এ-সময়ে সাকিব আল হাসান

20 Sep 2021, 12:09 PM ক্রীড়াভুবন শেয়ার:
এ-সময়ে সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসান নামটি বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে সুপরিচিত একটি নাম। যে নামের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ গর্বিত। তিনি বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। তিনি ২৮ অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে টেস্ট ও টি-২০ আন্তর্জাতিক সংস্করণে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত সাকিবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার বলে গণ্য করা হয়। ১০ বছর ধরে শীর্ষ অলরাউন্ডারের রেকর্ডের অধিকারী সাকিব আল হাসান এখনো একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ফরমেটে সর্বোচ্চ র‌্যাংকিং ধরে রেখেছেন।

২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে সাকিব আল হাসানের অভিষেক হয়। একই ম্যাচে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা ও মুশফিকুর রহিমের। সাকিব ও রেজাকে তখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হতো। 

সাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি’র একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সাকিব ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইসিসির খেলোয়াড়দের র‌্যাংকিং অনুসারে টেস্ট, ওডিআই ও টি-২০ প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একনম্বর অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ রান করার গৌরব অর্জন করেন এবং ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত [২১৭] রান সংগ্রহ করেন। সাকিব টি-২০-তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান পূর্ণ করেন। এছাড়া দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি-২০-তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন। ২০১৯ সালের জুনে তিনি দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে মাত্র ১৯৯ ম্যাচে ৫,০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। 

সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডারের মধ্যে একজন, যিনি একই সঙ্গে দীর্ঘদিন তিন ফরমেটের [টেস্ট, ওয়ান-ডে ও টি-২০] ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ এবং নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার হিসেবে ছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রেকর্ড শুধুমাত্র সাকিবের আল হাসানের।

এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেটও সাকিবের। ওয়ানডেতেও সবচেয়ে বেশি উইকেটের লড়াইটা করেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট ২৩৫টি, মাশরাফির ২৩৭টি। টেস্টে সাকিবের উইকেট ১৮৮টি। টেস্টে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসটিও তার। টেস্টে ৯ প্রতিপক্ষের সবার বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া ইতিহাসের চতুর্থ বোলার সাকিব আল হাসান। ক্রীড়া-পাগল এক পরিবার থেকে উঠে এলেও সাকিবের খেলোয়াড় হতে চাওয়া সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে একে একে সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে সাকিব বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি তারকার একজন হয়ে উঠেছেন। আইপিএলের মতো টি-২০ লিগের সেরা তারকাদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে সাকিবকে কিনে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আইপিএলের নিলামে সাকিবকে ২ কোটি রুপিতে কিনে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। আইপিএল ছাড়াও সাকিব অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, পাকিস্তানের পিএসএল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, শ্রীলঙ্কার এসএলপিএল লীগগুলোতে খেলেছেন। এর মধ্যে সিপিএলে তার ৬ রানে ৬ উইকেট টি-টোয়েন্টির সেরা বোলিংগুলোর একটি হয়ে আছে। সাকিব ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটেও খেলেছেন। এভাবেই বাংলাদেশের এ-সময়ের সেরা আইকনদের একজন সাকিব বিশ্ব ক্রিকেটেও বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন। 

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকার হোটেল রূপসী বাংলা’য় তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। যেখানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিভিন্ন খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি দুই কন্যাসন্তান এবং এক পুত্রসন্তানের জনক।