আগে থেকেই আগ্রহ ছিল -সাবিহা নিগার দৃষ্টি

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও আকর্ষণীয় চেহারা এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোণা যে ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন চ্যানেল ২৪-এর সাবিহা নিগার দৃষ্টি তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত আনন্দভুবনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো...

আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আনন্দভুবন : শুরুতেই সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার গল্পটা জানতে চাই ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার গল্পটা হচ্ছে- ২০০৬-এ হঠাৎ করেই মনে হলো যে পড়াশোনা শেষে আমি কিছু একটা করি। সংবাদ উপস্থাপনার বিষয়ে আগে থেকেই আগ্রহ ছিল। আমার বাবার পছন্দের প্রফেশন এটা। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় দেখলাম জবস এ-ওয়ান অর্গানাইজেশনে নিউজ প্রেজেন্টেশনের কোর্স করানো হয়। সেটা সম্পর্কে আগে আমার কোনো ধারণা ছিল না। পত্রিকার সংবাদটা দেখে তাদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করে সেখানে ভর্তি হয়ে যাই। সেখানে দু’মাসের একটা কোর্স করি। কোর্স করতে করতেই আমি কয়েকটা জায়গায় সিভি জমা দিই। প্রথমে আমার এনটিভি থেকে ফোন আসে এবং সেখানে চাকরি হয়ে যায়। এনটিভিতে নিউজের ড্রাইরান করতে করতে সিএসবি নিউজ থেকে আমার অফার আসে এবং ২০০৬-এ সিএসবি নিউজে যোগদান করি। সিএসবি নিউজেই আমার ক্যারিয়ার শুরু। আসলে আমি এনটিভিতে যোগদান না করে সিএসবি নিউজে যোগদান করি আমার বাসা কাছে হওয়ার কারণে। আমি সিএসবি নিউজে ছিলাম ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত। তারপর পলিটিক্যাল কারণে সিএসবি নিউজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮-এ আমি একুশে টিভিতে যোগদান করি। একুশে টিভিতে কাজ করতে করতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে আমি যোগদান করি চ্যানেল ২৪-এ। চ্যানেল ২৪-এর আনুষ্ঠানিক সম্প্রচারের প্রথম দিন থেকেই আমি কাজ শুরু করি এবং আপনাদের দোয়ায় সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে এখন পর্যন্ত কর্মরত আছি।
আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ইচ্ছেটা কি ছেলেবেলা থেকেই ছিল ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : ছেলেবেলায় সংবাদ উপস্থাপনাটা আসলে সেভাবে বুঝতাম না। টিভিতে অনেকের খবর পড়া দেখতাম। যাদের উপস্থাপনা ভালো লাগত তাদের উপস্থাপনা দেখে সংবাদ উপস্থাপনা কি সেটা জানা এবং সেটা দেখে একটা ইন্টারেস্ট গ্রো করেছিল যে আমি চাইলে এটা হতে পারব কি-না সংবাদ উপস্থাপনায় আমি আসতে পারবো কি-না। সেক্ষেত্রে আমার ফ্যামিলি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম, ডিবেটিং করতাম, যেটা আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। আসলে সংবাদ উপস্থাপক প্রফেশন শখ থেকে আর এখন প্যাশন যেটাই বলেন না কেন ওটাই হয়ে গেছে আর কি।
আনন্দভুবন : পরিবার থেকে কি কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন? কার সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : পরিবার থেকে বলতে গেলে আমার বাবা-মা-বোনের সহযোগিতা আর যখন আমি সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করি তখন সবার সাপোর্ট আমি পেয়েছি। স্পেশালি আমার মার কাছ থেকে। উনি যেভাবে দরকার সেভাবেই আমাকে সহযোগিতা করে গেছেন। আমার বাবা এখন বেঁচে নেই উনিও সবসময় সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। ইনফ্যাক্ট আমার ফ্যামিলি আমার ফ্রেন্ড, নিউজের কলিগ তাছাড়া আমি একজন ব্যাংকার। ব্যাংকের কলিগরাও আমার নিউজের জন্য এনকারেজ করেন, খুব পছন্দ করেন। সবাই আমাকে ইন্সপায়ার করেন।
আনন্দভুবন : প্রথম সংবাদ পাঠের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : আমি ২০০৬-এ প্রথম যখন সংবাদ পাঠ করার জন্য সেটে উঠবো তখন আমার হাত-পা কাঁপছিল। তখনকার অবস্থার অভিজ্ঞতা আমি এখন বলে বোঝাতে পারবো না। সেদিন অন্যরকম একটা ভালো লাগা, ভয়, আতঙ্ক, এক্সাইটমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে আমি উপস্থাপনাটা শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবেই আমি সেদিন শেষ করতে পেরেছিলাম। হাসি...
আনন্দভুবন : একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কী কী গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন ? কোন জিনিসগুলো জানা প্রয়োজন।
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : ভালো সংবাদ উপস্থাপনা বলতে কিছু নেই তবে সংবাদ উপস্থাপনা একটা ভালো কাজ। সংবাদ উপস্থাপনা করার জন্য যে কোয়ালিটি থাকতে হবে সেটা হচ্ছে সংবাদ বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। আমি যে সংবাদটা পড়ছি সেটা সম্পর্কে আমার জ্ঞান কতটুকু আছে, সেটা সম্পর্কে আমি কতটুকু জানি সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি। আর আমি কি ডেলিভারি দিচ্ছি সেটা আমার জন্য সবচেয়ে ইমপোর্টেন্ট।
আনন্দভুবন : সংবাদ উপস্থাপনার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কী ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : হ্যাঁ, আমি ২০০৬-এ জবস এ-ওয়ান থেকে সংবাদ উপস্থাপনার জন্য একটা কোর্স করি। তারপর আমি যখন সিএসবি নিউজ-এ যোগদান করি তখন আমাদের টিমের অনেকগুলো ট্রেনিং-এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে যেমনÑ বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, এনডিটিভি, ইএসপিএন, আসতক এবং মিডিয়া গুরুর যে অর্গানাইজেশন আছে সেখান থেকে আমাদের ট্রেনিং নিতে হয়েছে।
আনন্দভুবন : এখন যারা নতুন আসছে তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন ?
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : যদি বলতেই হয় তাহলে নতুনদের আমি বলবো পড়াশোনা ঠিকমতো করে, সংবাদ সম্পর্কে জেনে, সংবাদ উপস্থাপনাকে ভালোবেসে তার পরেই সংবাদ উপস্থাপনা পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে।
আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সাবিহা নিগার দৃষ্টি : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেল