বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিটি ধাপের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি, অংশগ্রহণকারীও -আখতার হুসেন

20 Dec 2023, 03:39 PM অন্যান্য শেয়ার:
বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিটি ধাপের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি, অংশগ্রহণকারীও -আখতার হুসেন


বিশিষ্ট ছড়াকার, গীতিকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য আখতার হুসেন দীর্ঘদিন থেকে এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে তিনি বাংলাদেশের পথনাটক রচনা ও মঞ্চায়নের অন্যতম পথিকৃৎ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন কলম সৈনিক তিনি। লিখেছেন দেশের প্রথম  বিজয়দিবসের গান। যে গানটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রাচার করা হয়। সেই গানের ইতিহাস ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য পত্রস্থ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সেলিম...


১ নভেম্বরে ৭৯ বছরে পা দিলেন বিশিষ্ট ছড়াকার, গীতিকার, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক আখতার হুসেন। এ বয়সে কেমন লাগছে জানতে চাইতেই তিনি বলেন, এখনো বেঁচে আছি এটাই আনন্দের। এতকালের সাক্ষী আমি। ’৫২-তে ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলাম খুলনায়। তখন আমার বয়েস অল্প হলেও আমি ভাষা আন্দোলনে খুলনায় অংশগ্রহণ করেছি। ৬২-এর আন্দোলন করেছি গফরগাঁও থেকে, যেখান থেকে আমার সাহিত্যিক জীবনের সূচনা। ’৬৫ খ্রিষ্টাব্দের জিন্নার ইলেকশনে মিস জিন্নার পক্ষে এবং আইউব খানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর অপরাধেই আমার নামে মামলা হয়, আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমাকে পাক্কা ৬ বছর প্রতিমাসে হাজিরা দিতে হয়েছে সিলেটের মৌলভীবাজার আদালতে। ’৬৯, ’৭০-এর আন্দোলনে আমি ঢাকায় ছিলাম। ২৫ মার্চেও ঢাকায় ছিলাম। এসব যখন ভাবি, তখন মনে হয় জীবন ব্যর্থ নয় আমার। বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিটি ধাপের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি, প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীও।

আন্দভুবন : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের পঁচিশে মার্চ থেকে  যা দেখেছেন আপনি-

আখতার হুসেন : পঁচিশে মার্চে গোলমাল হবে আগে থেকেই জেনেছি। ওইদিন আমার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বন্ধুর সঙ্গে থাকার কথা ছিল, কিন্তু থাকিনি, সেখানে সেদিন হামলা হয়েছে। অনেক ছাত্র মারা গিয়েছিল। 

নারিন্দার একটি বাসায় ছিলাম আমি, সেখানে আমার এক ব্যান্ডের একটা রেডিও ছিল। রেডিও অন করা ছিল, কিন্তু কিছুই শুনছি না। ১০টার দিকে শুনতে শুরু করি, আমি তখন রাশিয়ান অ্যাম্বাসির তথ্য বিভাগে চাকরি করি। আমার সঙ্গে ছিল আসাদুজ্জামান নূর, এটিএম আব্দুল হাই, খালেদ চৌধুরী প্রমুখ। এটিএম শামসুউদ্দিন ছিলেন তখনকার সোভিয়েত বিভাগের বাঙালি প্রধান। তিনিই  আমাকে চাকরি দিয়েছিলেন। ’৭১-এর গণহত্যার পর আমি ঘরবন্দি হয়ে যাই। ২৭ মার্চে কারফিউ উঠে গেলে, আমি ঘর থেকে বের হলাম। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সদরঘাট ঘুরে দেখি শুধু লাশের স্তূপ। ২৯ মার্চ সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢাকায় থাকব না। আমি যেখানে চাকরি করি, সেখানে যাই। অফিসে গেলে, অফিস থেকে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে যাতায়াত করা নিরাপদ নয়, আপতত অফিসে আসার দরকার নেই। তবে চাকরি ঠিক আছে। 

আন্দভুবন :  ঢাকা ছাড়লেন কবে ? এরপরের ইতিহাস জানতে চাই ?

আখতার হুসেন : ২৯ মার্চ আমার রেডিওটা নিয়ে ঢাকা ছাড়ি। ঢাকা থেকে বের হয়ে আমি গ্রামের দিকে যাই, যাওয়ার পথে অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, খাইয়েছেন। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আমি সিলেটের কুলাউড়া পৌঁছলাম। সেখানে তখন আমাদের পুরো পরিবার থাকতেন। বাসার কাছে পৌঁছতেই সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। আব্বা রেলওয়েতে চাকরি করতেন, সেই সুবাদে সেখানে থাকতেন। কুলাউরায় তখনো মিলিটারি আসেনি। বাসায় গিয়ে প্রথমে আমি আব্বাকে বললাম, আব্বা আমি মুক্তিযুদ্ধে যাব। আব্বা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, সে তোমার ইচ্ছে। মার চোখে পানি। মা তখন বললেন, তোর বাবার চাকরি নেই, তুই টাকা দিস বলেই সংসার চলে। যুদ্ধ কতদিন চলবে ঠিক নেই, তুই যদি যুদ্ধে যাস, আমরা না খেয়ে মরে যাব ! তুই চিন্তা করে দেখ। তখন পরিবারের সবার মুখের দিকে তাকিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে অন্য কোনোভাবে দেশের সঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করলাম। 

১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আমি একটি গান লিখেছিলাম, সেই গানের পটভূমি পরিবর্তন করে লিখলাম, “স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ জাগছে বাঙালিরা / আর রুখবে তাদের কারা, আর রুখবে তাদের কারা”। গানটিকে স্বাধীনতা সংগ্রামমুখী করলাম। তখন বাড়ি থেকে অনুমতি নিলাম, আমি এই গানটা সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে দিয়ে আসব। 


আনন্দভুবন :  সেটা কবে নাগাদ, বিস্তারিত বলুন-

৪ঠা মে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। সীমান্ত অতিক্রম করে ধর্মনগর, যেটা আগরতলার একটা মহকুমা শহর, সেখানে গেলাম। গিয়ে সেখানকার থানায় উঠলাম। থানায় গিয়ে একটি রিপোর্ট লিখে দিলাম, ঢাকার অবস্থা নিয়ে, যেটা ‘আকাশবাণী’ বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচার শুরু হয়। ঢাকায় যে অবস্থা দেখেছি, তারই ওপর একটি রিপোর্ট করেছিলাম। আমি থানায় গিয়ে দারোগাকে বললাম, আমার একটি গান আছে, সেটি অজিত রায়ের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। গানটি দিয়ে আমাকে একটি মুসলমানের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ইন্ডিয়ার মুসলমান বাঙালিরা আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন, তা বুঝলাম, যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়ির মালিকের বয়ান থেকে। তবে কিছু মুসলমান পক্ষে ছিলেন। আমি তাকে অনেক বুঝালাম, তিনি বুঝতে চান না। এরপর আমি কুলাউড়া চলে আসি। এরমধ্যে আমাদের এখানে মিলিটারি চলে এসেছে। গানটি শোনার অপেক্ষায় আছি, গানটি বাজানো হচ্ছে না। দীর্ঘ অপেক্ষা!। নভেম্বরের মাঝামাঝি, আমাদের পুরো পরিবার অনেক কষ্টে ঢাকায় চলে আসে। 

১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী সারেন্ডার করল সাড়ে ৪টায়। ঠিক তার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমার সেই গানটা বেজে উঠল। আমার রেডিওটা চুরি হয়ে গিয়েছিল, আমি পাশের বাসার রেডিও থেকে গানটি শুনলাম। গানটি শুনে আমি অঝোরে কাঁদতে লাগলাম। মনে হলো স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার অংশগ্রহণ করা হয়ে গেল। 

তারপর এই গানটি বাজতে লাগল। বিজয়দিবস এলেই গানটি বিভিন্ন স্থানে বাজে। বিজয়দিবসের আর একটি গান, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ গানটি আমার গান বাজানোর তিন থেকে চার ঘণ্টা পর বাজানো হয়। এই গানটি লিখেছেন শহীদুল হক খান, সুর করেছেন সুজেয় শ্যাম এবং অজিত রায়ের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়। আমার গানটির সুর করেন অজিত রায়। ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান। উল্লেখযোগ্য একটি ঐতিহাসিক গান। আমি খুব সৌভাগ্যবান, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন মেহেরপুরে, মুজিবনগরে, সেখানে ওই গানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সারাক্ষণ বাজিয়েছিল। 

আনন্দভুবন : দীর্ঘদিন পর হলেও আপনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, কেমন লাগছে ?

আখতার হুসেন : ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মনোয়ার হোসেন [স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন শিল্পী], তিনি ফোন করে বললেন, আপনি একটু আমার বাসায় আসুন। আমি তার বাসায় গেলাম, আমাকে একটা ফরম দিলেন, আমি পূরণ করলাম। আমাকে গ্যাজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করা হলো। আমি এখন গ্যাজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘদিন পর হলেও এই রকম খেতাব পেয়ে অনেকটাই আবেগতাড়িত কণ্ঠে আখতার হুসেন বলেন, এটা অন্যরকম একটা প্রাপ্তি। এই আনন্দের কোনো ব্যাখা হয় না। 

আখতার হুসেনের উল্লেখযোগ্য গান- ‘আয়রে আমার দামাল ছেলে’, মুক্তিযোদ্ধা থেকে যারা ফিরে আসেননি তাদের জন্য মা অপেক্ষা করছে, তাদের নিয়ে এই গানটি লেখা। ‘বাংলাদেশের মাটিরে আমার’, খেলাঘরের সংগঠন সংগীতও রচনা করেন তিনি “আমরাতো সৈনিক শান্তির সৈনিক”। এছাড়া আরও অনেক গান। 

আভু : ‘জনকের মুখ’ নামে একটি গল্প সংকলন করেছেন, যেটির চারটি সংস্করণ করা হয়েছে, এটা সম্পর্কে জানতে চাই-

আখতার হুসেন : এ সংকলন সম্পাদনা করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখনো কবি, সাহিত্যিকরা, ছড়া লিখছেন, বই লিখছেন কেন ? কারণ, বঙ্গবন্ধু-র নিয়ে মাহাত্ম্যে’র শেষ নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আইন করে বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা জানতেন এবং পরবর্তী প্রজন্ম বই পড়ে, ইতিহাস পড়ে, যত জেনেছেন ততই মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে তাকে নিয়ে লেখার জন্য। পৃথিবীতে কত শত নেতা এসেছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা দেখিনি, দেখেননি বিদেশীরাও। তাই তো কিউবা প্রজাতন্ত্রের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, “আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।” 

বঙ্গবন্ধুর মুখম-ল ও বলিষ্ঠ কণ্ঠ আমি আর কারোর মধ্যে কখনো দেখিনি। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আমেরিকা বিরোধিতা করেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে, পুরো পৃথিবী দুই ভাগে তখন বিভক্ত ছিল, একটি সোভিয়েত ইউনিয়ন, আর একটি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন দেশসমূহ। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সরাসরি সর্মথন করেছে। তবে আমেরিকার জনগণ ও অনেক নেতা আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। সারাপৃথিবী কাঁপিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত গান, কবিতা, বই লেখা হয়েছে বিশ্বের অন্য কোনো নেতাকে নিয়ে এত বই লেখা হয়নি। অনেকে প্রশ্ন তোলেন বঙ্গবন্ধুর নামে এত প্রতিষ্ঠান কেন করা হয়, তাদের জন্য একটা  উদাহরণই যথেষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটনের নামে ৫০০-এর উপরে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের রাজধানী শহরের নাম ‘ওয়াশিংটন ডিসি’। আমাদের সমস্যা আমরা ইতিহাস পড়ি না, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়ি না, যদি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভালোভাবে সবাই জানতেন, তাহলে এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেন না। 

ভারতে স্বাধীনতার একবছরের মধ্যে তাদের জাতির জনক করমচাঁদ গান্ধীকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়, ইন্ধিরা গান্ধীকে যিনি মেরেছেন তাকে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই দেশে খুনীদের বাঁচানোর জন্য সংবিধানের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। কোনো সামরিক বাহিনী নামেনি। আমাদের এখানে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা ২৩ বছর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দ্বারা শোষিত হয়েছি। পরবর্তীসময়ে ১৯ বছর নিজেদের সামরিক বাহিনীর শাসন ভোগ করছি। কাজেই আমরা কীভাবে এত তাড়াতাড়ি নিখুঁত ডেমোক্রেসি আশা করতে পারি ? 

আনন্দভুবন : বর্তমান রাজনৈতিক প্রসঙ্গে জানতে কিছু বলুন-

আখতার হুসেন : ভারতে যে গণতন্ত্রের ধারা অবিচল চলছে, সেটার কারণ হচ্ছে, তারা গণতন্ত্রটাকে ব্যাহত করেনি। তারা কিন্তু ব্রিটিশ গণতন্ত্রের ধারাকে মেনে চলে। সেখানে কিন্তু যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের এখানে এটা ব্যাহত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে নির্বাচন হয়েছে, শেখ হাসিনা কিন্তু সেটাকে পুনরুদ্ধার করে একটা অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। এবং সেই মোতাবেক নির্বাচন হচ্ছে। এটা নিয়ে এত হৈচৈ, গাড়ি পোড়ানো কেন ? কেনরে ভাই, তোমরা নির্বাচনে আসো, নিজেদের শক্তি প্রমাণ করো। 

আনন্দভুবন : জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি কিছু আছে ?

আখতার হুসেন : আমি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। এরমধ্যে বাংলা একাডেমির পুরস্কার উল্লেখযোগ্য, এটা আমার জন্য অনেক বড়ো স্বীকৃতি। আমার সবচেয়ে বড়ো দুঃখ আমার স্ত্রী সেটা দেখে যেতে পারেননি। শেষ সময়ে এসে একটা কামনা আমার অনেক অপ্রকাশিত লেখা আছে, সেগুলো যেন, পাবলিশ করে যেতে পারি। 


একনজরে আখতার হুসেন 

শিশুসাহিত্যের অন্যতম পুরোধা পুরুষ আখতার হুসেনের জন্ম ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর। পেশাগত জীবনের শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে। চাকরি করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক পত্রপত্রিকায়। বর্তমানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থার পা-ুলিপি সম্পাদক। আখতার হুসেনের সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০টি। ছড়া, গল্প, ছোটোগল্প, নাটক মিলিয়ে ৮০ টির মতো বই লিখেছেন তিনি। 

ছোটোদের জন্য মৌলিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি সম্পাদনা করেছেন বেশ-কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকলন গ্রন্থ। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : দুই বাংলার কবিতায় বঙ্গবন্ধু, দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গল্প, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমের গান, বাংলা সাহিত্যের সেরা উপদেশমূলক কবিতা, বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্পভিত্তিক উপদেশমূলক কবিতা, বাংলা সাহিত্যের সেরা কিশোর কবিতা, বাংলাদেশের বাছাই কিশোর কবিতা [যৌথ], ছোটোদের প্রিয় কবিতা [যৌথ], ও হেনরি শ্রেষ্ঠ গল্প, মোপাসাঁ শ্রেষ্ঠ গল্প, ম্যাক্সিম গোর্কি শ্রেষ্ঠ গল্প, মার্ক টোয়েন শ্রেষ্ঠ গল্প, হাবীবুর রহমান রচনাবলি [প্রকাশিতব্য]। জীবনী : ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার, কিশোর শহীদ মতিউর রহমান, হাবীবুর রহমান, কাজি আফসারউদ্দিন আহমেদ। যৌথ সম্পাদক : সত্যেন সেন স্মারক গ্রন্থ, বাংলাদেশের ইতিহাসের অ্যালবাম ও আলতাফ আলী হাসু স্মারক গ্রন্থ। 

এছাড়া আখতার হুসেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে ৫ খন্ডে প্রকাশিত শিশু-বিশ্বকোষ-এর সর্বোচ্চসংখ্যক লেখক। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তার লেখা ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে আজ জাগছে বাঙালিরা / আজ রুখবে তাদের কারা’ গানটি বিপুল জনপ্রিয়তাধন্য। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ আখতার হুসেন পেয়েছেন ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার’, ‘ভাষা শহিদ আবদুল জব্বার স্মৃতিপদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ প্রদত্ত ‘মুক্তিযোদ্ধা কলম সৈনিক সম্মাননা স্মারক’, ‘মনিরউদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘এম নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক’সহ আরো অনেক সংবর্ধনা স্মারক।

ছবি : জাকির হোসেন