চোখ কেন লাল হয় -ডা. নওরীন খান তিন্নী

13 Feb 2024, 12:43 PM স্বাস্থ্যভুবন শেয়ার:
চোখ কেন লাল হয়  -ডা. নওরীন খান তিন্নী

‘চোখ যে মনের কথা বলে।’ চোখে চোখ পড়লে ভালোবাসা হয়। ভালোবাসার দিনে মনের মানুষের দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকাতে হলে চোখ ভালো রাখতে হবে। চোখে যদি দেখা দেয় কোনো সমস্যা, যেমন চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়া। তাহলে আপনার ভ্যালেন্টাইন ডে তো হলো মাটি। তাই চোখের যতœ নিতে হবে সবার আগে। আজ আমরা জেনে নেব, চোখ কেন লাল হয় ? লাল যদি হয়েই যায় তো তার প্রতিকার কী ? তবে, শুরুতেই জানিয়ে রাখছি, চোখ লাল হওয়া সরাসরি কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। তাই চোখ লাল হলে আমাদের দ্রুতই চক্ষুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।


উপসর্গ

* চোখ লাল হওয়া * চোখে ব্যথা * চুলকানি * পানি পড়া * চোখ ফুলে যাওয়া * এমনকি, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।


কারণ

চোখ লাল হওয়ার সঙ্গে চোখের বিভিন্ন রোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণভাবে আমরা যা পাই তা হলোÑ ‘কনজাংটিভাইটিস’। কনজাংটিভা হলো চোখের সাদা অংশ [ঝবষবৎধ] ও কালো অংশ [ঈড়ৎহবধ, রৎরং, ঢ়ঁঢ়রষ]-এর উপরে অবস্থিত এক প্রকার ঝিল্লি, যার প্রদাহ হলে আমরা তাকে ‘কনজাংটিভাইটিস’ বলে থাকি। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে ‘কনজাংটিভাইটিস’ হতে পারে। একে সাধারণভাবে অনেকেই ‘চোখ ওঠা’ রোগ বলে থাকে।

চোখ লাল হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ ‘সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ’। এক্ষেত্রে চোখের কিছু রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয় যার কারণে চোখের সাদা অংশে জমাট বাঁধা রক্তের মতো দেখা যায়। এমন হলে দেরি না করে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।


চোখ লাল হওয়ার অন্যান্য কারণসমূহ

গ্লুকোমা : এটি একটি বংশগত চোখের রোগ। এরোগে চোখের ভেতরের প্রেশার বা রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে চোখের ভেতরকার রক্তনালি ফেটে গিয়ে চোখ লাল হয়। অনেকসময় এ রোগে আক্রান্ত রোগী প্রাথমিকভাবে ধরতেই পারেন না যে তিনি গ্লুকোমা নামক রোগে আক্রান্ত। অনেকের ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র চোখ লাল নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর এ রোগ নির্ণয় হয়েছে।

চোখের টিউমার : অনেকের ক্ষেত্রে চোখে টিউমারের উপসর্গ হিসেবেও চোখ লাল দেখা দিতে পারে।

চোখের অ্যালার্জি বা ধুলাবালি পড়া : অনেকেরই দেখা যায় ধুলাবালি বা তীব্র ঠান্ডা বাতাস চোখে লাগলেই অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ লাল হয়।

চোখে আঘাত লাগা : চোখে আঘাত লাগা থেকেও চোখ লাল হতে পারে। বিশেষ করে যারা গ্রামদেশে ধানের ক্ষেতে কাজ করে অথবা লোহার মেশিনে কাজ করে তাদের ধানের তুষ বা লোহার টুকরা অসাবধানতাবশত চোখে গিয়ে এ সমস্যা হতে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কন্টাক্ট লেন্স ও প্রসাধানীর ব্যবহার : এটা খুবই কমন একটি কারণ চোখ লাল হওয়ার। কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ কন্টাক্ট লেন্স ও প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও চোখ লাল হয়।


প্রতিকার

* চোখ লাল হলে নিজে থেকে কোনো চোখের ড্রপ ব্যবহার করবেন না।

* লাল হলে সাথে সাথেই চোখে পানির ঝাপটা দেবেন না। বরং ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে চোখের উপর ধরে রাখতে হবে।

* একনাগাড়ে অনেকক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে ২০-২০-২০ রুল ফলো করতে হবে। অর্থাৎ ২০ মিনিট পর পর ২০ ফুট দূরত্বে, ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থেকে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে।

* যাদের বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি আছে তাদের সেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।


চিকিৎসা

সাধারণ কনজাংটিভাইটিস বা সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ হলে তা সাত থেকে দশদিনের মধ্যে আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায়। তবে চোখের কোনো বিষয়েই হেলাফেলা না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। চোখ লাল হওয়ার কারণ অনুযায়ী সেক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক আই ড্রপ, আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, এমনকি স্টেরয়েড আইড্রপও দেওয়া যেতে পারে।

সর্বোপরি চোখ লাল হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে শুধু উপরিল্লিখিত রোগগুলো নয়, বিভিন্ন স্বাভাবিক কারণেও চোখ লাল হতে পারে। যেমন দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা পানিতে গোসল করা। বিশেষত যেসব জলাশয়ে গোরু অথবা ছাগল গোসল করানো হয় বা কাপড় ধোয়া হয় ; চোখে সাবান গেলে, শীতকালে সকালে দীর্ঘক্ষণ চোখে ঠান্ডা বাতাস লাগলে ইত্যাদি।

এসব থেকে রক্ষা পেতে প্রতিকার হিসেবে বাইরে বের হলে চোখে রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে, পরিষ্কার পানি ছাড়া চোখ ধৌত করা যাবে না। তাছাড়া চোখের কোনো ছোঁয়াচে রোগ যেমন কনজাংটিভাইটিস হলে আইসোলেশনে থাকতে হবে। তবেই আমরা চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবো। হ

লেখক : এমবিবিএস, এম এস [ফেইজ-বি], চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ,

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা