সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা আমার মা -তাসনিম এ জান্নাত অর্থী

11 Oct 2021, 12:08 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা আমার মা  -তাসনিম এ জান্নাত অর্থী

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও আকর্ষণীয় চেহারা এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোণা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন তাসনিম এ জান্নাত অর্থী তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত আনন্দভুবনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

আনন্দভুবন : শুরুতেই জানতে চাই, সংবাদ উপস্থাপক হয়ে ওঠার গল্পটা কী ছিল ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : আসলে আমার জীবনে পরিকল্পনা করে কখনোই কিছু হয়নি। যা-ই পরিকল্পনা করেছি সব উল্টো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে যুক্ত হওয়াটাও একেবারে হঠাৎ করেই। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিজে সাবলম্বী হওয়ার একটা ইচ্ছা থেকে এই মাধ্যমে যুক্ত হওয়া। আমি সম্ভবত ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে চ্যানেল ২৪-এ যোগদান করি, মাঝখানে বছর দুয়েক দেশ টিভিতে কাজ করি তারপর যখন নিউজ ২৪-এর আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার শুরু হয়, তখন আমি নিউজ ২৪-এ যোগদান করি এবং এখন পর্যন্ত আছি। সংবাদ উপস্থাপন এখন শুধুমাত্র আমার জন্য পেশা নয়, সবচেয়ে ভালোবাসার একটা জায়গা। 

আনন্দভুবন : পরিবার থেকে কি কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন, কার সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : শুরুর দিকে আমার ফুলটাইম চাকরির ব্যাপারে পরিবার থেকে কিছুটা আপত্তি ছিল। কারণ, তাদের ধারণা ছিল চাকরিতে এত সময় দিলে আমার পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমি দু’দিকেই ভালোভাবে ব্যালেন্স করতে পেরেছি তখন অনেক বেশি উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছি পরিবারের কাছ থেকে। বিশেষ করে আমার এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা আমার মা। 

আনন্দভুবন : প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই।

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : সংবাদ উপস্থাপন করা অনেক বড়ো একটা দায়িত্ব। পুরো নিউজ-রুমের অনেক পরিশ্রমের ফসল যা হাজারো দর্শকের সামনে তুলে ধরেন একজন উপস্থাপক। তাই দায়িত্বের ভারটাও অনেক বেশি। প্রথম সংবাদ পাঠের সময় আমার বয়স যেহেতু অনেক কম ছিল, তাই নার্ভাসও ছিলাম একটু বেশি। তবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্রথম দিনের সংবাদ উপস্থাপন করতে সক্ষম হই।

আনন্দভুবন : একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন। কোন জিনিসগুলো জানা প্রয়োজন ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : আমি প্রতিদিনই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি। শেখার চেষ্টা করি। তাই নতুনদের পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য নিজেকে এখনো মনে করি না। তবে অনেক বছর যাবৎ যেহেতু সংবাদমাধ্যমে কাজ করছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সুস্পষ্ট উচ্চারণ এবং সাবলীল বাচনভঙ্গি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি পারিপার্শিক বিষয়ে জানা, জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্প নেই।

আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপনা করতে গিয়ে কোনো বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন কি ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : লাইভ অনএয়ার বিষয়টাই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। প্রতিনিয়ত নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তা সামাল দিতে পারাটাই একজন উপস্থাপকের দক্ষতা। 

আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কি ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : আমি প্রথম চ্যানেল ২৪-এ কাজ শুরু করেছিলাম। সেখানে বিবিসি, সিএনএন-এর ট্রেইনারদের কাছে দুই মাসের একটা ট্রেইনিং করার সুযোগ হয়েছিল, যা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এছাড়া নিজস্ব চর্চা তো আছেই। 

আনন্দভুবন : এই পেশায় ছেলেদের থেকে মেয়েদের প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়ে থাকে, একথা মানেন কি ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : এই বিষয়টাই আমার কাছে অবান্তর। আমি সবসময় সম-অধিকারে বিশ্বাসী। আমার আশেপাশেও এরকম পরিবেশই পেয়েছি যেখানে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

আনন্দভুবন : সম্প্রতি আপনি ‘পায়ের ছাপ’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সে সম্পর্কে কিছু বলুন-

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : আসলে হঠাৎ করেই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে আমি যতগুলো সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি মোটামুটি সবগুলো ছিল বাণিজ্যিক ধারার। যার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তাই আমার দর্শক-শ্রোতা এবং শুভাকাক্সক্ষীদের জন্য এমন একটা কাজ দিয়ে শুরু করতে চেয়েছি যেখানে ব্যক্তি অর্থীর সঙ্গে তারা কিছুটা মিল খুঁজে পাবে। 

আনন্দভুবন : অবসরে কি করেন এবং কোথায় বেড়াতে যেতে পছন্দ করেন ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : অবসর যেহেতু খুব কম পাই তাই পুরোটা সময় পরিবার এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করি। আর ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে জায়গার চেয়ে সাথের মানুষের প্রাধান্য বেশি। পছন্দের কেউ সঙ্গে থাকলে যেকোনো জায়গাই সুন্দর। 

আনন্দভুবন : প্রিয় রং কি ?

তাসনিম এ জান্নাত অর্থী : সাদা রং আমাকে সব সময় অনেক বেশি আকর্ষণ করে। এছাড়া কোনো এক কারণে বেগুনি রং ছাড়া আর সব রংই ভালো লাগে। 

সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেল