বিশ্বের চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে কান চলচ্চিত্র উৎসবকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উৎসব হিসেবে মনে করা হয়, এরপরই টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র-উৎসব। সেই উৎসবে বাংলাদশের অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাবা’র বিশ্ব প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। ১১ দিনব্যাপী এ উৎসবের পর্দা ওঠে ৫ সেপ্টেম্বর। আর সেই উৎসবেই একাধিকবার প্রদর্শিত হয় মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত ‘সাবা’ ছবিটি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
বিশ্বের চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর অন্যতম টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র-উৎসব [টিআইএফএফ]। ৫ সেপ্টেম্বর পর্দা উঠল এই উৎসবের ৪৯তম আসরের। ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব প্রিমিয়ার হলো বাংলাদেশি ছবি ‘সাবা’র ! যে-ছবির মধ্যদিয়ে বড়োপর্দায় আত্মপ্রকাশ করলেন ছোটোপর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী। টিআইএফএফ-এর উৎসবে ডিসকভারি প্রোগ্রামে বিশ্বের ২৪টি চলচ্চিত্রের সাথে স্থান করে নেয় ‘সাবা’। এটি পরিচালনা করেছেন মাকসুদ হোসেন। গেল ফেব্রুয়ারিতে মেহজাবীনের জন্মদিন উপলক্ষে ‘সাবা’র পোস্টার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ছবিটি সম্পর্কে প্রথমবার জানানো হয়।
‘সাবা’ নিয়ে টিআইএফএফ-এর ওয়েবসাইটে একটি ফিচার করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা মাকসুদ হোসেন সম্পূর্ণ বিপরীত দু’টি দৃষ্টিভঙ্গিতে মা-মেয়ের সম্পর্ক দেখিয়েছেন।
বাবা নিখোঁজ হওয়ায়, সাবা তার অসুস্থ মা শিরিনের একমাত্র অবলম্বন, যিনি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন। নানা হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রায়ই শিরিন তার মেয়ের প্রতি তিক্ততা এবং রাগ দেখান। তাই তারা একসঙ্গে থেকেও নিজস্ব আলাদা জগতে বাস করেন। শিরিনের হার্ট অ্যাটাক হলে মায়ের হার্ট সার্জারির জন্য সাবা তাদের বাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করেন, জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে সঞ্চয়ের চেষ্টা করেন। এমনকি তার সিনিয়র সহকর্মী অঙ্কুরের সাথে তার জমে উঠতে থাকা রোমান্সকেও ঝুঁকিতে ফেলেন, যে বিদেশে পাড়ি জমাতে মরিয়া।
সাবা চরিত্রটি দিয়ে মাকসুদ হোসেন নানা দুঃখজনক ঘটনা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করতে দেখিয়েছেন। একটি চরিত্রের দৈনন্দিন বাস্তবতার কথা ফুটে ওঠে ‘আমরা এখানে কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিচ্ছি’- সংলাপের মধ্য দিয়ে। সাবার সামনে দু’টি পথ থাকে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে জীবন গড়া অথবা সকল কষ্ট পেছনে ফেলে অন্য দেশে চলে যাওয়া আরেক পৃথিবীর খোঁজে।
মেহজাবীন চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচী এবং মোস্তফা মনোয়ারের সাবলীল অভিনয়, ডায়নামিক সিনেমাটোগ্রাফি এবং প্রাণবন্ত কালার প্যালেটে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অঙ্কুর, সাবা এবং শিরিনের অন্ধকার দৃষ্টিভঙ্গির চিত্র। চরিত্রগুলো ছোটো ছোটো বিষয়ে আনন্দ এবং বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পায়, ভালো খাবার, তাজা বাতাস, গান এবং মাঝে মাঝে নিষিদ্ধ অ্যালকোহলে চুমুক।
‘সাবা’র পরিচালক মাকসুদ হোসেন গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্সসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেইসাথে ‘সাবা’সহ নিজের পরিচালিত আরো একটি সিনেমা নিয়ে ভারত ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশনে অংশ নিয়েছেন।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকে বিজয়ী হয়ে মিডিয়ায় নিয়মিত হন মেহজাবীন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন টিভি বিজ্ঞাপনচিত্র এবং নাটক ও ওটিটি প্লাটফর্মে অভিনয় করছেন।
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় তার সাফল্যে অভিনয় ক্যারিয়ারের দরজা খুলে দিয়েছিল। মুঠোফোন অপারেটর বাংলালিংকের একটি টিভি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান মেহজাবীন।
‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৯’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেহজাবীন অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত ‘তুমি থাকো সিন্ধুপারে’। এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর তিনি একে একে কাজ করেন ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘কল সেন্টার’, ‘মেয়ে শুধু তোমার জন্য’, ‘আজও ভালোবাসি মনে মনে’, ‘হাসো আনলিমিটেড’সহ বেশকিছু নাটকে। ২০১৩-এ শিখর শাহনিয়াত পরিচালিত নাটক ‘অপেক্ষার ফটোগ্রাফি’ ছিল মেহজাবীনের জন্য বড়ো একটি টার্নিং পয়েন্ট। ঈদুল আজহা ২০১৭-এ মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় ‘বড়ো ছেলে’-তে অভিনয় করে আবারও শীর্ষে চলে আসেন এই অভিনেত্রী। দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হন মেহজাবীন ও জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনীত এই নাটকটি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এই অভিনেত্রী নাম লিখিয়েছেন গল্পকার হিসেবে। ‘থার্ড আই’ তার লেখা প্রথম নাটকের গল্প।
মেহজাবীন অভিনয়ে তার বহুমুখীতার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং তার অভিনয়ের জন্য বেশকিছু পুরস্কার এবং সম্মাননা পান। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারÑ ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২১, সিজেএফবি পারফর্মেন্স পুরস্কার-২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘সোনালি ডানার চিল’ নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি বাবিসাস পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক [বিপিডব্লিউএন] মেহজাবীন চৌধুরীকে তার ‘আলো’ নাটকের জন্য সম্মাননা প্রদান করেছে।
মেহজাবীন ১৯ এপ্রিল ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে বেড়ে উঠেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মেহজাবীন শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর ছাত্রী ছিলেন। ও লেভেলে পড়াশোনা করার সময় তিনি লাক্স সুন্দরী নির্বাচিত হন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়ো।