সাদা রং শীতল রাখবে ঘর

দিন বদলের পরিক্রমায় প্রতিমুহূর্তে বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিচ্ছে একের পর এক বিকল্প পদ্ধতি। বিজ্ঞানের এই উপহার দিন দিন জীবনকে সহজ করে তুলছে। বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রায় এবার যুক্ত হলো আরো একটি বিকল্প পদ্ধতি। আর সেটি হচ্ছে এসি ছাড়া আপনার ঘর থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এসির বিকল্প হিসেবে তৈরি করেছেন সাদা রং। তাও এটি বিশ্বের সবচেয়ে সাদা রং। এই রং ঘরে এসির বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

আর এটি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পুর্দু ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। এই রং এতটাই চোখ ধাঁধানো যে ‘সবচেয়ে সাদা’ হিসেবে এর নাম উঠেছে গিনেজ বুকে। শুধু এখানেই শেষ নয়। গবেষণায় দেখা গেছে এই রং বাড়ির ছাদ ও দেয়ালে ব্যবহার করা হলে তা সূর্যের তাপ ও ইনফ্রারেড প্রতিফলিত করবে সবচেয়ে বেশি। যার ফলে এয়ারকন্ডিশনার চালাতে হবে কম, বাঁচবে বিদ্যুৎ খরচ।

যে গবেষক দলটি এই রং আবিষ্কার করেছেন, তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জিউলিয়ান রুয়ান। দলের অন্যান্য সদস্যরাও তাঁর ছাত্র।

এই আবিষ্কার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের রুয়ান বলেন, ‘সাত বছর আগে আমরা এই গবেষণা শুরু করি। গবেষণা শুরুর প্রথম থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি রং আবিষ্কার করব, যা একইসঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’

সাদা রং সূর্যের বিকিরণ প্রতিফলিত করে। ফলে, কোনো ভবনের বাইরের দেওয়ালে এই রং ব্যবহার করা হলে তার ভেতরের পরিবেশ থাকে ঠান্ডা। এ-কারণে বিশ্বের গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলসমূহে ভবনের বাইরের দেওয়ালে সাদা রং ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে বাজারে যেসব সাদা রং পাওয়া যায়, সেগুলো সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সূর্যকিরণ প্রতিফলিত করতে সক্ষম ; কিন্তু রুয়ানের দাবি, তাদের আবিষ্কৃত সাদা রঙের প্রতিফলন ক্ষমতা ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে নতুন আবিষ্কৃত রংটির বিশেষত্ব হলো এটি ইনফ্রারেড তাপও প্রবেশ করতে দেবে না। যে-কারণে ছাদে ও দেয়ালে এ রং ব্যবহার করা হলে ঘরের ভেতরটা প্রাকৃতিকভাবেই শীতল থাকবে। গবেষক দলটি পরীক্ষা করে দেখেছেন একহাজার বর্গফুট এলাকায় এ রঙের প্রলেপ দেওয়া হলে তা এয়ারকন্ডিশনারের প্রায় ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বাঁচাবে। রুয়ান আরো জানান, ‘এরই মধ্যে ৪৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার একটি এলাকার ভবনের বাইরের দেওয়ালে এই রং ব্যবহার করা হয় এবং রং ব্যবহারের পর সেই ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি কমে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনার রুমটি শীতল রাখার ক্ষেত্রে এই রং এয়ার কন্ডিশনারের চেয়ে বেশি কার্যকর।’ পৃথিবীর সবচেয়ে সাদা রং হিসেবে ইতোমধ্যে এটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছে এবং রংটির পেটেন্ট পেতে গবেষকেরা আবেদন পত্রও জমা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, কোনো একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে রংটি বাজারজাত করতে পারলে বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার বাড়বে।