শীতকালে নবজাতকের যত্ন-আত্তি -ডা. নওরীন খান তিন্নী

20 Dec 2023, 03:30 PM শিশুভুবন শেয়ার:
শীতকালে নবজাতকের যত্ন-আত্তি  -ডা. নওরীন খান তিন্নী

শীতকালে শিশুদের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। এসময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে অনেক শিশুই ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ভুগে থাকে। এছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়োদের তুলনায় কম থাকার কারণে ত্বকের নানারকম প্রদাহ [ইনফেকশন]ও হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালীন শিশুর পরিচর্যা কীভাবে নেওয়া যেতে পারে...

সদ্যজাত শিশুর যত্ন

দীর্ঘ নয়মাস দশদিন মায়ের গর্ভে থেকে হঠাৎ এই পৃথিবীর পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে শিশুদের কিছুটা সময় লাগে। এসময় শিশুর জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। শিশু জন্মের পর কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা অথবা তিনদিন পরে গোসল করানো যেতে পারে। সদ্যজাত শিশুর গোসলের ক্ষেত্রে শুধু পানিই যথেষ্ট। কোনো প্রকার সাবান বা শ্যাম্পুর প্রয়োজন নেই। যেসব শিশুর স্কিন অনেক শুষ্ক তাদের গোসলের পানিতে মায়ের বুকের দুধ মিশিয়ে গোসল করানো যেতে পারে। কেননা, মায়ের বুকের দুধ শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে যা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। খেয়াল রাখতে হবে, গোসলের সময় যেন শিশুর কানের ভেতরে পানি না যায়। এজন্য গোসলের সময় শিশুর কানে অল্প পরিমাণে তুলা দিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া শিশুর গোসলের ক্ষেত্রে মাথায় পানি দিতে হবে, সবার শেষে এতে করে মাথা বেশিক্ষণ ভিজা থাকবে না ও ঠান্ডা লাগার আশঙ্কাও কম থাকে। গোসলের পর শিশুকে তাৎক্ষণিক পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। তারপর ক্রিম, লোশন অথবা অলিভ অয়েল লাগাতে হবে। কোনো ক্রিম, লোশন বা অলিভ অয়েল লাগাতেই বাধা নেই। তবে, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন শিশু-উপযোগী ও ক্ষতিকর ক্যামিকেলবিহীন হয়। অনেকে সরিষার তেল ব্যবহার করতে চান, তবে সরিষার তেল অনেক ঘন হওয়ায় তা শিশুর লোমকূপ বন্ধ করে ফেলতে পারে। আবার বাজারের সরিষার তেলে কৃত্রিম ঝাঁঝ যোগ করা হয় যা শিশুর ত্বকের উপযোগী নয়।

অনেকেই আজকাল শিশুদের ডায়াপার পরাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কেননা, ভেজা কাঁথা থেকে শিশুদের বারবার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ডায়াপার র‌্যাশ এড়ানোর জন্য কমপক্ষে প্রতি চার থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর ডায়াপার পরিবর্তন করে দিতে হবে, পায়খানা করলে সঙ্গে সঙ্গে অবশই পরিবর্তন করে দিতে হবে এবং প্রতিবার ডায়াপার পরিবর্তনের সময় পেট্রোলিয়াম জেলি শিশুর ডায়াপার এরিয়াতে ব্যবহার করতে হবে। তারপরেও যদি ডায়াপারে র‌্যাশ হয়ে যায় তবে ওই স্থানে ডি-র‌্যাশ/ সুডো ক্রিম ব্যবহার করতে হবে এবং র‌্যাশ চলে না যাওয়া পর্যন্ত ওই কয়দিন ডায়াপার পরানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সদ্যজাত শিশুদের অনেক সময়ই চামড়ায় ফুসকুরির মতো দেখা যায়, যাকে আমাদের দেশে ‘মাসি-পিসি’ বলে। এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, সাধারণত এগুলো এমনিতেই চলে যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিশুদের মুখগহ্বর পরিষ্করা করা। কুসুম গরম পানিতে অল্প লবণ দিয়ে পরিষ্কার সুতি কাপড় ভিজিয়ে প্রতি ৩-৪ দিন পর পর শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

১-৬ মাস বয়সী শিশুর যত্ন

এক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুর যত্ন পূর্বের ন্যায়-ই নেওয়া যেতে পারে। দেখা যায় যে, এরকম এবং পরবর্তী বয়সে শিশুরা প্রচুর ঘামে। রাতে ঘুমের সময় ঘেমে জামাকাপড় ও মাথা ভিজে থাকে যা শিশুর ঠান্ডা লাগার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষ করে দেখা যায় শীতকালে রাতেরবেলা বেশিরভাগ বাবা-মাই শিশুর ঠান্ডা লাগবে মনে করে বেশি কাপড় ও চাদর বা কম্বল দিয়ে শিশুকে মুড়িয়ে রাখেন। সেক্ষেত্রে শিশু ঘামে ভিজে থাকলেও অনেক সময় বোঝা যায় না। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে শিশুর শরীরে হালকা কাপড় রাখতে হবে, পাতলা শুষ্ক রুমাল সঙ্গে রাখতে হবে যেন শিশু ঘেমে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা বা পিঠ মুছিয়ে দেওয়া যায়। সর্বোপরি আমাদের জানা থাকা দরকার শিশুদের গরম বেশি লাগে, তাই শিশুদের শীতকালে পাতলা ফুলহাতা কাপড় পরানোই শ্রেয়। অনেকেই শিশুকে দীর্ঘসময় রোদে রাখে শীতকালে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর, কারণ শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শিশুর পাতলা ত্বক ভেদ করে ক্ষতি করতে পারে। তাই শিশুকে বিশ মিনিটের বেশি রোদে রাখা উচিত নয়। সর্বোপরি শিশুকে শীতকালে আবহাওয়ার তাপমাত্রা অনুযায়ী গরম কাপড় পরাতে হবে, টুপি বা হাত ও পা মোজা পরাতে হবে আর বাইরে গেলে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর নাক দিয়ে সরাসরি ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, এজন্য মাস্কও পরানো যেতে পারে।

লেখক : এমবিবিএস, এমএস [ফেজ-বি], চক্ষুবিদ্যা বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল