এক কে করি দুই

14 Feb 2024, 01:09 PM কাভার জুটি শেয়ার:
এক কে করি দুই

ভ্যালেন্টাইন্স ও ঈদ কেন্দ্র করে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই সময়ের তরুণদের ক্রেজ অভিনয়শিল্পী যাহের আলভী ও ইফফাত আরা তিথি। এই জুটি ইতোমধ্যে সাবলীল অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন নাটকপ্রেমীদের হৃদয়ে। তাদের বর্তমান ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে যাওয়া হয় ডাবল বিয়ে সেটে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

মাঘের পড়ন্তবেলা। সূর্য পশ্চিম দিকে প্রায় হেলে পড়েছে। সূর্যের আলোকরশ্মি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ হতে বিদায় নিতে শুরু করেছে। নেমে আসছে অন্ধকার। হঠাৎ চোখ আটকালো উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ক্ষণিকালয় বাড়িতে। দূর থেকে মিটিমিটি আলো জ্বলছে, আলো বিদায় নেয়নি বলে তখনও লাইটের আলোর পরিপূর্ণতা পায়নি। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নজর কাড়লো বিয়ে বাড়ির ডেকোরেশন দেখে। পরিপাটিভাবে পুরো বাড়িটি সাজানো হয়েছে। কারোরই ঝুঝতে কষ্ট হবে না, এটা যে বিয়ে বাড়ি। দূর থেকে বর হাই তুললেন, পাশে বসে আছেন নববধূ। বর অভিনেতা যাহের আলভী ও কণে অভিনেত্রী ইফফাত আরা তিথি। বেশ মানিয়েছে দু’জনকে। দু’জনকে একসঙ্গে এই বেশে যে কেউ দেখলেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন। এমনভাবেই তাদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সবই ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ করে কানে ভেসে এল একটি শব্দ, দুই মেয়েকে একসঙ্গে বিয়ে করতে হবে আলভীকে। যেকেউ বিষয়টি শুনলে অবাক হবেন। কিন্তু আমি অবাক হইনি। কারণ এটি একটি নাটকের চিত্রায়ণ হচ্ছিল। আদিবের নির্দেশনায় ডাবল বিয়ে নাটকে আলভীকে একসঙ্গে দুই বিয়ে করতে বলা হয়।

কয়েকটি টেকের পর শর্ট ওকে হলো। আলভী ও তিথি বিয়ের স্টেজ থেকে নামলেন, কাছে এসেই স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, দাদু কেমন আছেন ? ভালো বলতেই জোর করে নিয়ে গেলেন সান্ধ জলখাবারের জন্য। আলভী এমনই, সবসময় আতিথেয়তায় আন্তরিক। একসঙ্গে নাস্তা শেষ করে, একটু বিশ্রাম নিয়েই তৈরি হয়ে গেলেন ফটোসেশনের জন্য। তিথিও কম যান না, প্রচুর হাসেন, হাসাতেও পারেন। দুই ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি হাসি রেখে বললেন, চলেন আমিও রেডি। শুরু হলো ফটোসেশন। সঠিক ছবিগুলো না পাওয়া পর্যন্ত চলল ফটো ক্লিক। ফটোসেশনের পালা শেষ হওয়ার পর, শুরু হলো সাক্ষাৎকার পর্ব।

ভ্যালেন্টাইন্স ও ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন অভিনয়শিল্পী যাহের আলভী ও ইফফাত আরা তিথি। ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে আলভী অভিনয় করেছেন তিনটি নাটকে। এরমধ্যে কাবিন নাটকে আলভীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন অহনা, আর মেঘলার আকাশ নাটকে তিথি।

অন্যদিকে তিথিও অনেকগুলো কাজ করেছেন। তবে ভ্যালেন্টাইন্স ও ঈদের কাজ একসঙ্গে করছেন বলে জানা নেই কখন কোন নাটকটি প্রচার হবে। আজকে যে কাজটি করছি, নাটকের নাম ‘ডাবল বিয়ে’। এখানে এটাই টুইস্ট। দু’টি বিয়ে একসঙ্গে হবে, কী হবে না, এটা দেখার জন্যই দর্শক নাটকটি দেখবেন। যেহেতু নাটকের নাম ডাবল বিয়ে তার মানে এখানে একটা টুইস্ট আছে। এটা জানতে হলে নাটকটি দেখতে হবে।

বেশির ভাগ নাটকেই কো-আর্টিস্ট হিসেবে যাহের আলভীকে দেখা যায়, এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিথি বলেন, খ- নাটকের শুরুটাই কিন্তু আমার আলভীর সঙ্গে হয়। আমাদের রসায়নটাও বেশ ভালো। দর্শক গ্রহণ করেন। তাছাড়া যখন নাটকের কথা হয় তখন কাকতালীয়ভাবে আলভীর সঙ্গে কাজ করা হয়।

আলভী বলেন ব্যস্ততা এখন একটু বেশি, সামনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, তারপর ঈদ। সবকিছু মিলিয়েই একটু বেশি ব্যস্ততায় সময় কাটছে।

ব্যস্ত থাকলেও আগের চেয়ে কাজ কিছুটা কমিয়ে কাজের কোয়ালিটির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। আগের নাটকগুলোর সঙ্গে এখনকার নাটকগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন গল্পের ক্ষেত্রে ভিন্নতা এনেছি। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল, নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করব, সেই অনুযায়ী কাজ করা। এইভাবেই এগিয়ে নিচ্ছি নিজেকে, আজকে যে স্টেপটা দেব, কাল যেন একটু পরিবর্তন আসে, সে চিন্তা নিয়ে হাঁটছি। আলভীর দাবির সঙ্গে একটা প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে তার বর্তমান নাটকগুলো দেখে। যেখানে আগে একটি নাটকের ভিউ এক মিলিয়ন হতো, সেখানে এখন দুই মিলিয়নও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে দর্শকের রুচি যেমন পরিবর্তন আসছে, কাজেও তাই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন আলভী। আলভী বলেন দর্শকের রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করলে ভিউ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

একটি ভালো কাজের জন্য প্রয়োজন দুজনের ভালো রসায়ন, তাদের নাটকগুলো দেখলে তা পরিষ্কার যে দুজনের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া। এই প্রসঙ্গে তিথি বলেন একটি ভালো কাজের পেছনে রয়েছে সবার সমান অংশগ্রহণ। আমাদের মধ্যে যে রসায়নটা গড়ে উঠেছে, এটা সম্ভব হয়েছে আমরা দু’জনই কাজের দিক দিয়ে সিরিয়াস থাকি, দু’জন খুব ভালো বন্ধু। বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমরা যেকোনো দৃশ্য সহজভাবে করতে পারি। টেকে যাওয়ার আগে দু’জন আলোচনা করে নিই এই দৃশ্য কীভাবে চিন্তা করছি, তারপর ডিরেক্টর তো আছেনই, সবার সমন্বয়ে একটি ভালো কাজ উপহার দেয়া।

মাসের প্রতিদিনই প্রায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন, এত শক্তির উৎসাহ প্রসঙ্গে আলভী বলেন এটা দর্শকের ভালোবাসা। যখন কাজ করতে করতে ক্লান্তি চলে আসে, ভাবি একটু বিশ্রাম নিই, কিন্তু দর্শকের ভালোবাসার কাছে সব ক্লান্তি চলে যায়।

অনেক সময় নাটকে ইম্প্রোভাইস করতে হয়। এক্ষেত্রে আলভী ও তিথিরও একটি সুনাম রয়েছে। উপস্থিত বুদ্ধি ছাড়া ইম্প্রোভাইস সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে তিথি বলেন ইম্প্রোভাইসের ক্ষেত্রে আমি মোটেও পারদর্শী নই, কিন্তু আলভী এক্ষেত্রে খুবই এগিয়ে। ও যখন একটি দৃশ্যে শট দেয়, আমি সে দৃশ্যে না থাকলে পাশে থেকে ওর শটটা দেখি, যখন ইম্প্রোভাইস করে আমরা সকলে সেটা দেখে অবাক হয়ে যাই! আলভী সবসময় অভিনয়ের ব্যাপারে অনেক হেল্প করে। শুধু আমার দিক দিয়ে নয়, অন্য কো-আর্টিস্টের ক্ষেত্রেও আলভী এই কাজটা করে।

আলভী বলেন এটা স্রষ্টা প্রদত্ত থাকে। আবার স্রষ্টা প্রদত্ত থাকলেও যদি সেটা দেখানোর জায়গা না থাকে তাহলে কখনোই প্রতিফলিত হয় না। ¯্রষ্টা প্রদত্ত হলেও সেটার বহিঃপ্রকাশ করতে হবে। দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে এই অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে।

তিথি প্রসঙ্গে আলভী বলেন, তিথি খুব ডেডিকেটেড, খুবই পরিশ্রমী একজন শিল্পী। একজন মানুষের শুধু মেধা থাকলেই হয় না, সেটাকে ঘষামাজা দিয়ে তুলে আনতে হয়। এটা শুধু আমার কথা নয়, ইউনিটের সবাই জানে ও খুবই পরিশ্রমী একজন শিল্পী। এটা যদি ও ধরে রাখে অনেক দূরে যাবে। আর যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে পিছিয়ে পড়বে।

দীর্ঘ অভিনয়ের ক্যারিয়ারকে পুঁজি করে নির্মাণে নাম লিখিয়েছেন আলভী। তার নির্দেশিত প্রথম নাটক বিচ্ছেদ। প্রথম নাটক নির্মাণেই উৎরে গেছেন তিনি। অসাধারণ এক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। শুধু দেশের দর্শকই নন, দেশের বাইরের দর্শকও নাটকটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যারা নাটকটি দেখেছেন সবাই এর সিক্যুয়েল করার দাবি জানিয়েছেন। আলভী বলেন, এখনো বিচ্ছেদ-টু ভাবিনি। ইচ্ছে করলেই করা যাবে। বিচ্ছেদটা ভালো লেগেছে বলেই কিন্তু তারা টু-এর দাবি জানিয়েছেন।

নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, প্রফেশনালি নির্মাণের ইচ্ছে আমার নেই, শখের জায়গা থেকেই নির্মাণে আসা, আমি ডিরেকশনে সেই কাজগুলোই দেব, যেটা আমার গল্প। আমার গল্পগুলো আমার মতো করে দেখতে চাই। তারপর দর্শককে দেখাতে চাই, আমি গল্পটি এইভাবে দেখেছি, আপনারাও দেখেন। সুগারদাদি আমার পরবর্তী কাজ, এটার শুটিং শেষ করলাম, নাটকের গল্পটা খুবই মজার।

১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে পালন হয়ে আসছে ভালোবাসা দিবস। এই দিবসের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিথি বলেন, আগে থেকে পরিকল্পনা করে আমার কিছু হয় না। তবে সেদিন যদি শুটিং থাকে, শুটিং করব। বিগত দিনগুলোতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি, কখনো শুটিংও করেছি।

ভালোবাসা দিবসে অনেকেই প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে থাকেন, আপনিও নিশ্চয়ই এর বাইরে নন ? কিছুটা হাসি দিয়ে এইভাবেই তিথি বললেন, পেয়েছি, তাও আবার স্কুল জীবনে। নাম ছাড়া অনেক গিফট আসত আমার বাসায়, যে গিফটগুলো আসত, সেগুলো আবার আমার খুব প্রিয়। এছাড়াও আমার বাসার এখানে কেউ একজন রঙের স্প্রে দিয়ে লিখে গিয়েছিলেন, হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিঝুম। তিথির ডাকনাম নিঝুম। বাসার সবাই নিঝুম নামেই ডাকে। এটা কে করেছেন আজ পর্যন্ত জানা হয়নি তার। প্রিয় পাঠক যদি আপনি হয়ে থাকেন সেই মানুষটি, তাহলে এটা স্বীকার করতেই পারেন এখন। বলা তো যায় না...।

ভালোবাসার সংজ্ঞা জানতে চাইলে তিথি বলেন, এটা সবচেয়ে কঠিন একটা প্রশ্ন। আমার কাছে মনে হয় লাভ ইজ এ কম্বিনেশন, রেসপেক্ট, লটস অব লাভ, সাপোর্ট প্রভৃতি। ভালোবাসাটা বন্ধুর প্রতি হতে পারে। সবকিছু মিলিয়েই ভালোবাসা। তিথি তার কতটুকু পায়, তিথি বলেন, আমার আশেপাশে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে শতভাগ ভালোবাসা পাই।

আলভী বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি কোনো কাজ রাখিনি, বাসার মানুষকে সময় দেব। আমার জন্য ভালোবাসা দিবস প্রতিদিনই। ভালোবাসা একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে সেলিব্রেট করার জন্য একদিন ডেট ধরি, সেদিক থেকে ভালোবাসা দিবস স্পেশাল। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা শুধু মুখে না এনে মন থেকে প্রকাশ করা উচিত। কারণ ভালোবাসা হচ্ছে সেক্রিফাইস, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা হচ্ছে না পাওয়া, ভালোবাসা হচ্ছে ছেড়ে দেওয়া, ভালোবাসা হচ্ছে বেঁধে না রাখা।

দু’জনকে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র অগ্রিম শুভেচ্ছা।

আলভী-তিথি ধন্যবাদ আনন্দভুবনকে। বেশি বেশি বাংলা নাটক দেখবেন। যাহের আলভীর নাটক দেখবেন।