সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ

04 Sep 2021, 02:59 PM জন্মদিন শেয়ার:
সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ



উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লুতফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তার মায়ের নাম বেগম মৌলুদা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায়। তাঁরা পাঁচ বোন ফরিদা ইয়াসমিন, ফৌজিয়া ইয়াসমিন, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন, সবাই সংগীতের সঙ্গে যুক্ত।

সাবিনা ইয়াসমিন তার বাবার চাকরির সূত্রে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। শৈশব থেকেই তিনি গানের পরিবেশে বেড়ে ওঠেছেন। তার বাবা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। আর তার মা মুর্শিদাবাদে সে সময়ের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে গান শিখতেন। তার বড়ো বোন ফরিদা ইয়াসমিন ও ফৌজিয়া ইয়াসমিন দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিখতেন। তখন তিনি ও নীলুফার ইয়াসমিনও তাদের সাথে বসতেন। তার মা তাকে তালিমে সহায়তা করতেন এবং হারমোনিয়াম বাজিয়ে সঙ্গ দিতেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তার শেখা প্রথম গান ছিল 'খোকন মনি সোনা'। এছাড়া মায়ের কাছ থেকে তিনি সুপ্রীতি ঘোষের কয়েকটি গান শেখেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চে গান করেন। পরবর্তীকালে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর শাস্ত্রীয় গানের তালিম নিয়েছেন। সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৬৪ সালে বেতারে ছোটোদের গানের অনুষ্ঠান 'খেলাঘর'-এ নিয়মিত অংশ গ্রহণ করতেন। এই অনুষ্ঠান থেকে তার প্রথম সম্মানী ছিল ১০ টাকা এবং অনুষ্ঠানে তার সঙ্গী ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। শিশুশিল্পী হিসেবে তারা দুজন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের কাছ থেকে পুরস্কার অর্জন করেন। সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন একদিন প্রতিবেশীর বাড়িতে প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদ আসেন। আলতাফ মাহমুদ তখন চলচ্চিত্রের সংগীত ও সুরায়োজন করতেন। সাবিনা ইয়াসমিন ও মা তখন আলতাফ মাহমুদকে তাকে চলচ্চিত্রের গানের সুযোগ দেওয়া অনুরোধ করেন। এরপর আলতাফ মাহমুদ তাকে ১৯৬৭ সালে 'আগুন নিয়ে খেলা'  চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক গান:  'জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো', 'সব ক’টা জানালা খুলে দাও না', 'ও আমার বাংলা মা', 'মাঝি নাও ছাড়িয়া দে', 'সুন্দর সুবর্ণ' ও 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার' প্রভৃতি। সাবিনা ইয়াসমিন সংগীতে অবদানের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন অনেক বার। তিনি একুশে পদক,  স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মোট ১৪

বার, বাচসাস পুরস্কার মোট ৬বার, বিএফজেএ পুরস্কার, উত্তম কুমার পুরস্কার, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে 'ডক্টরেট' ডিগ্রি লাভ, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার, এবং নিউইয়র্কের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে  ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার, দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবের আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন। প্রখ্যাত এই শিল্পীর জন্মদিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।


লেখা: শহিদুল ইসলাম এমেল