তিন যুগে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা

19 Dec 2023, 01:40 PM মুভিমেলা শেয়ার:
তিন যুগে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে নয়মাস যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্যালুলয়েডের ফিতায় বহুবার ধরা দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা। যুদ্ধের রোমহর্ষক, মর্মান্তিক ও বিজয়গাথা নিয়ে নির্মিত হয়েছে বেশকিছু সিনেমা। একটি জাতির দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রাম নিশ্চয়ই একটি মহাকাব্য। এ মহাকাব্য রুপালি পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয় সেই ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই, যা আজও চলমান। বিভিন্ন সময় মেধাবী নির্মাতারা এগিয়ে এসেছেন জাতির সোনালি সময়টা সেলুলয়েডে জীবন্ত করার স্বপ্ন নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা। সেখান থেকে তুলে ধরা হচ্ছে নব্বই দশক থেকে এই পযন্ত নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

আগুনের পরশমণি

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এই ছবিটি নির্মাণ করেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। সরকারি অনুদানে তৈরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই ছবিটি আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবিতে আরো অভিনয় করেন বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, ডলি জহুর, শিলা আহমেদ প্রমুখ।

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড

দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে একই নামে ছবিটি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। একজন সন্তানহারা মায়ের গল্প নিয়েই ছবির গল্প। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী সুচরিতা। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সোহেল রানা, অরুণা বিশ্বাস, অন্তরা, ইমরান প্রমুখ।

এখনো অনেক রাত

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের এ ছবিটি পরিচালনা করেন খান আতাউর রহমান। এটিই তার নির্মিত সবশেষ সিনেমা। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটিতে অভিনয় করেন ফারুক, সুচরিতা, আলীরাজ, ববিতা, কণ্ঠশিল্পী আগুন প্রমুখ।

শ্যামল ছায়া

শ্যামল ছায়া মুক্তিযুদ্ধের ওপর পরিচালক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় ছবি। এটি মুক্তি পায় ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে। ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে। আরো অভিনয় করেন রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরু, শিমুল, চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজ, তানিয়া আহমেদ প্রমুখ।

গেরিলা

নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত গেরিলা ছবিটি মুক্তি পায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ছবিটিতে অভিনয় করেন শতাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া আহসান ও ফেরদৌস। এছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেন এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।

জয়যাত্রা

জয়যাত্রা ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের কাহিনি অবলম্বনে ছবির সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প আছে এখানে। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন আজিজুল হাকিম, বিপাশা হায়াত, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, চাঁদনী প্রমুখ।

আমার বন্ধু রাশেদ

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেন মোরশেদুল ইসলাম। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। ছবিতে অভিনয় করেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আরমান পারভেজ মুরাদ। এছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত, কাওসার আবেদীন।

মেঘের পরে মেঘ

দেশবরেণ্য কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর সময়ের পটভূমিকায় দেশপ্রেম, ভালোবাসা এবং ত্যাগের বীরত্ব বিস্তৃত হয়েছে ছবিটিতে। ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ, পূর্ণিমা, মাহফুজ আহমেদ, শহিদুল আলম সাচ্চুসহ আরো অনেকে।

১৯৭১ সেই সব দিন

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি বাংলাদেশি রোমান্টিক নাট্য চলচ্চিত্র। এটি ইনামুল হকের গল্প অবলম্বনে পরিচালনা করেছেন হৃদি হক। প্রধান চরিত্রে আছেন ফেরদৌস আহমেদ, সজল নূর, লিটু আনাম, সানজিদা প্রীতি, হৃদি হক। চলচ্চিত্রটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে একটি পরিবারের অভিজ্ঞতার চারপাশে আবর্তিত হয়, যা সেই যুগের একটি মর্মস্পর্শী চিত্রায়ণ প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধে জড়িত তিন ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, লিটু আনাম ও সজল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফেরদৌস।

জয়বাংলা

১৬ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় কাজী হায়াত পরিচালিত জয়বাংলা ছবিটি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বিজয় নিয়ে সিনেমার গল্প। ওই সময়ে রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে কাজী হায়াত নির্মাণ করেন ‘জয় বাংলা’ ছবিটি। ছবিটি বিজয়দিবসের দিনেই সারাদেশের ২০টি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বাপ্পী চৌধুরী ও জাহারা মিতু। ‘জয় বাংলা’ সিনেমার গল্প আবর্তিত হয় ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে।

৭১-এর মা জননী

‘৭১-এর মা জননী’ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনা করেন শাহ আলম কিরণ। সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক রচিত জননী সাহসিনী ’৭১ অবলম্বনে নির্মিত হয় ছবিটি। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই ছবিটি পরিবেশনায় ছিল ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরাঙ্গনাদের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। এতে বীরাঙ্গনা জননীর ভূমিকায় অভিনয় করেন নিপুণ আক্তার। তার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন কণ্ঠশিল্পী খান আসিফ আগুন। এছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেন চিত্রলেখা গুহ, ম ম মোর্শেদ, শাকিল আহমেদ, মিশু চৌধুরী, গুলশান আরা প্রমুখ।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ইউএস চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে ছবিটি কানাডায় অনুষ্ঠিত টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। চিত্রলেখা গুহ এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেন। হ