ব্যবসায়িক সাফল্যে অতীতের সব ছবিকে ছাপিয়ে গেল মাকড়শা মানব

30 Jan 2022, 12:44 PM হলিউড শেয়ার:
ব্যবসায়িক সাফল্যে অতীতের সব ছবিকে  ছাপিয়ে গেল মাকড়শা মানব

হলিউড বক্স অফিস এখন টম হল্যান্ড অভিনীত স্পাইডারম্যান : ‘নো ওয়ে হোম’-এর দখলে। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি পৃিথবীজুড়ে ১.৩৮০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা। স্পাইডার ম্যান সিরিজের মধ্যেও এটি সর্বোচ্চ। জানুয়ারির ২ তারিখ ২০২২-এর মধ্যে সারাপৃথবীতে ৫০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছে। এমন আরো নানান চমক দিয়েছে এই ছবি। এবারে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তরুণ জনপ্রিয় অভিনেতা টম হল্যান্ড। টম হল্যান্ড থাকছেন এবারের হলিউড আয়োজনে ...

পুরো নাম টমাস স্ট্যানলি হল্যান্ড। জন্ম ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন, ইংল্যান্ডের কিংসস্টোন শহরে। মা নিকোলা এলিজাবেথ বেশ পরিচিত একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন আর বাবা ডমিনিক হল্যান্ড একজন কৌতুক অভিনেতা। টমের আরো তিনজন ভাই আছে। স্যাম, হ্যারি এবং প্যাডি- এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে বেশ আনন্দে সময় কাটান টম হল্যান্ড। হ্যারিও অবশ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের ইউলম্বনউন শহরের ডনহেড প্রিপারেটরি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন। স্কুলে থাকাকালীনই টম নাচের প্রতি দারুণ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নাচের ক্লাসেই তার মনোযোগ থাকতো বেশি। কিন্তু তার বন্ধুরা তার নাচের দক্ষতা নিয়ে প্রায়ই হাসাহাসি করতো। কিন্তু টম দমে যাওয়ার পাত্র নন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে বিখ্যাত বিআরআইটি স্কুল থেকে অভিনয় ও নাচের ওপরও পড়াশোনা শেষ করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে রিচমন্ড ডান্স ফেস্টিভালে টম নিফটি ফিট ডান্স স্কুলের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন। এখানেই তিনি নজরে পড়েন বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার পিটার ডালিংয়ের সহকারী কোরিওগ্রাফার লেইন পেইজের। টমের নাচের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন তিনি, তিনি বুঝে যান, এই প্রতিভাকে গাইড করলে দারুণ এক সম্ভাবনাময় তারকার জন্ম হবে।

এরপর প্রায় দুই বছর তিনি অনুশীলন করেন এবং বিলি এলিয়ন দ্য মিউজিক্যালে বিলির প্রিয় বন্ধু সাইকেলের ভূমিকা করেন এবং দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এটা ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের কথা। এর মাধ্যমেই টম অভিনেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর সুবাদে তিনি অনেক টেলিভিশন শো এবং ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করেন।

বিলি ইলিয়ট দ্য মিউজিক্যালের মাধ্যমেই টমের টেলিভিশন যাত্রা শুরু হয়েছিল। চ্যানেল ফাইভে তার ও তার সহ-অভিনেতা ট্যানার সুইগারের সাক্ষাৎকার প্রচার হয়, যা তাদের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট পরিচিতির জন্য। একই বছরে দ্য ফিল গুড ফ্যাক্টর শোতে টম অভিনয় করেন। শো-এর প্রিমিয়ারে তিনি ড্রামা মিউজিক্যালের ‘অ্যাঙ্গরি ডান্স’ পারফর্ম করেন যা দর্শক বেশ পছন্দ করেন। জাপানি জনপ্রিয় এনিমেশন সিনেমা আরিত্রে তিনি শো চরিত্রের জন্য ইংলিশ ভয়েজ দেন- এর মাধ্যমেই টম চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সিনেমা ‘ইমপসিবল’ টমের ক্যারিয়ারের এক টার্নিং পয়েন্ট। এই সিনেমাটি দারুণ ব্যবসাসফল হয়। টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে এটি অনেক পুরস্কার জেতে। টমি তার অভিনয়ের জন্য অস্কারের জন্যও মনোনীত হন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পুরস্কার পাননি। কিন্তু হলিউড ততদিনে বুঝে গেছে দারুণ এক তারকার জন্ম হতে যাচ্ছে।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় ড্রামা ‘হাউ আই লিভ নাউ’। এবছর বেশ কিছু ছোটো ছোটো চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা ‘ইন দ্য হার্ট অব দ্য সি’-তে তিনি থমাস নিকারসনের ছোটোবেলার ভার্সনের রূপদান করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দকে টম হল্যান্ডের জন্য বেশ উল্লেখযোগ্য বছর হিসেবে আখ্যা করা যায়। এ বছর তিনি বেশ উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। ক্যাপ্টেন আমেরিকা, সিভিল ওয়ার, দ্য লস্ট সিটি অব জেড, এ মনস্টার কল’স। ক্যাপ্টেন আমেরিকা সিনেমায় তিনি পিটার পার্কারের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে স্পাইডার ম্যান : হোম কামিং এ তিনি পিটার পার্কার করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবারো এভেঞ্জার : ইনফিনিটি ওয়ার-এ স্পাইডার ম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই অল্প সময়ে টমের প্রাপ্তির ঝুলি বেশ ভারি। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি আজ হলিউডের জনপ্রিয় তারকা। এখনো সন্দিহান যে, তিনি আসলেই অভিনেতা হয়েই থাকবেন কি না। তার ভাষ্যমতে ১১ বছর বয়স থেকেই অভিনয় করছেন অন্য কিছু কখনো করাই হয়নি তার। পরিচালক হওয়ার ইচ্ছেও রয়েছে মনের গহিনে। এবারের স্পাইডারম্যান সিরিজে টম হল্যান্ডের সহশিল্পী ছিলেন জেন্ডায়া, জ্যাকব ব্যাটালন ও মারিসা টোমেই।

শুটিংয়ে পুরনো ভিলেনদের দেখে বেশ অভিভূত ছিলেন টম হল্যান্ড। কারণ, এরাই ছিল তার শৈশবসঙ্গী। তিনি বলেন, ছেলেবেলায় স্পাইডারম্যানকে দেখে সত্যিকারের ভাবতাম। ডক্টার অক্টোপাস, গবলিন ও ইলেক্ট্রোকে প্রথমবার সামনাসামনি দেখে মনে হয়েছে তারা স্পাইডারম্যানকে মেরে ফেলতে চাইতো। এখন আমিই স্পাইডারম্যান। শুটিংয়ে আমরা আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। দারুণ লেগেছে ব্যাপারটা।

খুব অল্প বয়সেই স্পাইডারম্যান চরিত্রে অভিনয় করলেন তিনি। দারুণ অভিনয় করেছেন। প্রাক্তন দুই স্পাইডারম্যানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে পেরে দারুণ উচ্ছ¡সিত। হলিউডে তিনি ইতোমধ্যে এর জনপ্রিয় তারকাÑ ভবিষ্যতে আরো দারুণ কিছু উপহার দেবেন এই প্রত্যাশা তার ভক্তকুলের। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন