অশান্ত বাতাস : জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ

06 May 2021, 09:43 PM মুক্তগদ্য শেয়ার:
অশান্ত বাতাস : জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ

নীরব চারিদিক। মানুষের কোনো কর্ম ব্যস্ততা নেই। গাড়ি চলার কোনো শব্দ নেই। হাইড্রোলিক হর্নের বিকট শব্দে অনেকদিন হৃদপিণ্ড কম্পিত হয় না। রিকশার টুংটাং আওয়াজও নেই। সুনশান নীরবতা। এরই মাঝে স্বপ্নভরা মুঠি মুঠি আলো উঁকি দিয়ে যায়। তবে, সে আলো স্থির, আবদ্ধ। সবকিছু থমকে গেছে। অজানা কোনো আতঙ্কে অন্তর জ্বলে যায়। খণ্ড খণ্ড দুঃশ্চিন্তা। সবুজ হাতের বইটি টেবিলে রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। সবুজের বাসাটি দক্ষিণমুখী, তিন রাস্তার মোড়ে। বড়ো বারান্দা, আলো-বাতাসের কমতি নেই। অপূর্ব! আকাশ ভরা চঞ্চল মেঘ। কদিনের ভ্যাপসা গরমে সে হাঁফিয়ে উঠেছিল। গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টিভেজা স্বস্তির বাতাসে প্রাণ ভরে যায়।

প্রায় তিন মাস হলো, সে ঘরবন্দি। পুরো পৃথিবীই বন্দি। বন্দি জীবন উপভোগ করার উপায় তার জানা নেই। বই পড়া, টিভি দেখা, গান শোনা, বাসার টুকিটাকি কাজ করা, সওদাপাতি করা, বাচ্চাদের সময় দেওয়া আর আকাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই তার দিন যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা যায়। চাঁদ, তারা আর মেঘও দেখা যায়। বাড়ির ছাদ বাগানে, জানালার সানসেটে, বারান্দার রেলিং আর গাছে এখন সারাদিন পাখি চোখে পড়ে। শালিক, চড়ই, বুলবুলি, দোয়েল আর কাক সারাদিনই আনন্দে উড়ে বেড়ায়। মাঝে মধ্যে টিয়া পাখির ঝাঁকও উচ্চস্বরে ডাকতে ডাকতে বাড়ির ছাদে এসে বসে। পাখির কলতানে ভরে থাকে আশপাশ।

সবুজ ঢাকায় থাকে। উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে তার বাসা। অভিজাত এলাকা। অভিজাত মানুষেরা আভিজাত্য নিয়ে চলে। সবুজ আভিজাত্য খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায় না। সাত নম্বর সেক্টরের পার্ক হতে তার বাসা খুব বেশি দূরে না। মাঝে-মধ্যে সে পার্কে হাঁটতে যেত। এখন পার্ক বন্ধ। ক’দিন আগেও পার্কে লোক গিজগিজ করত। একপাশে শিশুদের জন্য দুটো দোলনা, তিনটা ঢেঁকি, আর একটি ছোটো ¯িøপার। বিকেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে অনেক শিশু পার্কে যেত। খেলতে না-পেরে শিশুরা মন খারাপ করত। সেক্টরে কোনো পাবলিক লাইব্রেরি সে দেখেনি। কোনো অডিটোরিয়াম, শিশুদের খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির শাখা, সিনেমা হল কিছুই তার চোখে পড়েনি। তবে শপিং মল, হোটেল, ওষুধের দোকান, অখ্যাত বেসরকারি ক্লিনিক, বাণিজ্যিক কিন্ডার গার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সে দেখেছে। সবুজের বাসার সামনেই এখন দেশি ও সোনালি মুরগি পাওয়া যায়। অর্ডার দিলে মুরগি পরিষ্কার করে গেটে দিয়ে যায়। ডাব, ফলমূল, শাক-সবজি সবই পাওয়া যায়। দু-তিনটি বাড়ির পরে ছোটো দোকানে হাতে ভাজা মুড়ি আর কলা পাওয়া যায়। মধুসহ নানান ধরনের মসলাও পাওয়া যায়। কোনো কিছুর কমতি নেই। সবুজ একবার ভাবল, এজন্যই অভিজাত এলাকা।

একটু পরেই ইফতার। ছাব্বিশটি রোজা পূর্ণ হবে। মহিমান্বিত রাতের পূর্বক্ষণ। রমজান মাসের শেষ দশ রোজার বিজোড় দিনের পূর্বরাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ শব-ই-ক্বদরের রাতে বিশেষ ইবাদত করেন। বলা হয়, শব-ই-ক্বদরে পবিত্র কোরান নাজিল হয়েছিল। সেজন্য, শব-ই-ক্বদরের রাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা বেশি। সাতাশ রোজার পূর্ব রাতকেই অনেকে শব-ই-ক্বদরের রাত মনে করেন। বাসায় ইফতারি তৈরি হচ্ছে। ছোলাভুনা, আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, চিকেন ফ্রাই আর ফ্রাইড রাইসের সুগন্ধ ভেসে আসছে। খেজুরসহ বিভিন্ন ফল ধোয়া হচ্ছে। লেবুর শরবত আর কচি ডাবের পানি গেলাসে ঢালা হচ্ছে।

মা একটু ভাত দেবেন? একটু ইফতার? ও খালাম্মারা, স্যার, ও স্যার, একটু সাহায্য করেন। রাস্তায় কয়েকজন ফকির চিৎকার করছে। বড়ো বড়ো অট্টালিকার মজবুত গেট। গেটে দারোয়ান। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কোথাও একটু ঠাঁই নেওয়ার জায়গা নেই। মাঝে-মধ্যে ধেয়ে আসছে, ঝড়োবাতাস। আচ্ছা, ঝড়োবাতাস কেন ? ঘুর্ণিঝড় আম্ফান! কোথায় ? অনেক দূরে! অভিজাত এলাকায় ঘুর্ণিঝড় আঘাত করবে না। সবুজ স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলল।

ও খালাম্মা, ইফতারি দেবেন ? ইফতারি! বোরকা পরা তিনজন মহিলা চিৎকার করছে। বাসার সামনের ফুটপাতে প্রায় প্রতিদিনই দুজন মহিলা তিনটি শিশু নিয়ে ইফতার করে। পলিথিনের প্যাকেটে সামান্য মুড়ি আর ছোলা হলেই খুশি। ইফতার খেয়ে শিশু তিনটি ফোকলা দাঁত বের করে হাসে। সন্তানের হাসি দেখে মা খুশি হয়। রাতে কী খাবে চিন্তা করার সময় নেই। হাসি-খুশিই জীবন। আজ তারা আসেনি। আচ্ছা, কেন আসেনি ?

বৃষ্টি বাড়ছে। সাথে বাতাস। বারান্দা থেকে এসে সবুজ টিভি চালু করল। সংবাদে দেখল, ঘুর্ণিঝড় আসছে। প্রলঙ্করী ঘুর্ণিঝড়। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে একবার চালনা বেড়াতে গিয়েছিল। পশুর নদী পার হয়ে বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল ভাড়া করে ঘুরেছিল। ঝড়-বৃষ্টি ছাড়া শান্ত নদী সে পার হয়েছিল। সেই শান্ত পশুর নদী পানিতে উপচে পড়ছে ? সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসছে জলরাশি ! প্রলঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ে সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে ! ওই এলাকার মানুষ খাওয়া ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখে। আজ কী কেউ বৃষ্টির পানি ধরবে ? না, সবকিছু ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে ? মুহূর্তেই কী শেষ হয়ে যাবে সবকিছু ? সন্তান, বাড়ি-ঘর, গোলার ধান, খেতের ফসল, গাছ-পালা, পুকুরের মাছ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, স্বপ্নের সংসার। সবকিছু! ভেসে যাবে সমুদ্রে ? কিছুই কী থাকবে না ? শুধু কী অবশিষ্ট থাকবে চোখের লোনাজল ? যা উচ্ছ¡লতায় ঢেউ খেলবে সমুদ্রের বুকে!

সবুজের ড্রাইভারের বাড়ি লালমোহন, ভোলায়। সে একদিন বলেছিল, স্যার আমার তো বাঁচার কথা ছিল না। আল্লায় বাঁচাইছে। সবুজ বলল, সবাইকে তো আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখে। না স্যার, ছোটোবেলায় একবার আমাদের এলাকায় খুব বড়ো তুফান আইছিল। স্বাধীনের আগের বছর। রোজার মাস ছিল। ঝড়-বৃষ্টি আর সমুদ্রের পানি এসে সবকিছু ভাসায়ে নিয়েছিল। আমাদের ছিল টিনের ঘর। ভিটি পাকা। টিনের বেড়া। খুব মজবুত ঘর। আমার বাবা ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। রাত বাড়ার সাথে সাথে শাঁ শাঁ শব্দ। প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি আর তুফান। মুহূর্তেই বাড়িতে পানি ঢুকল। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকলে আমরা চকির উপর উঠলাম। চকির উপরেও পানি। আমরা তিন ভাই-বোন আর মা-বাবা, মোট পাঁচজন। বড়ো ভাই, বাবা আর মা সাঁতার জানত। আমি অল্প-অল্প জানতাম। বোন ছোটো। বাবা মাকে বলেছিল, পানি বাড়ছে, চলো উচুঁ কোথাও যাই। মা বলেছিল, অন্ধকার, হিমশীতল পানি, তুফান হচ্ছে, বাইরে গেলে তো ভেসে যাব। বাবা ঘরের ছাদে উঠতে চাইল। মা বলেছিল, কিছু পেঁয়াজ আছে। ছাদ পর্যন্ত কি পানি উঠব ? ধান, চাল, তরি-তরকারি, খ্যাতা-কাপড়, তোমার এক বেটারি রেডিও, আমার হাতের চুড়ি আর নাকফুলটা ছাদে রাখতে পারলে হতো। বাবা বলল, গরু-ছাগলের দড়ি কেটে দিই, হাঁস মুরগি ছেড়ে দিই। আল্লা যা করে, করবে। মুহূর্তেই ঘর ভরে গেল পানিতে। সাথে প্রচন্ড স্রোত। আমাদের নিয়ে বাবা-মা সাঁতার দিল। আল্লা বাঁচাইছে। বাবা, একটা বড়ো আমগাছের ডাল ধরতে পেরেছিল। ছোট বোন মার কাছে ছিল। বড়ো ভাই কোনোমতে গাছে উঠেছিল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাতের আকাশের চাঁদ, তারা কেউ সাক্ষী ছিল না। শুধু প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি আর তলোয়ারের মতো ধারালো বানের পানির স্রোত। তয়, মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল, এটাই রক্ষে!

বাবা চিৎকার করে মাকে বলেছিল, মেয়েকে শক্ত করে ধরে রাখো। গাছে ওঠো। কিন্তু, মায়ের কোনো দেখা নেই। আমি বাবার হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই তুফানের ভিতর লাফ দিয়ে বাবা আমাকে ধরেছিল। আমাকে নিয়ে অনেক কষ্টে গাছে উঠেছিল। বাবা যাদি আমাকে ধরতে না পারতো, ভেসে যেতাম। আমার মার লাশ একটি বাঁশঝাড়ের সাথে বেঁধে ছিল। কিন্তু, বোনের লাশ পাওয়া যায়নি। আমাদেরই আঠারোজন আত্মীয়-স্বজন মারা গিয়েছিল। কত মানুষ, পশু-পাখি, ঘর-বাড়ি যে রাক্ষুসে পানি টেনে নিয়েছিল, তার কোনো হিসেব নেই। আমাদের এলাকায় কিছু ছিল না। কথা বলতে বলতে ড্রাইভারের কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠল। সবুজ দেখল, ড্রাইভারের দু-নয়ন থেকে গড়িয়ে পড়ছে, আপনজন হারানোর অশ্রæধারা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবুজের ড্রাইভারের কথা মনে হলো, একবার। আচ্ছা, আম্ফান কি কোনো বড়ো ঘুর্ণিঝড় ? সমুদ্রের বড়ো বড়ো ঢেউ এসে সবকিছু কী তছনছ করে দেবে ? সবুজ শুধু তুফানের কথা শুনেছে। ঘুর্ণিঝড় আর উত্তাল সমুদ্রের জলোচ্ছ¡াসের বিষয়ে সে কিছু জানে না।

বৃষ্টি বাড়ছে। সবুজের হাত ধরে তার মেয়ে নাচছে। টবে লাগানো বারান্দার ফুল গাছগুলো বৃষ্টির ছিঁটে পেয়ে সজীব হয়ে উঠেছে। নয়নতারা গাছে সাতটি ফুল ফুটেছে। সাতটি ফুলে পঁয়ত্রিশটি পাপড়ি। বাড়ি থাকাকালীন সবুজ ফুলের বাগান করেছিল। তখন থেকেই পাপড়ি গোনার শখ। একটি নয়নতারা হাতে নিয়ে তার মেয়ে বলল, বাবা, ফুল তোমাকে কী শিখিয়েছে ? হাসো ! তোমাকে হাসি শেখায়নি ? মেয়ের হাত ধরে সবুজ বলল, এই যে হাসছি, হি... হি...। এ রকম না। সবসময় হাসি মুখ রাখতে হয়। বাবা চলো, বারান্দায় রেস করি। সবুজ মেয়েকে আদরের স্পর্শ দিয়ে বলল, চলো।

মা রোজা আছি। একটু ইফতারি দেবেন ? ও খালাম্মা...! বৃষ্টি ও বাতাসের তালে তালে ভেসে আসছে ক্ষুধার আর্তনাদ। ওরা আম্ফান কী জানে না। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় তাদের সাথি। সকল দুঃখ, কষ্ট, ক্ষুধা ওদের জন্য। পবিত্র রাতে বিধাতার রহমত ওদের উপর কি বর্ষিত হবে ? যেমন বর্ষিত হয় ঝড়, বৃষ্টি, ঘুর্ণিঝড়. সাইক্লোন, খরা, ক্ষুধা আর অভাব।

সামনের শুক্রবার জুমাতুল বিদা। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। গতবার সবুজ ছেলেকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। শুক্রবারের দিন মসজিদে জায়গা পাওয়া যায় না। সেজন্য, আজানের সাথে সাথেই রওয়ানা দিয়েছিল। পার্কের পাশে বিশাল মসজিদ। মসজিদে জায়গা না পেয়ে অনেকেই রাস্তার উপর নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে আসার পথে মসজিদের গেটে লাইন ধরে ভিক্ষুক আল্লা আল্লা করে। তাদের কারো হাতে ঘা, কারো পায়ে ঘা, কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কেউ অন্ধ, কেউ-বা অসুস্থ, কেউবা শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করে। নিঃশ্চল বেদনা ভরা শরীরের অকেজো অঙ্গই তাদের পুঁজি। এসব দেখিয়েই তারা ভিক্ষা করে। একজন ভিক্ষুকের কথা তার মনে পড়ল। ভিক্ষা নিতে নিতে বলেছিল, দ্যান ছার। আল্লায় ভালো করবো। জানের ফিতরা দ্যান, মালের যাকাত দ্যান। আর আমুনা! রহমতের মাস শেষ হইয়া যাইতাছে। যদি বাঁচি একবছর পর আবার আমু। এমন রহমতের মাস আর আইবো না। এবার মে মাসে রমজানের চারটি শুক্রবার পড়েছে। তাছাড়া মে-দিবস, বুদ্ধপূর্ণিমা, শব-ই-ক্বদর, ঈদ-উল-ফিতর সবই মে মাসে। রহমতের মাস! রমজানের শেষ শুক্রবার কী সবুজ মসজিদে যাবে ? ছোটোবেলা হুজুর বলেছিল, মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে, প্রতি কদমে দশটা করে নেকি আমলনামায় লেখা হয়। তার খুব ইচ্ছে ছেলের হাত ধরে মসজিদে যেতে।

গত বছরের ভিক্ষুক কি এবার শুক্রবারে মসজিদের গেটে দাঁড়িয়ে রহমতের মাসের কথা বলে? সবুজের ছেলে বড়ো হচ্ছে, ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে বাবাকে বলল, বাবা এবার মসজিদে যাওয়ার দরকার নেই। ছেলের মাথায় হাত রেখে সবুজ বলল, ঠিক আছে বাবা, বাসায় নামাজ পড়লেই হবে। করোনাভাইরাস গেলে আবার মসজিদে যাওয়া যাবে। সবুজের ছোটো মেয়ে কেজিতে পড়ে। সে বলল, বাবা করোনাভাইরাস কী ? কবে যাবে ? আমাদের পৃথিবীতে করোনাভাইরাস কে দিল ? বলো না বাবা ? সবুজ কিছু না বলে মেয়েকে কোলে তুলে নিল। আচ্ছা বাবা, তুমি শেভ করোনি কেন ? তোমার মুখটা মনে হচ্ছে ক্যাকটাস ল্যান্ড। বলো, করোনা কে দিয়েছে ? বাবা, আমরা কবে নিচে যেতে পারব ? কবে স্কুলে যেতে পারব ? খুব বোরিং। আমার সাথে কেউ খেলে না। সবাই ল্যাপটপ আর মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। আমার পুতুলগুলোই শুধু ভালো। ওরা আমার সাথে খেলে। আমার সাথে কথা বলে।

মুষল ধারে বৃষ্টি আর বাতাস। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া শুরু হলো। অশান্ত বাতাস আর বৃষ্টিতে বারান্দা ভিজে যাচ্ছে বারবার। সবুজ আর তার মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। তার মেয়ে খুব আনন্দ করছে। কতদিন হলো, সবুজ বৃষ্টিতে ভেজেনি ! ভ্যাপসা গরম কেটে গেছে। বাড়িটির প্রাচীরঘেঁষা বড়ো কামিনি গাছে থোকা থোকা ফুল। কামিনি ফুলের গন্ধভরা ভেজা নির্মল বাতাসের কোমলতায় বাসাটি উল্লাসে ফেটে পড়ছে।

রান্নাঘর থেকে সবুজের স্ত্রী ছেলেকে ডেকে বলল, দরজা-জানালা বন্ধ করো। তোমার বাবা কই ? বারান্দাতেই থাকবে নাকি ? ছেলে দড়াম-দড়াম করে জানালা-দরজা বন্ধ করছে। মেয়ে বলল, চলো বাবা, ভেতরে যাই। মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। সবুজের ছেলে বলল, বাবা টেবিলে আসো। ইফতার করো। বাইরে থেকে ভেসে আসছে, মা..., ওমা... একটু ইফতার দেবেন ...? রোজা আছি...। মসজিদের আজান, অশান্ত বাতাস আর প্রচণ্ড বৃষ্টি ভেদ করে বারবার ভেসে আসছে, খালাম্মা ..., ও খালাম্মা, ... স্যার ..., ও স্যার... একটু ইফতার দেবেন ? একটু ইফতার...!