আগল ভাঙো -এনাম আহমেদ

20 Dec 2023, 03:36 PM আবৃত্তি শেয়ার:
আগল ভাঙো -এনাম আহমেদ

আগল খুলেই ঘর থেকে বাইরে বেরুতে হয়। বিষয়টি খুবই সহজ ও স্বাভাবিক। কিন্তু কাজটি যদি অস্বাভাবিক হয়, যদি সহজে ঘরের বাইরে আসা না যায়। যদি বাইরে থেকে তালা লাগানো থাকে। তাহলে বাইরে আসার বিকল্প তো ভাবতেই হয় মানুষকে। গোটা সমাজ আজ আটকে আছে হাজার হাজার বছর পেছনের বিশ্বাসের নিগঢ়ে, আর নানান বেড়াজালে। কেউ বিশ্বাস, কুসংস্কার ও মর্যাদার বেড়ি পেরিয়ে বন্ধ ঘর থেকে বাইরে পা ফেলতে পারছে না। মানুষ, নিজের রচিত কয়েদখানায় বন্দি। তার এই বন্দিত্ব ঘোচাতে পারছে না কোনো মতেই। মানুষ যুক্তি ও বিবেকের কাছে পরাজিত। সে জন্যই কবি ‘বন্ধ ঘরের আগল ভাঙা’র কথা বলেছেন। শিরোনামটি কালোত্তীর্ণ।

যুগে যুগে পৃথিবীর স্বার্থান্ধ মানুষ এর পেছনেই ঘুরে মরেছে। তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব গোটা মানব জাতিকে ভাগ করে ফেলেছে বিভিন্ন ধর্মের নামে, ভাগ করেছে বিভিন্ন বর্ণে, ভাগ করেছে বিভিন্ন গোত্রে। তারপর তারা লড়াইয়ে নেমেছে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের অহম নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে। এ লড়াই সৃষ্টির আদি থেকে শুরু হয়ে এখনো জারি আছে। বিশেষ করে পাকভারত উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের লড়াই তো সর্বজনবিদিত। তাই তো সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কবিকে বলতে হয়েছে :

‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।

মুসলিম তার নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ।।

বলছিলাম গত ১৮ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার সন্ধ্যা ৭.০০টায় জাতীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত প্রযোজনাভিত্তিক নিয়মিত আবৃত্তি অনুষ্ঠানে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র পরিবেশিত প্রযোজনাÑ ‘বন্ধ ঘরের আগল ভাঙো’র কথা। কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের এই প্রযোজনাটি বিভিন্ন কবির কবিতার পঙ্ক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট থেকে গ্রন্থনা করা হয়েছে। অনেকদিন পর একটি সুগ্রথিত পা-ুলিপি মঞ্চে উপস্থাপিত হলো। উপস্থাপনাটিকে শ্রব্যদৃশ্যকাব্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। কাজটি আবৃত্তির ক্ষেত্রে একটি নিরীক্ষাধর্মী কাজ।

অংশগ্রহণকারীরা সবাই স্বতঃস্ফুর্ত ও সাবলীল ছিলেন। এই প্রযোজনায় কথা’র সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নাজু, তিতাস, আশরাফ বাবু, তিথি, রানা, সামি, হুর, রাজু, এনায়েত, ফৌজিয়া, রাজীব, সুইটি, ঋদ্ধ, তীর্থ, তুহি ও মঞ্জু। কোরিওগ্রাফির ব্যবহার আবৃত্তিতেও আজকাল হচ্ছে এবং সেটা মঞ্চ নাটকের কাজকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। কোরিওগ্রাফার হিসেবে ছিলেন, তিতাস ও তিথি। এখানে আলো ও পোশাক পরিকল্পনার বিষয়টি মানানসই মনে হয়েছে। আবহসংগীত যথাযথ ছিল, তবে শব্দের ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। নির্দেশনায়, তিতাস রোজারিও। প্রযোজনাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বরাবরই আবৃত্তিতে নিরীক্ষাধর্মী কাজের অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।

কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের ‘বন্ধ ঘরের আগল ভাঙো’র মতো প্রযোজনা আরও মঞ্চায়িত হোক। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শিত হোক, তাহলেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার কাজ ত্বরান্বিত হবে। সেই সাথে সামাজিক ধর্মান্ধতার ব্যাধিও দূর হবে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে হবে। না হলে স্বার্থান্ধ মানুষ এর অপপ্রয়োগ করবে। এজন্যই বুঝি কবি বলেছেন :

রাজনীতিই তো আসল কথা গুরু

সংখ্যালঘু-ফগু কথার কথা সব

কে কতটা দখল করে খাবে

তার মহড়াই ধর্মীয় মতলব।