আত্মবিশ্বাসী তারুণ্যের প্রতিনিধি সৈয়দা মারিয়া

21 Mar 2021, 03:08 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
আত্মবিশ্বাসী তারুণ্যের প্রতিনিধি সৈয়দা মারিয়া

সংবাদ উপস্থাপনায় প্রমিত বাংলা উচ্চারণের কারণে সুপরিচিত মারিয়ার মুখটি অনেক দর্শকের কাছেই খুব চেনা। পেশায় ব্যাংকার হলেও সংবাদ উপস্থাপনায় নিজেকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বহুমুখী গুণের অধিকারী সৈয়দা মারিয়া হোসেনের বিস্তারিত আনন্দভুবনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...


আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপনা পেশায় আসার গল্পটা জানতে চাই ?

মারিয়া : খুব ছোট বয়সেই সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হই। এর জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেওয়া সেটি কিন্তু নেইনি। তখন আমি ভিকারুননেছায় পড়ি। পড়ালেখায় বরাবরই ভালো ছিলাম। স্বাধীনও ছিলাম। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে তারাও বাধা দেননি কোনো কাজে। সে কারণে বাধা উৎরানো সহজ হয়েছে। সংবাদ উপস্থাপনার আইডিয়াটা কিন্তু আমার মাথায় ছিল না, মগবাজার বাসার পাড়ার ছেলেদের করা মন্তব্যই আজকের পেশায় আমি অনুপ্রাণিত হই। তখন আমি ইত্যাদিতে ‘চিঠিপত্র’ বিভাগ উপস্থাপনা করি। সে সুবাদে পাড়ার ছেলেরা আমায় দেখে বলাবলি করে ‘এই মেয়েটাইতো ইত্যাদিতে খবর পড়ে।’ কথাটা মাথায় গেঁথে গেল। তখন ভাবি বিভিন্ন চ্যানেলে এভাবেইতো সংবাদ উপস্থাপন হয়, তাহলে আমি কেন যাই না সেখানে। এভাবেই অডিশন দিয়ে যোগ দিই চ্যানেল ওয়ানে। তখন আমি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে পড়ি। চ্যানেলটি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এরপর ২০১১ সালে এটিএন বাংলায় সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে যোগ দিই। এর মাঝেই পড়াশোনা শেষ করি, বিয়েও হয়। এভাবেই আমি আজকের সংবাদ উপস্থাপক।

আনন্দভুবন : প্রমিত উচ্চারণে সংবাদ উপস্থাপনায় আপনার বেশ সুনাম, এটা কীভাবে আয়ত্ত করেছেন ?

মারিয়া : এর পুরো কৃতিত্ব আমার মায়ের। তার কাছে আমি ভীষণ ঋণী। যদিও সে পুরোদস্তুর গৃহিণী। তার সন্তান অশুদ্ধ, ভুলভাল উচ্চারণ করবে এটা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। ছোটবেলায় এজন্য তার কড়া শাসনে পড়তে হয়েছে। যেহেতু দুটো জায়গাতেই কর্পোরেট হ্যান্ডেলিং রয়েছে তাই এখন বুঝি ছোটবেলাকার মায়ের সেই বকুনি এখন আমার জন্য আশীর্বাদ। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি পরিবার হতে পারে সাবলীল শুদ্ধ উচ্চারণে ভাষা শেখার প্রথম ইনস্টিটিউশন। এক্ষেত্রে কবিতা খুব কাজে লাগে। নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচয় ঘটে কথার জড়তা কাটে, উচ্চারণ স্পষ্ট হয়।

আনন্দভুবন : আপনার হাইট, গড়ন, উচ্চারণ, বাড়তি গুণ সব মিলিয়ে কখনো অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন ?

মারিয়া : [সহাস্যে] নাটকে পাইনি, অবশ্য আমার অনেক বন্ধুরাই চুটিয়ে নাটক করছে। তবে কয়েক বছর আগে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলাম।

আনন্দভুবন : বাকি কাস্টিং কারা ছিলেন জানতে পেরেছিলেন ?

মারিয়া : অবশ্যই। সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে।

আনন্দভুবন : করলেন না কেন ?

মারিয়া : আসলে এ মাধ্যমটিতে আমি সাবলীল নই, সেভাবে কখনো ভেবে দেখা হয়নি। হয়তো অনেকের স্বপ্নের নায়ক শাকিব খান বা তার সঙ্গে অভিনয়ে আগ্রহী, আমি এও জানি এ মুহূর্তে শাকিব খান সবেচেয়ে কাক্সিক্ষত নায়কও। তারপরও সিনেমায় আমার আগ্রহ নেই। অবশ্য স্বীকার করতে আপত্তি নেই তার সঙ্গে কখনো সামনা-সামনি দেখা হয়নি। কেন হয়নি তাও জানি না।

আনন্দভুবন : নাটকে প্রস্তাব পেলে কার সঙ্গে অভিনয় করবেন ?

মারিয়া : অভিনেতা তাহসান [রহমান খান] ভাইয়ের সঙ্গে প্রস্তাব পেলে অন্তত একটি নাটকে অভিনয় করতে চাই। ব্যাংকে তিনি আবার আমাদের ক্লায়েন্টও। সেই সুবাদে অল্পবিস্তর আলাপ রয়েছে।

আনন্দভুবন : আপনি ৫ম সাউথ এশিয়ান সামিটে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এ সফরে আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলুন ?

মারিয়া : সত্যি বলতে আমার জন্য এটা ছিল অনেক বড় পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই আশা করছি এমন কিছু করতে হবে যেখানে চ্যালেঞ্জ থাকবে, নিজস্বতা থাকবে। একটু একটু করে হলেও আমি সেটা করতে পারছি। আমার দেশের অনেক পজেটিভ দিকও রয়েছে যেগুলো খুব সূ²ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। অর্থনীতিবিদ ও গবেষক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, আনিসুল হকের সঙ্গে পিনালিস্ট হিসেবে ওই সামিটে আমিও আমন্ত্রিত হই। আমার পর্যবেক্ষণের উপস্থাপনার বিষয়বস্তু ছিল Gender Gape in South Asia. দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানিও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। ওই সফর আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমার বিষয়বস্তু পাকিস্তান-ভারতের তরুণদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছিল। পরে তারাই এসেছিল জেন্ডার গ্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে।

আনন্দভুবন : প্রিয় ব্যক্তি ?

মারিয়া : আমার বাবা সৈয়দ মনির হোসেন। তিনি বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তার সততা, ব্যক্তিত্ব আর দেশপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করে।

আনন্দভুবন : প্রিয় মুভি ?

মারিয়া : ওয়ার, আগুনের পরশমণি।

আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপনায় নতুনদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ ?

মারিয়া : আমি এখনো পরিণত নই, তবে যতটা দেখেছি তাতে পথটা খুব সহজ নয়, আপনার ভাবনাই আপনাকে পথ দেখাবে। যারা নতুন তারা যদি সংবাদ উপস্থাপনায় নিজেকে থিতু করতে চান তাহলে গø্যামার নয়, মেধা আর মনন প্রয়োজন। প্রমিত বাংলা জানা খুব জরুরি। ইংরেজি হলে সেটার উচ্চারণও যেন স্পষ্ট-সাবলীল হয়। আত্মবিশ্বাস অবশ্যই থাকা চাই, তবে সেটা যেন বেলুনের মতো না হয়, তাহলে মোহভঙ্গ ঘটবে।

সাক্ষাৎকার : আহমেদ তেপান্তর