করোনা মহামারি ঈদ ও আনন্দভুবন-এর পঁচিশ বছর : আলমগীর হোসেন

05 May 2021, 02:38 PM বিশেষ সম্পাদকীয় শেয়ার:
করোনা মহামারি ঈদ ও আনন্দভুবন-এর পঁচিশ বছর : আলমগীর হোসেন

আনন্দভুবন গৌরবের পঁচিশ বছর অতিক্রম করছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের এক মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের বিনোদন ও জীবনশৈলীর সেরা পাক্ষিক আনন্দভুবন অতিক্রম করছে গৌরবের পঁচিশ বছর। এটি বাংলাদেশের বিনোদন জগতে অভাবনীয় এক বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিনোদন পাক্ষিকের পঁচিশ বছর পথচলা নিঃসন্দেহে একটি বড়ো অর্জন। নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে আনন্দভুবন-এর রজতজয়ন্তীর শুভ ক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখার আন্তরিক ইচ্ছে ছিল আমাদের। কিন্তু, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সর্বগ্রাসী থাবার কারণে সেই ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিতে হলো। তবে, আনন্দের কথা এই যে, পঁচিশ বছর উপলক্ষে আনন্দভুবন-এর অনলাইন সংস্করণ চালু করেছি আমরা। পাঠকেরা এখন ঘরে বসে অথবা চলতিপথে মুঠোফোনে www.anandabhuban.com অথবা বাংলায় ‘আনন্দভুবন’ লিখে সার্চ করলেই পড়তে পারবেন আনন্দভুবন-এ প্রকাশিত সকল সংবাদ, ফিচার বা বিশেষ বিশেষ আয়োজনসমূহ।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। গত একবছরে শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মাননীয় সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নাট্যজন আলী যাকের, বাংলা একাডেমির সভাপতি ও প্রাক্তন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ছড়াকার আলম তালুকদার, টিভি ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক লোকসংগীতশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, অভিনয়শিল্পী ও নাট্যপরিচালক মজিবুর রহমান দিলু, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক, অসামান্য অভিনয়শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান, দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক সারাহ বেগম কবরী, অভিনয়শিল্পী এস এম মহসীন, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলসহ দেশের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রকর্মী, ব্যবসায়ীসহ নানা সেক্টরের অনেক খ্যাতিমান মানুষকে হারিয়েছি আমরা। এঁদের প্রত্যেকের কাছেই আনন্দভুবন কোনো-না-কোনোভাবে ঋণী। করোনা মহামারির কারণে দেশের যে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা হারিয়েছি, তাঁদের সবার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ও আপনাদের সকলের দোয়ায় সুস্থ হয়েছি, আমার মতো এমন অসংখ্য মানুষ করোনার সাথে লড়াই করে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের সবার জন্য রইল অফুরান শুভেচ্ছা। আপনাদের সবার নিরোগ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিপুল প্রসার ঘটেছে, তার ওপর মোবাইল ফোন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বহুবিধ মাধ্যমের সুবাদে বিনোদন এখন মানুষের ঘরে ঘরে, হাতে হাতে- এছাড়া দৈনিক পত্রিকাগুলো বিনোদনের পাতা বের করে পাক্ষিক বিনোদন পত্রিকাগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। অনেক ম্যাগাজিন হারিয়ে গেছে, কেউ কেউ কোনোরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। আনন্দভুবন ব্যতিক্রম এই অর্থে যে, এত কিছুর পরও টিকে আছে নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে।

প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন, করোনা মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে। সীমিত হয়েছে মানুষের চলাফেরা ও জীবনযাত্রা ; আনন্দভুবনও এর অভিঘাত থেকে মুক্ত নয়। তাই বরাবরের মতো বর্ধিত কলেবরে ঈদসংখ্যা বা ঈদ ফ্যাশন ক্যাটালগ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তবুও, বৈশি^ক মহমারি ও মহামারিজনিত লকডাউনের ভেতরে সীমিত আকারে একটি ঈদসংখ্যা আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেরে আনন্দ বোধ করছি।

পঁচিশ বছরের পথচলার এই শুভক্ষণে ধন্যবাদ জানাই আনন্দভুবন-এর সকল সাংবাদিক, কর্মী, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, স্পন্সরদাতা, বিনোদনকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সেলিব্রেটি, বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ, ফ্যাশন ডিজাইনার, বিপণনকর্মী, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকর্মী, সকল কলাকুশলী, পাঠকগণ- এককথায় আনন্দভুবন-এর বিভিন্ন শাখায় নানাভাবে যারা পত্রিকাটির পঁচিশ বছরের পথচলায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে।

গত পঁচিশ বছরে অনেক মডেল, শিল্পী, লেখক আনন্দভুবন-এর প্রচ্ছদে এসেছেন। অনেক নবীন লেখক লেখা ছেপে হয়েছেন প্রথিতযশা, পেয়েছেন খ্যাতি, দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জনেও সক্ষম হয়েছেন। আনন্দভুবন আয়োজিত ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা ও ফ্যাশন শো-তে অংশগ্রহণ করে অনেক ফ্যাশন হাউজ ও ডিজাইনার দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন, বাড়াতে পেরেছেন ব্যবসায়ের পরিধি। রজতজয়ন্তীর এই আনন্দঘন মুহূর্তে সকলের অবদান ও অংশগ্রহণের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।

পঁচিশ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ বেক্সিমকো গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

যারা সহযোগিতা দিয়ে দীর্ঘ পঁচিশ বছর আনন্দভুবনের পাশে ছিলেন ভবিষ্যতেও তাদের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা পাবো বলে আশা করছি।

দেশ এগিয়ে চলেছে, করোনা মহামারির মধ্যেও সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে আমরা একদিকে যেমন করোনার সাথে লড়াই করছি নির্ভীকচিত্তে অন্যদিকে তেমনি তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দরুন সকল সেক্টরে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। আমরাও সেই উন্নয়নের শরিক হতে চাই আমাদের দায়িত্ব বোধ থেকে। আমরা আমাদের কর্মপরিধি বাড়িয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো দৃঢ়তার সঙ্গে।

ঈদ আসন্ন, সকলের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চাই। করোনা মহামারি দূর হয়ে পৃথিবী নিরাময় ও নির্মল হোক। ঈদ সবার জীবনে বয়ে আনুক আনন্দ, সুখ আর সমৃদ্ধি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।