শুভ জন্মদিন মাহবুব উল আলম চৌধুরী

07 Nov 2023, 03:35 PM জন্মদিন শেয়ার:
শুভ জন্মদিন মাহবুব উল আলম চৌধুরী

কবি, সাংবাদিক এবং ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে অমর একুশের প্রথম কবিতার স্রষ্টা, ভাষা সংগ্রামী, বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, ‘সীমান্ত’ সাময়িকীর সম্পাদক ও পঞ্চাশের দশকের চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রদূত।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী নানা বিষয়ের উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে বহু কবিতা, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন। সম্পাদনা করেছেন পূর্ব-পাকিস্তানে প্রকাশিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘সীমান্ত’ [১৯৪৭-১৯৫২]। সত্তর দশকে সম্পাদনা করেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক স্বাধীনতা’ [১৯৭২-১৯৮২]। দীর্ঘ কালব্যাপী তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে একই মেলবন্ধনে জড়িয়েছিলেন। 

মাহবুব উল আলম চৌধুরী ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্র কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৬-১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে তিনি চট্টগ্রামে বিরাট আন্দোলন গড়ে তোলেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামে দাঙ্গা-বিরোধী সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন এবং দুইশ’ পৃষ্ঠার  দাঙ্গাবিরোধী ‘সীমান্ত’ প্রকাশ করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের হরিখোলার মাঠে ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম সাংস্কৃতিক সম্মেলন। সেই সাংস্কৃতিক সম্মেলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান সংগঠক। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। একই বছর কুমিল্লায় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে চট্টগ্রামের প্রায় একশ’ জন শিল্পী, সাহিত্যিক তার নেতৃত্বে যোগদান করেন। সম্মেলনে অনুষ্ঠিত নজরুলসংগীতের আসর তিনি নিজে উদ্বোধন করেন। ৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তফ্রণ্ট কর্মী শিবিরের আহ্বায়ক ছিলেন। 

‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী তার নানা কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমী কর্তৃক ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের অনোমা সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম সঙ্গীত পরিষদ, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে পদাতিক নাট্য সংসদ কর্তৃক সংবর্ধনাসহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবিকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকগোষ্ঠী সংবর্ধনা প্রদান করে। এছাড়া ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি মঞ্চের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও পদক দেওয়া হয়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় পুরস্কার, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঋষিজ পদক ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরিকে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নামে নামকরণ করা হয়। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আজকের এই দিনে এই গুণী মানুষটিকে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।