তারা ব্ল্যাকসোয়ান

28 Jul 2024, 01:04 PM দূরদেশ শেয়ার:
তারা ব্ল্যাকসোয়ান

কোরিয়ান পপ বা কে পপ যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই পপসংগীতের উন্মাদনা এখন পুরো বিশ্বে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কে পপ দারুণ জনপ্রিয়। কোরিয়াতে অনেক কে-পপ-এর দল রয়েছে। মূলত কোরীয় অধিবাসীরাই এইসব দলের সদস্য হন। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে একটি দল আছে যারা কে-পপ-এ দারুণ জনপ্রিয় কিন্তু দলের সদস্য কেউই মূলত কোরিয়ার অধিবাসী নন। দলটির নাম ব্ল্যাকসোয়ান। ব্যতিক্রমী এই কে-পপ দলটি নিয়ে এবারের দূরদেশ আয়োজন...



কোরীয় ব্যান্ডগুলোতে বিদেশি সদস্যের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। সদস্যদের অনেকেই এশিয়ার কোনো-না-কোনো দেশের সদস্য হয়ে থাকে। কোরিয়ার মেয়েদের জনপ্রিয় দল ব্ল্যাক পিংককে কে না চেনে। এই ব্যান্ডের একজন সদস্য কিন্তু থাই। তাছাড়া ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এক্সপি এডিশন নামে ছেলেদের একটি ব্যান্ডও কোরিয়াতে আত্মপ্রকাশ করেছিল যার সবাই ছিলেন আমেরিকান। তবে, বর্তমানে দলটিকে আর দেখা যায় না।

কিন্তু দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ব্যতিক্রমী ব্ল্যাকসোয়ান। ভারতীয় সদস্য স্রিয়া ছাড়া এ ব্যান্ডে আর কোনো এশীয় সদস্য নেই। বাকিদের মধ্যে ফাতৌয়ের বেড়ে ওঠা সেনেগাল-বেলজিয়ামে, গ্যাবি হলেন ব্রাজিলিয়ান জার্মান এবং এনভি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন। এই দলটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে কোরীয় ভক্তদের। অনেকের ভাষ্যমতে, কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট বোনদন কোম্পানির জন্যই তারা গায়। অনেকে বলেন তারা শুধু একটি গানের দল যারা কোরিয়ার ভাষাতে গান গায়। আর কিছু নয়। তবে ব্যান্ডের সদস্যরা এসব আলোচনা সমালোচনার ধার একদমই ধারেন না। তারা নিজেদের ‘কে-পপ’ দল হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ব্ল্যাকসোয়ানের আগে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে রানিয়া নামে আরেকটি ব্যান্ডের সূচনা হয়েছিলÑ যেখানে ছয়জন কোরিয়ান এবং একজন থাই সদস্য ছিলেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এর সদস্যদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মিউজিক কোম্পানি, ডিআর মিউজিক রানিয়াকে নতুন করে সাজানোর চিন্তা করেন। সেই রানিয়াই পরবর্তীসময়ে ব্ল্যাকসোয়ানে রূপান্তরিত হয়। ব্যান্ডটির অরিজিনাল লাইনআপ থেকে কেবল ফাতৌয় আছে এখন।

আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ওড়িশা তরুণী শ্রিয়া লেঙ্কা। তিনি প্রথম কোনো ভারতীয় তারকা যিনি কে-পপ গোষ্ঠীর অংশ হলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের মুখ হয়ে উঠলেন। অন্যান্য কিশোরীর মতো শ্রিয়াও ছোটো থেকে অনলাইনে দক্ষিণ কোরিয়ার গান শুনতেন এবং ভিডিও দেখতেন। আগ্রহ বাড়তে বাড়তে একদিন নিজেরও গাওয়া শুরু। ওড়িশি শাস্ত্রীয় নৃত্য, ফ্রিস্টাইল, হিপ-হপ এবং সমসাময়িক বহু রকম নাচ শিখে ফেলেছিলেন শ্রিয়া। ব্রাজিলিয়ান তরুণী গ্যাব্রিয়েলা ডালসিনের সঙ্গে যখন কে-পপ-এ ডাক পেলেন শ্রিয়াও, বিশ্বাস হচ্ছিল না তার।

আসলে যে কেউ চাইলেই কে পপ-এর সদস্য হতে পারে। তবে, তার জন্য থাকা চাই অদম্য আগ্রহ, প্রতিভা ও অক্লান্ত কষ্ট করার মানসিকতা। বিদেশি নাগরিকেরাও যেন কে-পপের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে পারে, সেজন্য দেশটির সরকার একটি দুই বছর মেয়াদি ‘কে-কালচার ট্রেনিং ভিসা’ চালুর পরিকল্পনা করছে। অনেকের এটি নিয়ে নানাবিধ মতভেদ রযেছে। ব্ল্যাকসোয়ানের সদস্য নিয়ে ডিআর মিউজিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিলিপ ওয়াইজে ইউন বলেন, ‘অনেকের কাছেই এটা অন্যরকম মনে হতে পারে এবং কোরিয়ান সদস্য না থাকায় অনেকে গ্রুপটিকে অপছন্দও করতে পারেন। তবে, আমরা কে-পপ মার্কেটের প্রসার বাড়াতে এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি।’ ব্ল্যাকাসোয়ানের সদস্যরা মনে করেন, তারা কে-পপের ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। গ্যাবির ভাষায়, ‘কে-পপ বিশ্বব্যাপী আরো বিস্তৃত হবে, যাতে করে অরো অনেক বৈশ্বিক দল প্রশিক্ষিত হয় এবং বিশ্ববাজারে তাদের সংগীতের চর্চা শুরু করতে পারে। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন