বেসিনের সাতকাহন

04 Sep 2024, 01:24 PM অভোগ শেয়ার:
বেসিনের সাতকাহন

আধুনিক বসতবাড়ি বেসিন ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। অন্দর-সজ্জার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হলো বেসিন। আগে শুধু বাথরুমেই বেসিন থাকবে এমন একটা ধারণা ছিল। তবে ঘরের নানা জায়গায় বেসিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের বেসিন পাওয়া যায়। বেসিনেরও মতো অনুষঙ্গগুলো কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কেনা হয়ে থাকে। কেনার আগে বেসিন কোথায় লাগাবেন তার ওপর নির্ভর করে কী ধরনের বেসিন লাগাবেন। ডিজাইন কেমন হবে। এবার জানা যাক বেসিনের রকমফের ও তার সাজসজ্জা কেমন হবে...


বেসিনের ধারণা কিন্তু বেশ প্রাচীন। প্রাচীন রোমান বাথ হাউজগুলোতে শুরু হয়েছিল বেসিনের ধারণা। বাথহাউজগুলোতে চার পাশে উষ্ণ পানির কিছুু পাত্র থাকত যেখানে তারা হাত-মুখ ধৌত করত। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থার ধারণা থেকেই আধুনিক বেসিনের উদ্ভব। মূলত ওয়াশস্ট্যান্ড থেকেই আধুনিক বেসিনের জন্ম। ১৬শ’ শতকে ধনী ব্যক্তিরা তাদের শোবার ঘরে কাঠের ফ্রেমের ওপর লোহার বাটি বা কলস রাখতেন মুখ ধোয়ার জন্য। পরের ২০০ বছরে এই ধারণাটি অনেক বিস্তৃতি ঘটে। বসার ঘর, বাথরুম, বারান্দাসহ সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ঘরের নানা জায়গায় বেসিন ব্যবহার করা শুরু হয়।


বেসিনের রকমফের

আমাদের দেশে দুই ধরনের বেসিন বেশি ব্যবহৃত হয়। প্যাডেস্টাল ও কেবিনেট বেসিন। প্যাডেস্টাল বেসিনটি দেয়ালের সাথে সংযুক্ত করে লাগাতে হয় এবং প্যাডেস্টাল বেসিনের নিচে সিরামিকের চারকোণা বা গোল পাইপ থাকে যা মূলত ব্যবহৃত হয় পানির পাইপ লুকানোর জন্য। প্যাডেস্টালের পর যে বেসিনটি ব্যবহৃত হয় বেশি তা হলো কেবিনেট বেসিন। এই বেসিনের নিচে যথেষ্ট জায়গা থাকে বলে এগুলো বাথরুম স্টোরেজ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

বাথরুম বেসিন ও ডাইনিং বেসিনই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। এছাড়া বাড়ির ছোটোখাটো জায়গায় কর্নার বেসিন থাকে। ফুল প্যাডেস্টাল বেসিন, সেমি প্যাডেস্টাল বেসিন, ওয়াল হ্যাং বেসিন, কাউন্টারটপ বেসিন, ক্লক রুম বেসিন ইত্যাদি বেসিন পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। আজকাল কিন্তু বারান্দায়ও বেসিনের ব্যবহার হচ্ছে।

বেসিনের সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু উপকরণ থাকে। যেমন সোপকেস, মিরর স্ট্যান্ড, মিরর, বিব কল ইত্যাদি। সাধারণত বেসিন লাগানো হয়ে থাকে তিন ফুট উচ্চতায়। তারও ১.৫ ফুট উচ্চতায় অর্থাৎ মেঝে থেকে ৪.৫ ফুট উচ্চতায় লাগাতে হয় আয়না এবং এর মাঝামাঝি বেসিন স্ট্যান্ড বা মিরর স্ট্যান্ড। ডাইনিং বেসিন একটু ডেকোরেটিভ হয়। স্বচ্ছ কাচের, সুন্দর ডিজাইনের ডাইনিং বেসিন বাজারে পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে সিরামিকের তৈরি বেসিন বেশি ব্যবহৃত হয়।


বেসিনের সাজ

বেসিনের সাজেও কিন্তু বদলে যেতে পারে ঘরের নকশা। আয়নাটা বেসিনের কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আয়না দেখে শুনে বাছাই করা প্রয়োজন। আয়না পছন্দের ক্ষেত্রে গোল, চারকোণা বা ডিম্বাকার আয়না বেসিনের আকারের সঙ্গে মিল রেখে বসান। আয়নার ফ্রেম হিসেবে কাঠ ও গ্লাস পেইন্ট ব্যবহার করতে পারেন। বেসিনের সাজে আলোর বেশ ভালো প্রভাব রয়েছে। আয়নার দুই পাশে ডেকোরেটিভ লাইট অথবা স্পটলাইট দিয়েও বেসিন এরিয়াকে আকর্ষণীয় করা যায়। আজকাল অনেকে হ্যাংগিং লাইটও বসাচ্ছেন। এছাড়াও বাথরুমের বেসিনের পেছনের দেয়ালে অন্য রঙের টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। সাদা বেসিন ময়লা হয় যেমন দ্রুত তেমনি পরিষ্কার করতেও ঝামেলা তাই রঙিন বা কাচের বেসিন ব্যবহার করতে পারেন।


বেসিনের ম্যাটেরিয়াল

বেসিনের সবচেয়ে কমন ম্যাটেরিয়াল হচ্ছে সিরামিকস। সিরামিকসের সিঙ্কগুলোই সব জায়গায় কমবেশি পাওয়া যায় তাই এগুলোতে বিভিন্ন রকমের আকারে খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও সিরামিকস সহজে পরিষ্কার করা যায়। এর চাহিদা সবসময়ই বেশি। মেটাল ফিনিশিংয়ের বেসিনগুলো ইদানীং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্টেইনলেস এবং অ্যালুমিনিয়ামের বেসিন বা সিঙ্কগুলোও বেশ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও শুধুমাত্র বেসিন টপ পাওয়া যায়, যেটা গ্রানাইট, মার্বেল, কাঠ কিংবা অন্য কিছুর উপরে সেট করে দেওয়া যায়।


বেসিনের জন্য কিছু টিপস

ষ বেসিনে ন্যাপথলিন ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ এড়ানো যায়। মাঝে মাঝে গরম পানি ঢেলে দিলে পাইপের মধ্যে থাকা জীবাণু মরে যায়।

ষ সবসময় বেসিনের কল ভালোভাবে বন্ধ রাখুন, পানি পড়ার দাগই একসময় স্থায়ী রূপ ধারণ করে। লিকুইড বা গুঁড়ো সাবানের সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে বেসিন পরিষ্কার করলে নিমেষে ঝকঝকে হয়ে ওঠে।

ষ সিরামিকের বেসিনে অ্যাসিড বা কড়া সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। লিক্যুইড বা গুঁড়ো সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।

ষ স্বচ্ছ কাচের বেসিনে দাগ-ছোপ দূর করতে পানি আর ভিনিগারের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিষ্কারের পর অবশ্যই শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন