ্দিন সাগরের কথায়, অন্তু গোলন্দাজের সুর ও সংগীতে ‘আমার ভেতরে এক কোটি বছর করছে কষ্ট হাহাকার’ শিরোনামের গানটি। আর নিজের দুটো গানের কাজ শেষ হয়েছে। একটি শফিক তুহিনের কথা এবং সুরে ‘না জানি না, শুরু কোথায় শেষ’। এটিতে তার ভয়েজ রেকর্ড করা হয়েছে। মিউজিক ভিডিওর কাজ বাকি আছে। এটা নিয়ে এগুচ্ছেন। আর একটা গান তারেক আনন্দের লেখায় এবং ইউসুফ আহমেদের সুরে। এই গানটিরও কাজ শেষ। এটা তিনি একা অথবা ইউসুফ আহমেদের সঙ্গে ডুয়েট কণ্ঠ দেবেন। এই চারটি গান একদম রেডি আছে। এছাড়া বিটিভির ‘জিন্দাবাহার’ নামে একটি নাটকের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। নিয়মিত স্টেজ শো, করপোরেট শোগুলোতে পুরনো দিনের গান যারা বেশি শোনে সেগুলো নিয়মিত গাইছেন। এছাড়া টিভি চ্যানেলের স্পেশাল গানের লাইভ শো যেমন আলম খান এবং এন্ড্রু কিশোরের স্মরণে দেশটিভিতে কিছুদিন আগে লাইভ করেছেন। গত ঈদের লাইভ শোগুলো করেছেন। এছাড়া গ্লোবাল টিভি, আরটিভি, এনটিভি, বাংলাভিশনসহ আরো কয়েকটি চ্যানেলে নিয়মিত লাইভ করছেন। বৈশাখী টিভির গোল্ডেন সং-সহ বাংলাদেশ টেলিভিশনের বেশ কিছু প্রোগ্রাম করছেন।

গানের প্রতি কীভাবে আগ্রহী হলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার বড়ো ভাই গান করেন। আমার মা গান খুব পছন্দ করেন। মায়ের আগ্রহেই আমরা দু’জনে ছেলেবেলা থেকেই গান শিখি। বড়ো ভাই যেহেতু গান করেন তাই বড়ো ভাইয়ের কারণেই আমি সংগীতশিল্পী হতে আগ্রহী হয়ে উঠি।’

লাবণ্য’র সংগীতের শুরু হয়েছে তার বড়ো ভাইয়ের হাত ধরে। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর থেকেই ওর কাছ থেকে সা রে গা মা পা শেখেন এবং গানের তালিম নেন। পাশাপাশি সংগীতশিক্ষক পান্না আহমেদের কাছে বেশ ক’বছর শিখেছেন। এরপর বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে সংগীতের ওপর পাঁচ বছরের কোর্স করেন। পাশাপাশি সালাহউদ্দিন আহমেদ, রশিদ-উন-নবী, তৃষ্ণা ম্যাডাম, অসিত দে’সহ অনেকের কাছেই গানের তালিম নিচ্ছেন। সম্প্রতি গান নিয়ে ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ইউডা থেকে।

লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য’র মূলত নজরুলসংগীতশিল্পী। নজরুলের গান গাইতে ভালো লাগে তার। নজরুলের বাইরে আধুনিক মেলোডিয়াস, শাস্ত্রীয়সংগীত, ক্লাসিকাল গান করেন।

বিভিন্ন চ্যানেলের স্টেজ শোগুলোতে ফোক গানও গাইতে দেখা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আসলে একজন শিল্পীকে সবধরনের গানই গাইতে হয়। স্টেজ শোতে মাঝে মাঝে ফোক গানও গাইতে হয়। একদমই নিজের জায়গা থেকে এবং ভালোবাসা থেকে চেষ্টা করি এই গানগুলো গাইতে।’

ইয়াসমিন লাবণ্য এখন পর্যন্ত ৩০টির বেশি মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছেন। বেশির ভাগ অ্যালবামেই তিনি ডুয়েট গান করেছেন, আবার কিছু অ্যালবামে সলো গান করেছেন। এছাড়া ‘অগ্নি’, ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, ‘রাগি’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। সংগীতজীবনের বিশেষ স্মৃতির কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘বিশেষ স্মৃতি বলতে আমি বলবো প্লেব্যাকে কাজ করা। আমার মনে হয় প্রথম প্লেব্যাকে কাজ করার ইচ্ছা প্রত্যেক শিল্পীরই থাকে। একজন সংগীতশিল্পীর স্বপ্নের জায়গা হচ্ছে ? প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করা। প্রথম যেদিন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করি, সেদিনটি আমার কাছে বিশেষ স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

ইয়াসমিন লাবণ্য গানের বাইরে একজন নৃত্যশিল্পী। তাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে সবাই চেনে। মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রায় আট বছরের বেশি সময় ধরে। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমিতে ২০১৫ থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে চাকরি করছেন। তিনি নাচ পরিবেশনার পাশাপাশি সমন্বয়কারী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ? ‘সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই, ভালো ভালো কাজ করতে চাই। আমি খুবই কম এবং নির্বাচিত কিছু কাজ করি। একটাই ইচ্ছা সেই কাজগুলো ভালোভাবে শিখে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যেন গান করতে পারি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার একটা ইচ্ছা, ভালো কিছু গান যেন শ্রোতাদের উপহার দিয়ে যেতে পারি।’

অবসরে পরিবারকে সময় দিতে পছন্দ করেন লাবণ্য। সুযোগ পেলে ঘুরতে যান। বাসায় থাকলে মুভি, সিরিজ দেখেন, গান শোনেন এবং সাইকেল চালান।

প্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী। ওনার গান খুব পছন্দ করেন। তাছাড়া ছেলেবেলায় তিনি তার মায়ের সঙ্গে একটা বিষয় শেয়ার করতেন। সেটা হলো তার নামের সঙ্গে দু’জন স্বনামধন্য শিল্পীর নামের মিল আছে। তারা হলেন রুনা লায়লা আর সাবিনা ইয়াসমীন। তার পুরো নাম যেহেতু লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য। তাই এ বিষয়টি তিনি খুব উপভোগ করেন। এই দু’জন গুণী শিল্পীও তার পছন্দের। আর দেশের বাইরে শ্রেয়া ঘোষাল, শুভমিতা ও এডেলের গান শোনেন তিনি।