এইডসের কারণ ও লক্ষণ

22 Dec 2021, 12:09 PM স্বাস্থ্যভুবন শেয়ার:
এইডসের কারণ ও লক্ষণ


১ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘বৈষম্যের অবসান ঘটাও। এইডস এবং মহামারি হটাও’ [এন্ড ইকুয়ালিটিস, এন্ড এইডস, এন্ড প্যানডেমিকস]। ১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্বে এ দিবসটি পালন করে আসছে। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এইডস [অওউঝ] পূর্ণরূপ : অপয়ঁরৎবফ ওসসঁহড় উবভরপরবহপু ঝুহফৎড়সব বা ‘অর্জিত প্রতিরক্ষার অভাবজনিত রোগ লক্ষণসমষ্টি’।
এইচআইভি [ঐওঠ] পূর্ণরূপ : ‘ঐঁসধহ ওসসঁহড়ফবভরপরবহপু ঠরৎঁং’ তথা ‘মানব প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস’ নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ লক্ষণসমষ্টি, যা মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা তথা ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং এই রোগের কারণে শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটতে পারে।
ইউএন এইডস-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭.৯ মিলিয়ন। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৩৬.২ মিলিয়ন। মোট আক্রান্তের ১৮.৮ মিলিয়ন নারী এবং ১.৭ মিলিয়ন শিশু। শুধু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১.৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১.৬ মিলিয়ন। এসময় এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার মানুষের। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৬ লাখ ৭০ হাজার এবং শিশু ১ লাখ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৬ হাজার ৬০৬ জন।

এইডসের লক্ষণ ও উপসর্গ
* শুকনো কাশি * নিমোনিয়া * কোনো কাজ না করেও ক্লান্তি * এক সপ্তাহেরও বেশি যদি ডায়েরিয়ার সমস্যা হয় * অবসাদ * নার্ভের সমস্যা * অস্বাভাবিক দ্রুত ওজন হ্রাস * বারবার জ্বর আসা * ঘাড়ে বা বগলের কাছে ফোলাভাব * গলা খুশখুশ * স্মৃতি হারিয়ে ফেলা।

এইডস কীভাবে ছড়ায়
১. এইচআইভি সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে ভ্যাজাইনাল বা অ্যানাল সেক্সের মাধ্যমে। সমকামী পুরুষ যারা কোনো সুরক্ষা ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করেন তাদের মধ্যে এই আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কারো সঙ্গে অরক্ষিত [কনডম ব্যবহার না করে] যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে।
২. অসুরক্ষিত বা অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সূচ ব্যবহার করলে।
৩. ট্যাটু করলে বা নাক/কান পিয়ারসিং করলে। যদি এই যন্ত্রগুলো স্টেরিলাইজ না করা হয় তাহলে এই আশঙ্কা থাকে।
৪. কোনো সম্ভাব্য মায়ের যদি এইচআইভি পজিটিভ হয় তাহলে জন্মের পর তার সন্তানের রক্তেও এই ভাইরাস থাকতে পারে।
৫. স্তন থেকে দুধ পানের সময়।
৬. শিশুর খাবার তাকে দেওয়ার আগে নিজে চিবিয়ে দেওয়ার জন্য।
৭. এইচআইভি পজিটিভ আছে এমন কেউ যদি আপনাকে রক্ত দেয় তাহলেও এই ভাইরাস [এইডসের প্রধান লক্ষণ] আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এইডস কীভাবে ছড়ায় না
দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এইডস ছড়ায় না । এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, একই পাত্রে খাবার খেলে, পানি খেলে, একসঙ্গে ঘুমালে, মশা ও কীট-পতঙ্গের কামড়ে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে, তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।

এইডসের পরীক্ষা
এইচআইভি বা এইডসের কোনোরকম লক্ষণও যদি শরীরে দেখা যায়, সেক্ষেত্রে দেরি না করে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। যাতে অন্য কারো মধ্যে এই জীবাণু সংক্রমণ না হয়, সেজন্য প্রাথমিক স্তরেই পরীক্ষা প্রয়োজন। ইদানিং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ‘ফোরথ জেনারেশন এইচআইভি টেস্ট’ করানো সম্ভব। আগে শুধুমাত্র এইচআইভি-র অ্যান্টিবডি শরীরে রয়েছে কি-না তা জানা যেত পরীক্ষার মাধ্যমে ; তবে এখন এইছআইভি অ্যান্টিবডির সঙ্গে ঢ়২৪ ধহঃরমবহং-ও ধরা যায় যার ফলে অনেক আগেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

এইডসের চিকিৎসা
এইচআইভির চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত যদি দেখা যায় যে এইছআইভি-তে আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব একটা কম নয়, সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। নানা ধরনের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয় রোগীর ওপর। যতক্ষণ না পর্যন্ত রোগীর রক্তে এইচআইভি-র জীবাণুর আর কোনো অংশবিশেষও না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ওষুধের প্রয়োগ করা হয়। তবে আইচআইভি বা এইডসের লক্ষণ ধরা পড়তে যদি বেশ অনেকটা সময় লেগে যায় সেক্ষেত্রে অন্য ধরনের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যেহেতু এইচআইভি রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে, কাজেই অন্য ধরনের জীবাণু সংক্রমণ যেমন হেপাটাইটিস বা যক্ষ্মার মতো মারাত্মক অসুখও শরীরে দানা বাঁধতে পারে। এছাড়া নার্ভের সমস্যা, হার্টের সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো কঠিন সমস্যাও দেখা দিতে পারে অনেক সময়ে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।