বই নিয়ে

14 Feb 2024, 01:02 PM অন্যান্য শেয়ার:
বই নিয়ে

জ্ঞান অর্জন এবং সুস্থ চিন্তার প্রতীক হচ্ছে বই। বই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু এবং অবসর-একাকিত্বের সঙ্গী। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এবং ভাষা-আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গই পরবর্তীসময়ে দাবানল হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। তাই নব চেতনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষকাল মহান ভাষা-আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের সকল শুভচিন্তা এবং সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চিরন্তন প্রতীক। এই চেতনা থেকে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বইমেলা এখন শুধু বইপ্রেমী আর লেখকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বইমেলা এখন লক্ষ-কোটি মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বইমেলায় হাজার হাজার দর্শকদের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। বইমেলায় ইদানীং নবীন-প্রবীণদের পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা অবসরে বই পড়ে সময় কাটান এবং সময় পেলে বইমেলায় গিয়ে তাদের পছন্দের লেখকদের বই কেনেন। এছাড়া সংখ্যায় কম হলেও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই প্রতিবছর মেলায় বই প্রকাশ করেন। সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পীদের পছন্দের বই নিয়ে এবারের প্রতিবদন...

মামনুন হাসান ইমন

চলচ্চিত্র অভিনেতা ও মডেল

চলচ্চিত্র অভিনেতা ও মডেল মামনুন হাসান ইমনের প্রিয় বই হলো সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা কাহিনিগুলো। এগুলো ছেলেবেলা থেকেই নিয়মিত পড়তেন। হুমায়ূন আহমেদের সমস্ত বই তার পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে। প্রিয় বইয়ের তালিকায় আরো আছে জাফর ইকবালের বই। এছাড়া সময় পেলে রোমান্টিক গল্প পড়েন মাঝে মাঝে। থ্রিলারধর্মী বইগুলোও পড়তে ভালো লাগে তার। সময়ের স্বল্পতার কারণে বইমেলায় প্রতিবছর যাওয়া হয় না অভিনেতা ইমনের। তবে, সময় পেলেই চলে যান প্রাণের মেলায়। গত বছর বইমেলায় যেতে পারেননি। আগের বছর গিয়েছিলেন।

সুলতানা ইয়াছমিন লায়লা

সংগীতশিল্পী

আসলে একেকজনের নেশা একেক রকম। ভিন্ন ভিন্ন শখ নিয়ে মানুষ বেড়ে ওঠে। বই পড়ার প্রতি লায়লার ছেলেবেলা থেকেই শখ বা আগ্রহ কম ছিল। তার নেশা বা শখ ছিল গান শোনায়। তার মতে বই পড়লে জ্ঞান বাড়ে আর গান শুনলে মনের প্রশান্তি বজায় থাকে। তিনি জ্ঞান অর্জনের চেয়ে মনের প্রশান্তিটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। তবে, তিনি মনে করেন প্রতিটি মানুষের বই পড়া উচিত। কারণ, বইয়ের বিকল্প পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। বইমেলায় নিয়মিত ঘুরতে যান তিনি। বইমেলার পরিবেশ অন্যরকম। কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে তার কাছে। লায়লার প্রিয় বই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘চরিত্রহীন’ ও হুমায়ূন আহমেদ ‘আয়না ঘর’।

সন্দীপন

সংগীতশিল্পী

সন্দীপনের নতুন লেখকদের বই তেমন একটা পড়া হয় না। তবে, একসময় নিহাররঞ্জন গুপ্তের লেখা বই খুব পড়েছেন তিনি। সেবা প্রকাশনীর বইগুলো নিয়মিত পড়তেন। এছাড়া বিদেশি অ্যাডভেঞ্চার গল্পের অনুবাদ তার পছন্দের বইয়ের তালিকায় শীর্ষে। অরণ্য দেব, অমর চিত্রকথা কমিকসের বই খুব পড়তেন। ফেনটাস, স্পাইডারম্যান, ব্যাটসম্যান কমিকসের বই পড়তেন তিনি। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গল্প, কবিতা ও গানের দারুণ ভক্ত ছিলেন তিনি। তিনি নিয়মিত বইমেলায় যান। কারণ, তার সহধর্মিণী চামেলী বসু মূলধারার কবিতা নিয়মিত লেখেন। বইমেলায় তার কবিতার বই বেরিয়েছে। দেশের জাতীয় প্রত্রিকাগুলোতেও তার লেখা কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। সেই সুবাদে তার সহধর্মিণী খুব বই পড়–য়া মানুষ। সেই সুবাদে তার সঙ্গে নিয়মিত বইমেলায় যান সন্দীপন।

তানিয়া বৃষ্টি

টিভি অভিনয়শিল্পী

টিভি অভিনয়শিল্পী তানিয়া বৃষ্টির প্রিয় বই ঈড়ষষরহ ঐড়ড়াবৎ-এর ‘ওঃ বহফং রিঃয ঁং. তিনি সময় পেলেই নিয়মিত বইমেলায় চলে যান এবং নিয়মিত বই পড়েন। তার সঙ্গে ফোনে যখন কথা হয় তখনও তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ বইটি পড়ছিলেন। এবারের বইমেলায় তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি গিয়েছিলেন। কিন্তু অসংখ্য বইপ্রেমী মানুষের ভিড়ের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি তিনি। মেলার বাইরে থেকেই চলে আসতে হয়েছে তাকে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেলায় যাওয়াটা একটু কঠিন বলে মনে হয় তার কাছে।

শামীম আরা মুন্নি

সাংবাদিক, উপস্থাপক

বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা। বইমেলায় যাননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। শামীম আরা মুন্নিও বইমেলায় যান। তবে সময়ের অভাবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এখন আর যেতে পারেন না। করোনা শুরু হওয়ার আগে শ্রাবণ প্রকাশনীর মালিক একদিন তাকে ডেকেছিলেন। তার ডাকে সময় বের করে তিনি চলে গিয়েছিলেন বইমেলায়। করোনার পর আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে বইমেলায় প্রতিবছর একবার সবার যাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। হুমায়ূন আহমেদ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সব বই তার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। এছাড়া আমিনুল হকের বেশির ভাগ বই তার প্রিয়।

অনন্যা লাবনী পুতুল

আবৃত্তি শিল্পী

বইমেলায় প্রতিবছরই যান আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবনী পুতুল। তার প্রিয় বইয়ের তালিকায় রয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ প্রশ্ন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময়, শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন, হায়দার আনোয়ার খান জুনো’র একাত্তরের রণাঙ্গন : শিবপুর, হায়দার আকবর খান রনো’র শতাব্দী পেরিয়ে। এছাড়া কবি, পুতুল নাচের ইতিকথা, শেষের কবিতাও তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। নতুন কবিদের কবিতাও নিয়মিত পড়েন তিনি। তিনি লাস্ট বই পড়েছেন নূরুন্নবী শান্ত’র লেখা একটি বই এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল। 

সংকলন : শহিদুল ইসলাম এমেল