সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন আজ

27 Dec 2021, 03:32 PM জন্মদিন শেয়ার:
সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন আজ

ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, অনুবাদক, চিত্রনাট্য রচয়িতা, সংলাপ লেখক ও গীতিকার সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। সৈয়দ শামসুল হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম।
সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সৈয়দ শামসুল হকের পিতার ইচ্ছা ছিল তাকে ডাক্তারি পড়াবেন। শেষ পর্যন্ত বাবার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। পিতার ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে তিনি ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে বম্বে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেক থাকার পর ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীসময়ে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। সৈয়দ শামসুল হক বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের সক্রিয় একজন সাহিত্যিক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে প্রকাশিত তার গল্পটির নাম ‘উদয়াস্ত’। এভাবেই ছেলেবেলা থেকেই প্রতিভা আর সাহিত্যগুণের পরিচয় দিয়ে গেছেন সৈয়দ শামসুল হক। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।
সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হল: 'নীল দংশন', 'খেলারাম খেলে যা', 'বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ', 'তুমি সেই তরবারি', 'নিষিদ্ধ লোবান'। ছোটদের জন্য লেখা 'সীমান্তে সিংহাসন', 'আবু বড় হয়' ও 'হাডসনের বন্ধু' পেয়েছে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। তার অতুলনীয় কাব্যনাট্য 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়', 'নূরলদীনের সারাজীবন' ইত্যাদি। এছাড়া ম্যাকবেথসহ বিশ্বসাহিত্যের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনাও বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিনি।
সৈয়দ শামসুল হক প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে বিয়ে করেন। তাঁরা এক ছেলে ও এক মেয়ের গর্বিত জনক-জননী।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে পরীক্ষায় তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়। চার মাস চিকিৎসার পর ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে আসার পর ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ কবি সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিকের জন্মদিনে
আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করছি...