অভিনয়শিল্পীদের প্রেম-বিয়েসহ নানারকম মুখরোচক খবর জানতে চান ভক্তেরা। শিল্পীরাও মাঝে মাঝে আলোচনায় থাকার জন্যে নানা ঘটনার জন্ম দেন। আনন্দভুবন বিয়ে সংখ্যায় থাকছে চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি, থাকছে তার উঠে আসা, প্রেম, বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন শেখ সেলিম...
কেউ কেউ অভিনয় দিয়ে আলোচনায় আসেন আবার কেউ কেউ মুখরোচক নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন। শিল্পীদেরও আর দশ জন মানুষের মতোই একটা মন আছে, সেই মন দেওয়া-নেওয়া হতেই পারে। কেউ প্রকাশ্যে প্রেম করেন, কেউ আবার গোপন রাখেন। এই দিক দিয়ে পরিমনিকে খুব সাহসিকতার পরিচয় দিতে দেখা গেছে, সারাবছরই আলোচনায় নানা ঘটনার মধ্যে থেকে আলোচনায় দেখা গেছে তাকে। বর্তমান সময়ে যে-ক’জন অভিনেত্রী রয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রেম ও বিয়ে করার রেকর্ড করেছেন পরিমনি। পরীমনি মূলত গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন। তার গ্রমের বাড়ি সাতক্ষীরায়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর সেখানেই জন্ম পরীর। গ্রাম থেকে উঠে এসেই ঢাকাই সিনেমায় স্থান করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। উপহার দিয়েছেন অনেক ভালো ভালো সিনেমা। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো একমাত্র পরীমনিই প্রথম ছবি মুক্তির আগেই নায়িকা তকমা পেয়েছিলেন।
পরীমনির আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় আসেন। মডেলিং দিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। মিডিয়ায় আসার আগেই বিয়ে হয় তার।
মাসুদ নামের এক আত্মীয়ের সঙ্গে প্রথম প্রেম ও পরে বিয়ে হয় পরীমনির। নানার বাড়ি বরিশাল থেকে মাসুদের সঙ্গে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে যান। ১ মাস পর আবারও বরিশালে ফিরে আসেন। এরপর বিচ্ছেদ হয় মাসুদের সঙ্গে।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পরীমনির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের। এরপর থেকে রাজের সঙ্গী ছিলেন তিনি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের একটি ফেসবুক আইডি থেকে কিছু ছবি শেয়ার দিয়ে বলা হয়, পরীমনি ইসমাইল নামে একজনের স্ত্রী। ইসমাইলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। এরপর ফেসবুকে পাওয়া যায় সৌরভ কবীর নামের আরো একজনের সঙ্গে তার বিয়ের কাবিননামা-ঘনিষ্ঠ ছবি। শোনা যায়, নাটকে অভিনয় করার সময় সেতু নামের এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। সংসারও করেছিলেন কিছুদিন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বাগদানও হয়েছিল। দুই বছর প্রেমের পর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ কামরুজ্জামান রনি নামে একজনকে বিয়ে করেন এই নায়িকা। ৫ মাসের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হয়।
এরপর ডিবির এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। বলা হয় তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। পরীমনির ঘনিষ্ঠতায় পদ হারিয়ে ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ তরুণ অভিনেতা শরিফুল রাজের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পরীমনি। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর রাজকে বিয়ে করেন। সে বিয়েও শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘গুণীন’ সিনেমার সেটে দু’জনের মধ্যে প্রেম হয়। ওই বছরেই ১৭ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে সারেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এখানেই শেষ নয়, তিনি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলেও শোরগোল ফেলে দেন। পরবর্তীসময়ে মাদক মামলায় গ্রেফতার হোন ১ সেপ্টেম্বর। কিছুদিন পর মুক্তি পান পরীমনি।
এছাড়া একাধিকবার বিয়ের বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের কথা চাউর আছে বাংলাদেশের মিডিয়াঙ্গনে। পরীমনি এসব তথ্যের কিছু স্বীকার এবং কিছু অস্বীকার করেন বিভিন্ন সময়ে। তবে ১০ জানুয়ারি উইকিপিডিয়ায় পরীমনির পাঁচ বিয়ের তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়। সেখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচ বিয়ে ও স্বামীর নাম ক্রমানুসারে দেখা যাচ্ছে।
সেখানে লেখা আছে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে পরীমনির প্রথম বিয়ে হয় তার কাজিন ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সেই সংসার ভেঙে যায়। একই বছর ফুটবলার ফেরদৌস কবির সৌরভের সঙ্গে পরীর বিয়ে হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল তাদের সেই সংসার। এরপর একই বছর সাংবাদিক ও আরজে তামিম হাসানকে বিয়ে করেন পরীমনি। অল্প দিন পরই এ বিয়েও ভেঙে যায়। এরপর নির্মাতা ও অভিনেতা কামরুজ্জামান রনির সঙ্গে হঠাৎ করেই বিয়ের ঘোষণা দেন পরীমনি। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বিয়েও ভেঙে যায় তার।
পেছনে ফিরে দেখা : ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে পরীমনির মা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সঙ্গে সাভারে বসবাস শুরু করেন পরীমনি। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটে তার বাবার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ তাকে খুন করেছে বলে জানা গেছে। বাবার মৃত্যুর পর পরীমনি সাভারে তার এক খালার বাসায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই নিজেকে তৈরি করেন পরী।
নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি চলচ্চিত্রে পরীমনি নাম নিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা শুরুর পর দ্রুতই পরিচিতি পেতে থাকেন। ইতোমধ্যে দুই ডজন ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন, দু-একটি ছবি ছাড়া বাকি প্রায় সব ছবিই হলে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়।