শুভ জন্মদিন নাশিদ কামাল

19 Mar 2024, 02:08 PM জন্মদিন শেয়ার:
শুভ জন্মদিন নাশিদ কামাল

কণ্ঠশিল্পী নাশিদ কামাল ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে  জন্মগ্ৰহণ করেন। ‌নাশিদ কামাল হলিক্রস গার্লস হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে মেয়েদের মেধাতালিকায় ৭ম স্থান অধিকার করেন। হলিক্রস কলেজ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় সমন্বিত মেধাতালিকায় ২য় স্থান লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ালেখা শুরু করেন এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কানাডার কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয় [অটায়া] থেকে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি লন্ডনের ক্যামডেন-এ ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ [LSHTM]-এ মেডিকেল ডেমোগ্রাফিতে ডক্টোরাল ডিগ্রির জন্য যান এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

নাশিদ কামাল বাংলা লোকগীতির বিখ্যাত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের বড়ো নাতনি। তিনি নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। দীর্ঘ চার দশক ধরে নজরুলসংগীত গেয়ে আসছেন তিনি। নজরুলসংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল একাডেমি থেকে নজরুল পুরস্কার এবং ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে নজরুল পদক পেয়েছেন।

এর বাইরেও তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। মোস্তফা কামাল ও হোসনে আরা কামালের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়ো নাশিদ কামাল। নাশিদ কামালের পিতা একজন বিচারক ছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মা ছিলেন কবি, অধ্যাপিকা ও জনহিতৈষী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। নাশিদ কামালের দুই বোন নীলা সাত্তার ও নাফিজা কে মনেম। তার চাচা মুস্তাফা জামান আব্বাসী একজন বাংলাদেশি সংগীতজ্ঞ এবং ফুপু ফেরদৌসী রহমান জনপ্রিয় গায়িকা। দুই বছর বয়সে নাশিদ কামাল পিতামাতার সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে [তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান] চলে আসেন। ছেলেবেলাতেই তিনি গান গাইতে শুরু করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান টেলিভিশনের [পিটিভি] পূর্বপাকিস্তান কেন্দ্রে [বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভি]-এর উদ্বোধনী দিনে শিশুশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ওস্তাদ পিসি গোমেজ, ওস্তাদ আখতার সাদমানি, ওস্তাদ কাদের জামিরি, পণ্ডিত যশরাজ প্রমুখ বিখ্যাত গুরুর কাছে সংগীতশিক্ষা গ্রহণ করেন। গান শেখা ও গাওয়ার পাশাপাশি তিনি তার্কিক ও উপস্থাপক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘তর্ক যুক্তি তর্ক’ অনুষ্ঠানে তিনি শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার লাভ করেন।

নাশিদ কামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত চিকিৎসক আনিস ওয়াইজকে বিয়ে করেন, যিনি মেজর জেনারেল পদে থাকা অবস্থায় অবসরে যান। আনিস ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের দুই মেয়ে আরমীন মুসা ও আশনা মুসা। আরমীন ‘ঘাসফড়িং’ ব্যান্ডের গীতিকার-গায়িকা আর আশনা যুক্তরাজ্য নিবাসী আইনজীবী।

নাশিদ কামালের বারটি প্রকাশিত বই রয়েছে, এরমধ্যে দশটি লেখক হিসেবে এবং দুটি প্রকাশক হিসেবে। বাংলা এবং ইংরেজি, উভয় ভাষায় তিনি বইগুলো লিখেন। তিনি কল্পকাহিনী [উপন্যাস এবং ছোটো গল্প], কবিতা, জীবনী, অনুচ্ছেদ এবং রচনাসমগ্র লিখেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, যেখানে নজরুলের সাহিত্যকর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লাইলির প্রত্যাবর্তন তার সব থেকে আলোচিত বই সিরিজ, যা নজরুলের বিখ্যাত গানগুলোর অনুবাদ। এছাড়া চক্রবাক তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য অনুবাদগ্রন্থ যেখানে নজরুলের বাইশটি প্রেমের কবিতা স্থান পেয়েছে। তার অন্যান্য অনুবাদের মধ্যে রয়েছে- কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী, বাংলাদেশের জাতীয় কবির জীবনী নিয়ে মূলত রফিকুল ইসলামের লিখিত বই, এবং My Life in Melody, আব্বাস উদ্দীন আহমদের আত্মজীবনী।