কবি শামসুর রাহমানের ৯৫তম জন্মদিন

23 Oct 2023, 01:42 PM জন্মদিন শেয়ার:
কবি শামসুর রাহমানের ৯৫তম জন্মদিন

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্মগ্ৰহণ করেন। কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার অন্তর্গত পাড়াতলী গ্রামে। তার ভাই-বোনের সংখ্যা ছিল ১৩ জন। তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে পুরান ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। এরপর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পাস কোর্সে বিএ পাস করেন তিনি। পরবর্তীসময়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ [প্রিলিমিনারি] পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। 

কাব্য রচনায় সৃষ্টিশীলতা ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা কবি শামসুর রাহমানকে দিয়েছে কবিতার বরপুত্রের উপাধি। ছন্দোময় ও শিল্পিত শব্দের প্রয়োগের মাধ্যমে কবিতার চরণে চরণে তিনি বলেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের কথা। তার কবিতায় পরাধীনতার শৃঙ্খল পেরিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রামের কথাও বলেছেন কবিতার ভাষায়। নাগরিক কবি শামসুর রাহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বদেশ ও শিকড়ের প্রতি ছিলেন দায়বদ্ধ। পাশাপাশি সমকালীনতা ধারণ করে সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সমাজের কথা বলেছেন তার কাব্যের ছন্দে ছন্দে। 

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতিটি অধ্যায় ধরা পড়েছে শামসুর রাহমানের কবিতায়। তিনি লিখেছেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। 

শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর ষাটের দশকে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির প্রায় ৬০টির বেশি কবিতার বই। 

এ ছাড়া উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ, নাটক ও কবিতাগ্রন্থ, অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলামসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। গুণী এই কবি সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেওয়া হয়। 

পারিবারিক জীবনে কবি শামসুর রাহমান জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তাদের নাম সুমায়রা আমিন, ফাইয়াজ রাহমান, ফাওজিয়া সাবেরিন, ওয়াহিদুর রাহমান মতিন ও শেবা রাহমান। 

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই আগস্ট শামসুর রাহমান ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কবির ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, নিজ মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আজকের এই দিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।