নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে সঠিক হেয়ারস্টাইল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর সঠিক হেয়ারস্টাইলের জন্য দরকার ঠিকঠাক হেয়ারকাট। কথায় আছে চুলের কাট আপনার ব্যক্তিত্বই পরিবর্তন করে দিতে পারে। এই কাজটি যদি ঠিকঠাকভাবে করতে চান তবে জানতে হবে মুখের অবয়বের সঙ্গে কোন হেয়ারকাট মানানসই হবে। কিন্তু কোন গড়নে কোন হেয়ারকাট মানাবে তা অনেকেই জানেন না। অনেকে নিজের মুখের গড়নও বুঝতে পারেন না। আজকের অঁভোগ আয়াজনে থাকছে বিভিন্ন ধরনের চুলের কাট ও সাজ নিয়ে কিছু কথা। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...
মুখের গড়ন কীভাবে বুঝবেন
চলমান ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বা ট্রেন্ড দেখে নিজেকে উপস্থাপন করতে যা-ই করুন না কেন, তা হওয়া উচিত আপনার মুখের আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, চেহারা অনুযায়ী হেয়ারকাটিং এবং সেটিং ঠিক না থাকলে দেখতে ভালো না লাগার আশঙ্কাই বেশি।
আপনার মুখের আকৃতি বা গড়ন কেমন তা বুঝতে প্রথমে পুরো মাথার চুল মুখের ওপর থেকে সরিয়ে আঁচড়িয়ে উঁচু করে বেঁধে নিন। তারপর আয়নার সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং খেয়াল করুন আপনার মুখের গড়ন লম্বাটে, গোলাকৃতি নাকি ডিম্বাকৃতির। এছাড়া, পনিটেল করলে আপনি সহজেই চুলের ঘনত্ব এবং দৈর্ঘ্য বুঝতে পারবেন। চুলের ঘনত্ব এবং দৈর্ঘ্যরে ওপরও অনেকাংশে আপনার হেয়ারকাট স্টাইল নির্ভর করে।
গোলাকৃতি বা রাউন্ড শেপ
নারীদের ক্ষেত্রে গোলাকৃতি চেহারার সঙ্গে ফ্রন্ট লেয়ার, লং বব, লং ব্যাংগস কাট ভালো মানিয়ে যাবে। এমন হেয়ারকাট দিতে হবে যাতে করে চেহারার দুই পাশের ফোলাভাব কম বোঝা যায়। পুরো চুল মিডিয়াম টু লং রাখলে হেয়ারকাট খুব সুন্দর মানিয়ে যাবে।
চৌকো বা স্কয়ার শেপ
স্কয়ার শেপের চেহারার জন্য এমন কাট ঠিক করতে হবে যাতে করে চেহারার বেশি চওড়াভাবটা যতটুকু সম্ভব কম বোঝা যায়। সেক্ষেত্রে চুল একেবারে ছোটো করে ফেললে চেহারা আরো বড়ো দেখাবে। এরকম শেপের ফেইসের জন্য চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা রেখে ফ্রন্ট লেয়ার বা সাইড ব্যাংগস কাট দিলে ভালো লাগবে। এতে করে চেহারার জন্য লাইনটা সহজেই ঢেকে যাবে এবং চেহারা হালকা রাউন্ড শেপ দেখাবে।
ডিম্বাকৃতি বা ওভাল শেপ
ওভাল শেপ বা ডিম্বাকৃতি ফেস শেপের ক্ষেত্রে প্রায় সবধরনের হেয়ার কাট খুব মানানসই হয়। তবে, ব্যাংগস এবং ফ্র্রেঞ্জ হেয়ারকাট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ, এই কাটগুলোতে কপাল ঢেকে গিয়ে ফেসের শেপ নষ্ট হয়ে যায়। চেহারায় গোলাকার একটি ভাব তৈরি হয়। তাই চুল যদি স্ট্রেইট হয় তাহলে ফেদার কাট, বব কাট, ভলিউম লেয়ার, ফুল হেয়ার লেয়ার কাট দিতে পারেন। আর চুল যদি কোঁকড়া হয়ে থাকে তাহলে স্টেপ কাট, ইউ কাট ভালো লাগবে।
বরফি বা ডায়মন্ড শেপ
ডায়মন্ড শেপের চেহারায় চোয়াল দৃঢ় হয়ে থাকে। নারীরা এক্ষেত্রে ফ্রেঞ্চ বব, সাইড ব্যাংগস মেসি কাট, ওলফ কাট, লং লেয়ার, ব্লান্ট বব কাটগুলো দিলে সুন্দর মানিয়ে যাবে। ফক্স হক বা টেক্সচারড ক্রপ কাটও বেশ মানিয়ে যায়।
ত্রিভুজাকৃতি বা ট্রায়াঙ্গেল শেপ
ট্রায়াঙ্গেল শেপ বা ত্রিভুজাকৃতির চেহারার মানুষ সচরাচর কমই হয়ে থাকে। এতে কপালের জায়গাটা একটু চাপানো হয়ে থাকে। জ লাইন দৃঢ় হয়ে থাকে এবং থুতনি হয়ে থাকে চোখা। এ ধরনের ফেসের জন্য সুন্দর হবে কাট ব্যাংগস, লেয়ার, ডিপ সাইড পার্ট উইথ স্ট্রেইট কাট। চুল কাটা যেহেতু শেষ এবার তাহলে চুল সাজিয়ে নেওয়া যাক। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চুলের ধরন, চেহারার শেপ, বয়স আর অকেশনও বুঝতে হবে।
সিম্পল কিছু চুলের সাজ জেনে নিন যা আপনার প্রতিদিনের সাজই কাজে লাগতে পারে।
ফ্রেঞ্চ বেণী
চুলের সাজে ফ্রেঞ্চ বেণী অতি পরিচিত। প্রায় সব পোশাকের সাথেই এই স্টাইল মানায়। এর জন্য প্রথমে চুল আঁচড়ে সিঁথি করুন। সিঁথির এক পাশ থেকে অল্প চুল নিন। এই চুলগুলো তিন ভাগ করে ফ্রেঞ্চ বেণী শুরু করুন। বেণীর বাঁধনের প্রতিটি ধাপে নিচ থেকে একগোছা চুল বেণীতে ঢুকিয়ে নিন। একপাশের বেণী শেষ করে কানের কাছে আটকান। একইভাবে সিঁথির অন্য পাশেও বেণী করুন। এবার পেছনের সব চুল নিয়ে খেজুর বেণী করুন। ফ্রেঞ্চ বেণীর মতোই খেজুর বেণী করা হয়। শুধু চুল তিন ভাগ না করে দুই ভাগ করুন। একভাগ থেকে একগোছা চুল নিয়ে অন্য ভাগে মিলিয়ে দিন। এভাবে পরপর একগোছার চুল আরেক গোছায় দিন। চুলের আগায় এসে একটা সুন্দর ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিন। হয়ে গেল স্টাইলিশ ফ্রেঞ্চ বেণী।
টুইস্ট খোঁপা
কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রে টুইস্ট খোঁপার জুড়ি নেই। শাড়ির সাথে এই খোঁপা খুব সুন্দর লাগে। টুইস্ট খোঁপা সাজে জমকালোভাব এনে দেয়। টুইস্ট খোঁপার জন্য চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। সামনে লেয়ার কাট থাকলে এক পাশে সিঁথি করতে পারেন। সিঁথি ছাড়াও খোঁপাটি বেশ ভালো দেখায়। প্রথমে কপালের সামনের চুলগুলো আলাদা করুন। মাথার মাঝের চুলগুলো পাফ করে অল্প করুন। এবার সমনের চুলগুলো কয়েকটি গোছা করে নিন। প্রতিটি গোছাকে একে একে পেঁচিয়ে টুইস্ট করে পাফ করা চুলের ওপর দিয়ে পেছনে এনে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। সামনের সব চুল টুইস্ট হয়ে গেলে পেছনের চুলগুলো রাবার দিয়ে আটকে নিন। সামনের মতো পেছনের চুলগুলোকে বেশ কয়েকটি গোছা করে নিন। প্রতিটি গোছাকে টুইস্ট করে পেঁচিয়ে খোঁপার শেপ করুন। আকর্ষণীয় লুক পেতে খোঁপার একপাশে ফুল গুঁজে দিন।
পনিটেল
সহজে এবং তাড়াতাড়ি চুল বাঁধার উপায় হলো পনিটেল। অপেক্ষাকৃত গোল মুখের সঙ্গে পনিটেল বেশি ভালো লাগে। নানা নামে পনিটেলের আছে রকমফের। ছোটো কাঁকড়া ক্লিপ বা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে কিছু চুল আটকে পুরো চুলটা পনিটেল করে রাখা যায়। আবার সব চুল টেনে উঁচু করে পনিটেল করতে পারেন। লো পনিটেল ও হাই পনিটেল দুই-ই গরমে আরাম দেবে।
রিবন টুইস্ট
সালোয়ার-কামিজ কিংবা পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে এই চুল বাঁধা খুব মানায়। পুরো চুল আঁচড়ে মাথার একপাশে নিয়ে আসতে হবে। যে পাশে চুল থাকবে না, সেই পাশে পিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে দিতে হবে। এবার একপাশে আনা চুলগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে পনিটেল করে নিতে হবে। পনিটেল করা চুলগুলো কালো ফিতা দিয়ে পেঁচিয়ে নিচের দিকের কিছুটা গোছা ছেড়ে রাখতে হবে।
ছবি : সংগ্রহ