চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজকে নিয়ে আনন্দভুবনের ৪ বর্ষ ৭ সংখ্যা [১৬ আগস্ট ১৯৯৯]-সহ আরো কয়েকটি সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৬ আগস্ট ১৯৯৯ সংখ্যায় শিরোনাম ছিল ‘রিয়াজনামা’। এতে তাকে নিয়ে লেখা হয় :
জেলা শহর ফরিদপুরে রাত দশটার পর ঘরের বাতি একে একে নিভতে শুরু করে। শহরতলী কমলাপুরের একটি বাড়িতে জয়েনউদ্দিন আহমেদ আর তার পরিবারের সবার চোখে ২৬ অক্টোবর রাত একটায়ও ঘুম আসেনি। ঘড়ির কাঁটা যখন আরো আধঘণ্টা এগোলো, সুতীব্র চিৎকারে রাতের নীরবতা ভেঙে খান খান হয়ে গেল একমেয়ে, একছেলে আর টানা পাঁচটি কন্যা সন্তানের পর গৃহিণী আরজুমান্দ আরা-র কোলজুড়ে এলো আরেকটি ফুটফুটে সন্তান। যশোরের ফুলতলা থানার শিবলীপাশা গ্রামে নবজাতকের দাদা বাড়িকে গ্রামের সবাই জমিদারবাড়ি বলে জানেন, বংশে কোনো নবাব বা জমিদার ছিলেন কি না সে কথা পিতা জয়েনউদ্দিন আহমেদ নিজেও জানতেন না। বিধাতা হয়ত সবার অলক্ষ্যে একটু হেসেছিলেন। এখন সবাই খুব ভালো করে জানেন সেদিনের সেই নবজাতক দেশীয় চলচ্চিত্রে রোমান্টিক ছবির নতুন নবাব, নতুন ত্রাণকর্তা। না, তিনি কোনো হায়বৎজঙ্গ বাহাদুর মীর্জা মুলক নন, বাবা মায়ের রিয়াজ আহমেদ সোহেল আর সাধারণ মানুষের ভালোবাসার নয়া রাজপুত্র, শুধুই রিয়াজ।
২৭ অক্টোবর জন্মসূত্রে সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে রিয়াজ হয়ে উঠলেন জেদী, একগুয়ে আর প্রতিবাদী। তারার মেলা স্কুলে যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছেন, তখনই এক সিনিয়রের সাথে তর্ক করে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। হেড মাস্টার অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদের সামনে বিস্তর বকাঝকা দিলেও রিয়াজ শুধু বলেছেন আত্মরক্ষা করেছেন মাত্র। সে বয়সেও বেশ আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন রিয়াজ, পড়াশোনার বাইরে শুধু কমলাপুরের পুকুরঘাটে মাছ ধরতে যাওয়াটাই ছিলো প্রধান শখ। আর সুযোগ পেলেই একা একা ঘুরে বেড়াতে মন চাইতো তার। একদিন তার গোপন সংগ্রহ সেভেন গিয়ারের ছুরি দেখে বাবা মায়ের মাথায় হাত, ছেলের মতিগতি সুবিধের নয় বলে মুহূর্তেই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। রাগের মাথায় রিয়াজ গিয়ে উঠলেন স্কুলের টিচার হাসান স্যারের বাড়িতে। মেট্রিক পরীক্ষার আগের ছয়মাস তার বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিলেন, ফার্স্ট উিভিশনের তকমা গায়ে লাগিয়ে সগর্বে ফিরে এলেন বাড়িতে...
লেখা : সৈকত সালাহউদ্দিন।
চলতি সময়ে
রিয়াজ অভিনীত সর্বশেষ ছবি দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’। ছবিটি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায়। এর আগে রিয়াজের ছবি মুক্তি পায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। মেহের আফরোজ সাউন্ড পরিচালিত ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবির পর ৬ বছর তাকে পর্দায় দেখা যায়নি। আরো আগে থেকেই রিয়াজ অভিনয় কমিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন কর্পোরেট জগতে। এখনো রিয়াজের ব্যস্ততা অভিনয়কে ঘিরে নয়। ব্যস্ততার অনেকটা জুড়ে আছে কর্পোরেট লাইফ। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনের গুরু দায়িত্বে আছেন তিনি। এর বাইরে চলচ্চিত্র সংগঠন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও তাকে বেশ সক্রিয় দেখা যায়। তারকা হিসেবে রাজনীতিতেও সময় দেন রিয়াজ। সরকারি দলের নির্বাচনী প্রচারণায় থাকেন, থাকেন অন্যান্য কর্মকা-ের সঙ্গে। এজন্য অবশ্য মাঝে-মধ্যে তাকে বিতর্কের ফাঁদে পড়তে হয়। বিতর্কের তোয়াক্কা না করে রিয়াজ এগিয়ে চলেছেন তার মতো করে। থেমে থাকার পাত্র নন তিনি। ঢালিউডে যখন কুরুচিপূর্ণ ছবি হচ্ছিল তখনো রিয়াজ সুস্থ ধারার ছবি করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। নিজের মতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল ছবির সঙ্গে, তার অস্ত্র ছিল পর্দায় অভিনয়। রোমান্টিক ছবিতে তার জনপ্রিয়তা ছিল প্রচ-। গত শতকের নয়ের দশকের শেষের দিকে তার জনপ্রিয়তার শুরু, শূন্য দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ছিল। ‘হৃদয়ের আয়না’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘কাজের মেয়ে’, ‘এক বুক ভালোবাসা’সহ অনেক ছবিতে তার অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। শাবনূর ও পূর্ণিমার সঙ্গে তার জুটি জনপ্রিয় হয়েছে একসময়। হুমায়ূন আহমেদের ছবির নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন রিয়াজ। তার ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া রিয়াজের সেই দোর্দ-প্রতাপ অভিনয়জীবন আর না থাকলেও দর্শকদের হৃদয়ে আজও জায়গা দখল করে আছেন এই সুদর্শন অভিনেতা। হ
লেখা : মাহফুজুর রহমান