হলিউডে প্রবাসী যারা

06 May 2021, 09:31 PM হলিউড শেয়ার:
হলিউডে প্রবাসী যারা

বিশ্বের একনম্বর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হলিউড। বিশ্বের নানা দেশের অভিনয়শিল্পীদের স্বপ্ন হলিউডে স্থান পাওয়া। আমরা অনেক সময় হলিউডের অনেক সিনেমায় অন্য দেশের অভিনয়শিল্পীদের দেখি। অনেক সময় বুঝতে পারি এরা হলিউডের বাসিন্দা মানে মার্কিন মুল্লুকের নাগরিক নন। তবে এমন অনেক অভিনয়শিল্পীই হলিউডে রয়েছেন, যারা মূলত অন্য দেশের নাগরিক। তাদের অভিনয় এবং ভাষাগত দক্ষতার জন্য আমরা বুঝতেই পারি না এরা মার্কিনি নন। এমনই কিছু হলিউড তারকা অথচ যারা মার্কিনি নন তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো ...


ইদ্রিস এলবা

ব্রিটিশ অভিনেতা ইদ্রিস এলবা আমেরিকান বিনোদন বাজারে প্রবেশ করেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এইচবিও ধারাবাহিক ‘দ্য অয়্যার’-এর মাদক পাচারকারী স্ট্রিঙ্গার বেল-এর চরিত্র দিয়ে। এর আগে বিবিসি ধারাবাহিক ‘লুথার’ এবং ‘ম্যান্ডেলা : লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ সিরিজ দুটোর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে এ শিল্পে নিজের একটা পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করে নেন তিনি। পরবর্তীসময়ে ডিসি কমিকস এবং মারভেল ইন্টারটেইনমেন্ট-এর মতো প্রথিতযশা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও কাজ করেন। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘দ্য লুজারস’, ‘অ্যাভেঞ্জারর্স’ সিরিজ, ‘আমেরিকান গ্যাংস্টার’, ‘প্যাসিফিক রিম’, ‘প্রমিথিউস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি হলিউডের বেশ কিছু জনপ্রিয় এনিমেশন মুভিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ; যেগুলোর মধ্যে অস্কারজয়ী ‘জুটোপিয়া’ অন্যতম।


ফ্যামকে জানসেন

নেদারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা ডাচ অভিনেত্রী ফ্যামকে জানসেন হলিউডের বেশ কিছু জনপ্রিয় অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া জেমস্ বন্ড সিরিজের ‘গোল্ডেন আই’ সিনেমায় ; বিখ্যাত বন্ড অভিনেতা পিয়ার্স ব্রসনেন-এর বিপরীতে জিনিয়া ওনাটোপ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। মূলত এরপর থেকেই হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করে নেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘এক্স ম্যান’, ‘টেকেন’ এবং ‘বø্যাকলিস্ট’ সিরিজের সিনেমাগুলো ছাড়াও ‘টার্ন দ্য রিভার’, ‘হাউজ অন দ্য হন্টেড হিল’ সামালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত।


কেয়ানু রিভস্

‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ [১৯৯৯]-খ্যাত কেয়ানু রিভস্-কে সিনেমা দর্শকদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অবকাশ রাখে না। হলিউডের অত্যন্ত সফল এই অভিনেতা মূলত একজন কানাডিয়ান যার জন্ম হয়েছিল লেবাননের বৈরুতে। প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করা এই অভিনেতার শৈশব কাটে কানাডায়। পরবর্তীসময়ে বিশ বছর বয়সে তিনি গ্রিন কার্ড পেয়ে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসে থিতু হন এবং তার দুই বছর পর ‘ইয়াং বøাড’ [১৯৮৬] নামে একটি সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু করেন। অ্যাকশনধর্মী সিনেমার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এ অভিনেতার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘স্পিড’, ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ সিরিজ, ‘পয়েন্ট ব্রেক’, ‘জন উইক’ সিরিজ, ‘ড্রাকুলা’ ইত্যাদি। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম, ডকু ফিল্ম, এনিমেশন এবং ভিডিও গেমসে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।


নাটালি পোর্টম্যান

এ সময়ের বিশেষভাবে আলোচিত এবং প্রতিভাবান হলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম নাটালি পোর্টম্যান ইসরায়েল অধ্যুষিত জেরুজালেমের ন্যাটালি হার্শল্যাগ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে, ৪ বছর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন তিনি। পরবর্তীসময়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সমর্থন না করার দায়ে ইসরায়েলি নাগরিকত্ব হারালেও মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অর্জন করা, অস্কারজয়ী এই ইসরায়েলি-মার্কিন অভিনেত্রীর উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ‘লিওন : দ্য প্রফেশনাল’, ‘বø্যাক সোয়ান’, ‘ভি ফর ভ্যান্ডেট্টা’, ‘ক্লোজার’, ‘নো স্ট্রিংগস্ এটাচ্ড’, ‘থর’ সিরিজ এবং ‘অ্যাভেঞ্জারর্স’।


নিকোলাজ কোস্টার-ওয়ালদ্যু

অত্যন্ত জনপ্রিয় এইচবিও টিভি সিরিজ ‘গেইম অব থ্রোনস্’-এর জেইম ল্যানিস্টার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নিকোলাজ কোস্টার-ওয়ালস্ট্যু ডেনমার্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ‘নাইটওয়াচ’ [১৯৯৪] নামে একটি ড্যানিশ মুভিতে অভিনয়ের মাধ্যমে সমালোচক-দর্শকের নজরে আসেন তিনি। হলিউডে অভিষেক ঘটে ‘বø্যাক হক ডাউন’ মুভিতে একজন আমেরিকান সৈন্যের ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে। শোনা যায়, পঞ্চম শীর্ষ পারিশ্রমিক পাওয়া এই টিভি-স্টার গেইম অব থ্রোনসের এক একটি এপিসোডের জন্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে, ‘ওবলিভিয়ন’, ‘গডস্ অব ইজিপ্ট’, ‘নাইটওয়াচ’ ইত্যাদি।


মার্গট রবি

দুইবারের অস্কার মনোনয়ন পাওয়া অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী মার্গট রবি কুইন্সল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং সোমারসেট কলেজ থেকে নাট্যকলায় স্নাতক অর্জন করেন। ‘নেইবারস্’ নামে একটি অস্ট্রেলীয় সোপ অপেরায় অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের শুরু হলেওÑ হলিউডে অভিনয়ের অভিষেক ঘটে ‘দ্য উল্ফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ মুভিটির মাধ্যমে ; যেখানে তিনি একজন ব্রæকলিন এজেন্ট হিসেবে চিত্রায়িত হন। পরবর্তীসময়ে ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এর হার্লে কুইন হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এগুলো ছাড়াও তার অভিনীত অন্যান্য জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে, ‘বার্ডস অব প্রে’, ‘আই, ‘টোনিয়া’, ‘দ্য লিজেন্ড অব টারজান’ ইত্যাদি।


টনি কোলেট

অভিনেত্রী এবং গায়িকা ; টনি কোলেট একজন অস্ট্রেলিয়ান হলেও, সাম্প্রতিক সময়ের ভক্তদের অনেকেই এ বিষয়টি জানেন না। নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়াতেই

অভিনয় জীবনের শুরু হলেও ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘দ্য সিক্সথ্ সেন্স’-এর মাধ্যমে হলিউডে অভিষেক ঘটে। এই সিনেমাটির জন্য তিনি অস্কারের মনোনয়ন পান। বোঝাই যায়, এরপর তাকে আর অন্য কোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য ধর্ণা দিতে হয়নি। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘দ্য আওয়াস্’, ‘অ্যাবাউট আ বয়’, ‘হেরেডিট্যারি’, টিভি সিরিজ ‘ইউনাইটেড স্টেটস্ অব টারা’ ইত্যাদি। 

গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন