ফরহাদ হোসেন থেকে নোলক বাবু

04 Sep 2024, 01:20 PM সারেগারে শেয়ার:
ফরহাদ হোসেন থেকে নোলক বাবু

‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ২০০৫’-এর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে খ্যাতির শীর্ষে চলে আসেন নোলক বাবু। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। টিভি লাইভ প্রোগ্রাম, ওপেন এয়ার কনসার্ট, সিনেমার গান, নিজের মৌলিক গান নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। এবারের সারেগারে আয়োজনে নোলক বাবুকে নিয়ে থাকছে বিস্তারিত। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


রেকর্ডিং এবং মিউজিক ভিডিও-র কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নোলক বাবু। সম্প্রতি ‘আষাঢ় শ্রাবণ’ ও ‘মধ্যবিত্ত’ নামের দু’টি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। খুব শিগ্গিরই ছবি দু’টি মুক্তি পাবে। এছাড়া ইউটিউব চ্যানেলের জন্য মোট ১২টি গানের কাজ শেষ করেছেন। এর মধ্যে ১০টি কমপ্লিট হয়েছে। এগুলো মিউজিক ভিডিও আকারে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে। প্রতিমাসেই গান রেকর্ডিং হচ্ছে। টিভি লাইভ প্রোগ্রাম, ওপেন এয়ার কনসার্ট, সিনেমার গান, নিজের মৌলিক গান নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি।

ক্লোজআপ ওয়ানে আসার আগে কোনো সংগীত গুরুর কাছে গানের তালিম নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে নোলক বলেন, ‘আমি আসলে ওভাবে কারো কাছে গানের তালিম নিই নাই। এলাকায় আমার একজন শুভাকাক্সক্ষী বড়ো ভাই আছেন, তার নাম জাকারুল ইসলাম খান টিপু উনি আমাকে জামালপুরের লোকাল প্রোগ্রামগুলোতে নিয়ে যেতেন। তাছাড়া শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন প্রোগ্রাম, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন গান গাওয়ার জন্য। তিনি ছেলেবেলা থেকেই গানের ব্যাপারে আমাকে উৎসাহ দিতেন এবং সবসময় বলতেন তুমি অনেক ভালো গান করো। একদিন তুমি বড়ো শিল্পী হতে পারবে। এভাবেই আমি গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি।’

জামালপুরের লোকাল প্রোগ্রামগুলোতে গান গাওয়া থেকে ক্লোজআপ ওয়ানে যুক্ত হওয়ার বড়ো একটা গল্প আছে নোলক বাবুর। যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হলে প্রথমেই তাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। কিন্তু নোলক বাবু রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। তার একজন বন্ধুর নাম ছিল বাবু। সেই বন্ধুটি নোলক বাবু নামে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। বাবু তাকে একদিন বলে, ‘আমি ক্লোজআপ ওয়ানে অংশ নেব না। তুই আমার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে অংশগ্রহণ কর।’ তারপর ওর রেজিস্ট্রেশন দিয়েই নোলক বাবু আবেদন করেন। নোলক বাবুর আসল নাম ফরহাদ হোসেন। ক্লোজআপ ওয়ানে এসেই নোলক বাবু হয়ে যান।

নোলক বাবুর এ পর্যন্ত চৌদ্দ থেকে পনেরটি অ্যালবাম বেরিয়েছে। প্লেব্যাক করেছেন প্রায় বিশটির মতো ছবিতে।

ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন সেটা কী ধরে রাখতে পেরেছেন, নাকি ব্যর্থ হয়েছেন ? এই প্রশ্নে নোলক বলেন, ‘চেষ্টা করেছি ধরে রাখার জন্য। আসলে ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঝখানে আমি প্রায় একবছর দেশের বাইরে ছিলাম। তো একবছর দেশের বাইরে থাকার কারণে মিডিয়ায় আমার একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছিল। দেশে আসার পর আমি এখন নিয়মিত কাজ করছি। দেশে এসেছি নয় বছর হলো। এই নয় বছর যাবৎ আমি একটানা কাজ করে যাচ্ছি। আমি নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গানের অনুষ্ঠানগুলো করছি পাশাপাশি অডিও রেকর্ডিং করছি। এ পর্যন্ত আমি সাড়ে তিনশ’র উপরে মৌলিক গান করেছি। সবকিছু মিলিয়ে অবশ্যই ধরে রেখেছি বিধায় এখন পর্যন্ত টিকে আছি এবং দর্শকশ্রোতাদের ভালোবাসায় টিকে আছি। আর টুকটাক ভুল তো মানুষের থাকেই। সেই ভুলগুলোর কারণেই শিখেছি।’

নোলক বাবু ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেশের বাইরে ইংল্যান্ডে ছিলেন প্রায় একবছর। ওখানে একটি কনসার্টে অংশগ্রহণ করতে যান। কনসার্ট শেষ করে দেশে আসেন। তখন দেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল না। দেশে তখন বিএনপি, হেফাজত ইসলামের আন্দোলন চলছিল। যার কারণে পাঁচ-ছয় মাস সে-রকমভাবে স্টেজ প্রোগ্রাম হয়নি। তার ভিসার মেয়াদ ছিল তাই আবার লন্ডনে চলে যান। ওখানে গিয়ে দুটো অ্যালবামের কাজ করেন। দুটো অ্যালবামের সুর নোলক নিজে করেছেন। একটি অ্যালবাম বের হয়েছে জি সিরিজের ব্যানারে অন্যটি বের হয়েছে লেজার ভিশনের ব্যানারে। আর ওখানে একবছরে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি স্টেজ প্রোগ্রাম করেছেন নোলক বাবু। অ্যালবাম দুটো করতেই তার তিন-চার মাস সময় লেগে যায়। একবছর কেমন করে চলে গেল তিনি বুঝতেই পারেনি।

এই যে আপনি একবছর দেশের বাইরে ছিলেন, তাতে কি আপনার ক্যারিয়ারের কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে আপনি মনে করেন ? ‘হ্যাঁ, অবশ্যই ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয়েছে। আসলে আমি তখন বুঝতে পারিনি। ক্ষতি হয়েছে এ কারণে, আমি তো দেশের শিল্পী। বিদেশের শিল্পী না। বিদেশে হয়ত আমি বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছি সেটা তো দেশের মানুষ দেখেনি। যার কারণে অনেকেই মনে করেছেন আমি হারিয়ে গিয়েছি। গান-বাজনা ছেড়ে দিয়েছি। এরকম একটা ধারণা তখন অনেক শ্রোতার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপর আমি দেশে এসে সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছি আমার কাজের মাধ্যমে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে। তারপরও একটা প্রভাব কিন্তু থেকেই যায়। একবছর যদি আমাকে কেউ টেলিভিশনে না দেখে, পত্র-পত্রিকায় না দেখে তাহলে সঙ্গত কারণেই সবাই ভেবে নেবে নোলক বাবু বুঝি আর গান করে না। এই জিনিসটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। এটা আমি তখন বুঝতে পরিনি। বুঝতে পারলে এত লম্বা সময় আমি বিদেশে থাকতাম না। দেশে এসে সেই ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি ইনশাল্লাহ।’

ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যখন নোলক বাবুর নাম ঘোষণা করা হয় তখন তিনি স্টেজে কেঁদে ফেলেছিলেন। তার সঙ্গে সেদিন সারাদেশের মানুষ কেঁদেছিল। ওই মুহূর্তটা তার কাছে একটি বিশেষ স্মৃতি হয়ে আছে বলে মনে করেন তিনি।

নোলক বাবু যেহেতু গানের মানুষ তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গানকে ঘিরেই। তিনি সারাজীবন ভালো ভালো গান গেয়ে যেতে চান। দেশের মানুষ তাকে বড়ো আশা নিয়ে শিল্পী বানিয়েছে। তাদের আশা পূরণ করতে চান। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে নিজেই গানের কম্পোজিশন করবেন। ইতোমধ্যে নিজে সুর করছেন। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশটি গানে সুর করেছেন। এর মধ্যে কিছু গান প্রকাশও হয়েছে। তার মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সামনে আরো এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা তার ভক্ত শ্রোতাদের।