আবারও সোফিয়া লরেন

25 Oct 2023, 12:17 PM হলিউড শেয়ার:
আবারও সোফিয়া লরেন

একবার এক সাক্ষাৎকারে ইতালীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন বলেছিলেন, আমি আমার সকল সিনেমায় চেষ্টা করেছি একজন শক্ত নারীর চরিত্রে অভিনয় করতে। তিনি আসলেই একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারী। সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় আছেন তিনি। প্রায় নব্বইয়ের ঘর ছুঁই ছুঁই এই অভিনেত্রীর জন্মদিন ছিল ২০ সেপ্টেম্বরে। জনপ্রিয় এই বর্সীয়ান অভিনেত্রীকে নিয়ে এবারের হলিউড...

সারাবিশে^ কোটি কোটি ভক্ত তার অভিনয়ের। এক সময় তার সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। তার শুরু কিন্তু একদম শূন্য থেকে। সোফিয়া লরেনের জন্ম ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে। তার বাবা রিকার্ডো তাকে সন্তানের স্বীকৃতি দেয়নি। সোফিয়ার জন্ম হয় মা রোমিল্ডার গর্ভে হাসপাতালে। সোফিয়ার বাবা তখনও তার মা রোমিল্ডাকে বিয়ে করেননি। তার মা রোমিল্ডা হয়ত তাকে হাসপাতালে রেখেই পালাতেন, কিন্তু তার মনে ক্ষীণ আশা ছিল মেয়ের বাবা ফিরে আসবেন এবং তাকে বিয়ে করবেন। রিকার্ডো অবশ্য হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখেছিলেন এবং পিতৃত্ব স্বীকারের কাগজে সইও করেছিলেন। তারপর নিজের মায়ের নামে মেয়ের নাম সোফিয়া রেখে তাদের রেখেই ফিরে যান।

সোফিয়া মা রোমিল্ডা ছিলেন একজন পিয়ানো শিক্ষক। তাছাড়া অভিনয়ের প্রতিও তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। একদম শূন্য হাতেই যদিও তিনি তার দুই মেয়ে লরেন ও মারিয়াসহ [লরেনের বোন]-কে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুজোলির অস্ত্রকারখানা মিত্রবাহিনীর একটি অন্যতম লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। এই শহরেই সোফিয়া তার মা ও বোনকে নিয়ে থাকতেন। গণগ্রেপ্তারের সময় লরেন যখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছিলেন তখন শার্পনেলের আঘাতে তিনি আহত হন। আঘাতটি লাগে তার চিবুকে। পরবর্তীসময়ে তার পরিবার নেপলসে চলে যায়, আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বাড়ি একসময় আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়িয়েছেন তারা। কষ্টকর এক ছেলেবেলার পর ঘুরে দাঁড়ান তিনি। সোফিয়ার তখন ১৪ বছর বয়স। সেসময় ইতালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি। আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের অধিকারী সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের তালিকায়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই প্রতিযোগিতায়ই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির। তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। পরবর্তীসময়ে সেই পন্টিকেই বিয়ে করেন সোফিয়া। চলচ্চিত্রে অভিষেকের পরই সোফিয়া সাইক্লোন থেকে সোফিয়া লরেন হয়ে যান।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ‘লা ফ্যাভোরিটা’ এবং ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘এইডা’ নামের ছবিতে অভিনয়ের পরপরই সোফিয়ার সামনে হলিউডের দরজা উন্মুক্ত হয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় সোফিয়া অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম ক্যাপাটাজ’। পরবর্তীসময়ে ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘হাউজবোট’, ‘ইয়েস্টারডে’, ‘টুডে অ্যান্ড টুমরো’, ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’, ‘এল সিআইডি’, ‘দ্য ফল অব দ্য রোমান অ্যাম্পায়ার’, ‘ম্যান অব লা মাঞ্চা’, ‘দ্য কাসান্ড্রা ক্রসিং’, ‘আ স্পেশাল ডে’সহ অসংখ্য ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এ অভিনেত্রী। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিনি ১০০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন। প্রখ্যাত ইতালীয় চিত্রনির্মাতা ভেট্টোরিও ডি সিকা পরিচালিত ‘টু উইমেন’ ছবিতে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে অস্কার পেয়েছিলেন সোফিয়া লরেন। বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হিসেবে তিনিই প্রথম সেই অস্কার পেয়েছিলেন। সোফিয়ার মায়ের জীবন নিয়ে একটা ছবি তৈরি হয়। ‘রোমিল্ডা’ নামের সেই ছবিতে সোফিয়া মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। ‘ও ম্যান অব দ্য রিভার’ ছবির মাধ্যমেই সোফিয়া লরেন ইতালির সেরা অভিনেত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন। ‘আফ্রিকা আন্ডার দ্য সি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। রানী এলিজাবেথ ছবিটি দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে অস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননাও জানানো হয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই অভিনেত্রীর জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘সোফিয়া লরেন : হার ওন স্টোরি’। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বামী কার্লো পন্টিকে হারান এই অভিনেত্রী। তার দুই ছেলে কার্লো পন্টি জুনিয়র ও অ্যাডৌরা পন্টি। সোফিয়া লরেন সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘নাইন’ ছবিতে।

২০ সেপ্টেম্বর ছিল তার জন্মদিন। ভক্তদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন অভিনেত্রী। জন্মদিন পালনের চারদিনর মাথায় জেনেভায় নিজ বাড়ির বাথরুমে পা পিছলে গুরুতর আহত হন। জানা যায়, তার উরু ও পায়ের হাড় ভেঙেছে। অভিনেত্রীর এজন্ট আন্দ্রেয়া গাউস্টি জানিয়েছেন সফল অস্ত্রপচার হয়েছে সোফিয়ার পায়ে ও উরুতে। সুস্থ আছেন তিনি...

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন