অন্ধকারের মাঝেও টের পাই আমার চোখে জল -আসাদুল ইসলাম

21 Mar 2021, 03:02 PM রঙ্গশালা শেয়ার:
অন্ধকারের মাঝেও টের পাই আমার চোখে জল -আসাদুল ইসলাম

মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনে ৬৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাট্যপ্রযোজনা তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে আছে নাট্যজন আসাদুল ইসলামেরও একটি নাটক।

‘২৮৮ দিন’ নামের এই নাটকটি ১২ ফেব্রæয়ারি রংপুর টাউন হলে মঞ্চস্থ হয়। এই নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে আনন্দভুবনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...



আনন্দভুবন : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রংপুর টাউন হলে মঞ্চস্থ হলো আপনার রচিত নাটক ‘২৮৮ দিন’। এর আয়োজন নিয়ে বলুন।

আসাদুল ইসলাম : কোনো নাটক একদিনে তৈরি হয় না। এর জন্য মহড়া লাগে, চরিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি লাগে, সংলাপ বিশ্লেষণ করতে হয়, সেট প্রপস লাইটের প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় প্রকাশনার। অনেক দিন ধরেই নাটকটির কাজ চলছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি ছিল নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এই আয়োজনে নাটকের কলাকুশলীরা যেমন আত্মনিবেদিত ছিল তেমনি আয়োজক জেলা শিল্পকলা একাডেমি রংপুরও ছিল সার্বিকভাবে সচেষ্ট যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, সহকারী জেলা প্রশাসকসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শহরের সর্বস্তরের শিল্পীবৃন্দ। নাটকের প্রদর্শনী দেখতে এলাকার সাধারণ মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আমাকে অভিভূত করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বাদে রংপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে ‘২৮৮ দিন’ নাটকটি যেন নতুন তরঙ্গাভিঘাত সৃষ্টি করল।

আনন্দভুবন : নাটকটি রচনার প্রেক্ষাপট এবং কাহিনি সংক্ষেপে বলুন-

আসাদুল ইসলাম : ‘২৮৮ দিন’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা একটি নাটক। ২০১৮ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সাথে আমি আসাম সফর করি। সেই সফরে তিনি আমাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক লেখার পরামর্শ দেন। আজ আমি আনন্দিত যে তার পরামর্শ মোতাবেক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি নাটক লিখতে সমর্থ হয়েছি। নাটকটি আমি লিয়াকত আলী লাকীকে উৎসর্গ করেছি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে বন্দি করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ঢাকা থেকে বন্দি অবস্থায় তাকে পাঠানো হয় করাচি, সেখান থেকে লায়ালপুর কারাগারে। সিক্রেট ট্রায়ালে তার বিচার হয়, এরপর পাঠানো হয় মিয়ানওয়ালি কারাগারে। সেখান থেকে চশমা ব্যারেজ, তারপর শাহুল্লাহ বাংলোয়। সবশেষে রাওয়ালপিন্ডি বিমান বন্দর। ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে একটা কার্গো বিমানে তুলে দেওয়া হয়। ধানমন্ডি ৩২ নং থেকে রাওয়ালপিন্ডি বিমান বন্দর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ২৮৮ দিনের অন্তরীণ জীবনের রুদ্ধশ্বাস চিত্রণকে ধারণ করেছে আমার লেখা নাটক ‘২৮৮ দিন’।

আনন্দভুবন : মঞ্চায়িত প্রযোজনা দেখে আপনার মূল্যায়ন-

আসাদুল ইসলাম : যখন থেকে জানতে পারি নাটকটি ১২ ফেব্রুয়ারি মঞ্চায়ন হবে, তখন থেকেই নাটকটি দেখার যেন তর সইছিল না। নাটকটি প্রযোজনা করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি রংপুর। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই নাটকটি দেখতে রংপুরে যাই। রংপুরের ছেলেরাই নাটকটিতে অভিনয় করেছে এবং রংপুরেরই নাট্যজন রাজ্জাক মুরাদ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। হল ভর্তি দর্শকদের সাথে বসেই আমি নাটকটি দেখেছি এবং তাদের মতোই ক্ষণে ক্ষণে রোমাঞ্চিত হয়েছি। নাটকের কাহিনি এবং ঘটনার নতুন নতুন উন্মোচন আমাকে শিহরিত করেছে। নাটকের দৃশ্য, সজ্জা, সেট, লাইট, পোশাক সমস্তই ছিল নিপুণ এবং শৈল্পিক। ছেলেদের অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো। বিশেষত বঙ্গবন্ধুর যখন ঢাকা ফেরার ফ্লাইট সমস্যার কোনো কিনারা হচ্ছে না, তখন হঠাৎ লন্ডনের সিদ্ধান্ত আমাকে আবেগাক্রান্ত করে। মিলনায়তনের অন্ধকারের মাঝেও টের পাই আমার চোখে জল।

আনন্দভুবন : আঞ্চলিক জাগরণে এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ ?

আসাদুল ইসলাম : মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনে ৬৪ জেলায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাট্য প্রযোজনা একটি মহৎ উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। রংপুরে গিয়ে দেখলাম করোনার কারণে সংস্কৃতি অঙ্গনে যে স্থবিরতা বিরাজ করছিল সেটা কেটে গেছে। এই নাট্য প্রযোজনার মধ্য দিয়ে সেখানে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নাটক একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যম হওয়ায় এর সুবিধা হলো একটি ভালো মাপের নাট্যপ্রযোজনা আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতাকে ভেঙে ফেলে। ‘২৮৮ দিন’ নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রযোজনা এবং এর কৃতিত্ব জেলা শিল্পকলা একাডেমি রংপুরের। এই নাট্যপ্রযোজনার মধ্য দিয়ে রংপুরে একটি জাতীয় আবহ সৃষ্টি হয়েছে।

আনন্দভুবন : সুবচনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো মঞ্চায়ন ভাবনা আছে কি না ?

আসাদুল ইসলাম : মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সুবচন নাট্য সংসদ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন একটি নাট্য প্রযোজনার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। নাটকের নাম ‘ঢাকা জেল ১৯৬৬’। এই নাটকটিও আমি লিখেছি। আশা করি প্রযোজনাটি খুব শিগ্গিরই মঞ্চায়ন উপযোগী হয়ে উঠবে।

আনন্দভুবন : ম্যাড থেটারের আগামী প্রযোজনা ভাবনা নিয়ে বলুন ?

আসাদুল ইসলাম : ম্যাড থেটারে ৩টি প্রযোজনার কাজ চলছে। ২টি মঞ্চনাটক ‘দ্বিতীয় বিজয়া’ ও ‘অ্যানা ফ্রাঙ্ক’ এবং একটি পথনাটক ‘ঘরে ফেরা’র কাজ চলছে। এককনাটক হিসেবে অ্যানা ফ্রাঙ্কের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এটি খুব শিগগিরই মঞ্চে আসবে। 

লেখা : নিথর মাহবুব