শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ

18 Oct 2021, 06:00 AM জন্মদিন শেয়ার:
শেখ রাসেলের জন্মদিন আজ



আজ ১৮ই অক্টোবর। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের জন্মদিন। শেখ রাসেল ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের আজকের দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড়ো সন্তান বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোবার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটি তখন ছিল একতলা। ওই বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে থাকতেন শেখ হাসিনা। সেই ঘরে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর রাত দেড়টায় জন্ম হয় শেখ রাসেলের। বঙ্গবন্ধু তখন রাজনৈতিক সফরে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। 


বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ ও ইতিহাসবেত্তা বার্ট্র্যান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বার্ট্র্যান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে শোনাতেন। গল্প শুনে শুনে বঙ্গমাতা বার্ট্র্যান্ড রাসেলের এতই ভক্ত হয়ে ওঠেন যে, তিনি নিজের ছোটো সন্তানের নাম রাখেন রাসেল। 


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ শিরোনামে রাসেল-কে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন। শেখ হাসিনার স্মৃতিকথা থেকে আমরা শেখ রাসেল সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি : 


রাসেলের জন্মের দেড় বছর পর ছয় দফা আন্দোলনের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবরণ করতে হয়। পরিবারের সদস্যরা পনের দিন পরপর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যেতে পারতেন। সবার সাথে রাসেলও যেত। রাসেল তার বাবা-কে ছেড়ে আসতে চাইত না। সেখানে থাকতে চাইত। ও-কে বোঝানো হতো ওটা বঙ্গবন্ধুর বাসা। তিনি সেখানে থাকেন। আর কেউ সেখানে থাকতে পারবে না। 


ছোট্ট রাসেল চলাফেরায় খুব সাবধানী কিন্তু বেশ সাহসী ছিল। কোনো কিছুতে সহজে ভয় পেত না। কালো কালো বড়ো পিপড়া দেখলে ধরতে যেত। একবার একটি কালো পিপড়া রাসেলের আঙুলে কামড়ে দিল। ছোট্ট আঙুল কেটে রক্ত বের হলো, ফুলে ঢোল হয়ে গেল। এরপর থেকে রাসেল আর কালো বড়ো পিপড়া ধরতে যেত না।  তবে, দেখলে বলত ‘ভুট্টো’। কালো বড়ো পিপড়ার ‘ভুট্টো’ নামটি রাসেল নিজে থেকেই দিয়েছিল।  


বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব কবুতর পুষতেন, সকালে রাসেল-কে কোলে নিয়ে কবুতর-কে খাবার দিতেন। ছোট্ট রাসেল কবুতর ভালোবাসত। বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতেও কবুতর পোষা হতো। বাড়িতে কবুতরের মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল। বিশেষ করে, সকালে পরোটার সাথে কবুতরের মাংসের ভুনা খেতে বাড়ির সবাই খুব পছন্দ করতেন। শরীরে রক্ত হবে, এই চিন্তা থেকে ছোটো শিশুদের কবুতরের মাংসের স্যুপ খাওয়ানো হতো। কিন্তু রাসেল-কে কেউ কোনোদিন কবুতরের মাংস খাওয়াতে পারেনি। ছোট্ট রাসেল কী করে যেন টের পেত, ও-কে কবুতরের মাংস বা কবুতরের মাংসের স্যুপ খেতে দেওয়া হয়েছে। ও খেতো না।


আম্বিয়ার মা নামে একজন মহিলা বাড়িতে বঙ্গমাতার কাজে সহযোগিতা করতেন। তিনি রাসেলেকে খুব আদর করতেন এবং মাঝে মাঝে ও-কে খাওয়াতেন। রাসেল-কে খাওয়ানো খুব কষ্টকর ছিল। এমনি খাবার খেতে চাইত না। তবে, রান্নাঘরে যখন সবাই খেতে বসত, তখন পাশের ঘরে পিঁড়ি পেতে বসে লাল ফুল আঁকা থালায় করে বাড়ির সহকারীদের সাথে ভাত খেতে পছন্দ করত। 



স্বাধীনতার পর রাসেল-কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি করা হয় এবং তাকে পড়ানোর জন্য একজন ভদ্র মহিলাকে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু রাসেল-কে পড়ানো খুব সহজ কাজ ছিল না। ও শিক্ষয়েত্রীর কথা শুনবে কী, শিক্ষয়েত্রী-কেই উল্টো ওর কথা শুনে চলতে হতো। রাসেলের শর্ত ছিল, প্রতিদিন দুটো করে মিষ্টি খেতে হবে শিক্ষয়েত্রীকে। মিষ্টি না খেলে সে পড়বে না। তা ছাড়া ওর শিক্ষয়েত্রীর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, সে দিকে সবসময় ওর খুব খেয়াল থাকত।


রাসেলের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। বড়ো দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এলে রাসেল যুদ্ধের গল্প শোনার জন্য বায়না ধরত এবং খুব মনোযোগ দিয়ে শুনত। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে রাসেল গ্রামের শিশুদের সাথে খেলা করত। গ্রামের ছেটো ছোটো শিশুদের ডামি বন্দুক বানিয়ে দিত রাসেল। সেই বন্দুক হাতে তাদের প্যারেড করাত। তাদের খাবার কিনে দিত। চকলেট কেনার জন্য টাকা দিত। এবং তাদের জামা-কাপড়ও ঢাকা থেকে কিনে দেওয়া হতো। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য বঙ্গমাতা জামা-কাপড় কিনে জমিয়ে রাখতেন। টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার সময় সেগুলো নিয়ে যেতেন। 


ছোটো হলেও ওই বয়সেই রাসেলের নিজের আলাদা ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছিল। নিজের পছন্দ-অপছন্দ তৈরি হয়েছিল। নিজের পছন্দের ওপর খুব বিশ্বাসও ছিল ওর। স্বাধীন মত নিয়ে চলতে পছন্দ করত। অতো ছোটো একজন মানুষের চরিত্রের দৃঢ়তা দেখে সবাই খুব অবাক হতো। বড়ো হয়ে রাসেল যে বিশেষ একজন মানুষ হয়ে উঠবে এতে কারো কোনো সন্দেহ ছিল না। জাতির শত্রুরাও বোধহয় এটা জানতে পেরেছিল। তাই অতো ছোটো একজন শিশুকে অমন নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। 


১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পনেরই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল ছোট্ট রাসেলের প্রাণ। মা-বাবা-ভাই-চাচা-ভাইয়ের স্ত্রীদের লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। মৃত্যুর আগে রাসেল মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল। খুনিরা তাকে গুলি কেরে বলেছিল, ‘যা তোকে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।’


তবে, বুদ্ধিমান, স্বাধীনচেতা, পরোপকারী, প্রকৃতিপ্রেমী শহিদ শেখ রাসেল বাঙালির স্মৃতি থেকে কখনও মুছে যাবে না। বাঙালি-হৃদয়ে রাসেলের স্মৃতি চির-অম্লান। রাসেলের জন্মদিনে আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে অজস্র ফুলের শুভেচ্ছা।