দাবার ইতিহাস

01 Mar 2022, 01:24 PM ক্রীড়াভুবন শেয়ার:
দাবার ইতিহাস

দাবার ইতিহাস প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কালে খেলাটি উৎপত্তি লাভ করে। পরবর্তীসময়ে ভারত থেকে খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে ইরানে। ইরানের পর দাবা খেলা আসে দক্ষিণ ইউরোপে। সর্বশেষ ইউরোপ থেকেই প্রাচীন দাবা মূলত আজকের দাবায় রূপ নেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাবা খেলার নিয়মকানুনে যেমন এসেছে পরিবর্তন, তেমনি এসেছে এর নামেরও। ভারতে খেলাটি যখন উৎপত্তি লাভ করে তখন এর নাম ছিল চতুরঙ্গ। ইরানে দাবা পরিচিতি পায় শতরঞ্জ নামে। দাবা খেলোয়াড়দের তারা বলতে শুরু করে শাহ। আজ আমাদের কাছে যেটি চেকমেট নামে পরিচিত তখন সেটি পরিচিতি লাভ করে শাহ-মাত নামে। অনেক স্থানে যোদ্ধাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দাবা খেলার প্রচলন ছিল। মূলত ১২০০ থেকে ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়েই দাবার নিয়মকানুনে মূল পরিবর্তন আসে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে টাকার জন্য দাবা খেলার পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে, ১২৫৪ খ্রিষ্টাব্দে নবম লুইসের বিরুদ্ধে একটা অধ্যাদেশ জারি করতে হয়েছিল। এরপর আধুনিক দাবার প্রথম টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টটি আয়োজন করেন ব্রিটিশ দাবাড়– হাওয়ার্ড স্ট্যাউনটন। টুর্নামেন্টটিতে চ্যাম্পিয়ন হন জার্মানির অ্যাডলফ অ্যান্ডারসেন। বিংশ শতাব্দীতে গঠিত হয় ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন বা সংক্ষেপে এফআইডিই। একবিংশ শতাব্দীতে দাবায় কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা একটি গেইম বাজারে ছাড়া হয়। এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর অনলাইনে দাবা খেলা শুরু হয় ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগে।

দাবা খেলার নিয়মকানুন

দাবার বোর্ড : দাবা খেলার নিয়মকানুন এবং সূত্র সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের দাবার বোর্ড সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। দাবা বোর্ডের ৮টি সারিতে ৮টি কলাম মিলে মোট ৬৪টি ঘর থাকে। প্রতিটি ঘর পর্যায়ক্রমে সাদা কালো রং দিয়ে আলাদা করা থাকে। দাবার বোর্ড বসানোর সময় একটি জিনিস সবসময় খেয়াল করতে হয়, সেটা হলো সাদা ঘরটা যেন সবসময় খেলোয়াড়দের ডানদিকে থাকে।

দাবার ঘুটি : দাবা খেলায় মোট ৩২টি ঘুটি থাকে। ১৬টি সাদা ঘুটি এবং ১৬টি কালো। উভয় পক্ষের ১৬টি ঘুটির মধ্যে ৮টি করে থাকে চধহি অর্থাৎ বড়ে। দুটি করে নৌকা [rook], ঘোড়া [kinght], এবং হাতি [bishop] দুইপক্ষের ঘুটিতেই বিদ্যমান থাকে। আরো থাকে ১টি করে রাজা [king] এবং রানী [queen]। প্রতিটি ঘুটিরই বৈচিত্র্যময় নিজস্ব চাল [move] আছে। এবং প্রতিটি ঘুটিই প্রথমে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে। তারপর খেলা শুরু হলে নিজেদের ঘর থেকে চাল দিতে হয়।

ঘুটি বসানোর নিয়ম : বোর্ডের একপাশে সাদা ঘুটি ও অন্যপাশে কালো ঘুটি রেখে সেগুলোকে সাজাতে হয়। দুই দিকের প্রথম সারিতে দুই কোনায় দু’টি করে নৌকা বসে। এরপর উভয় পাশেই নৌকা দু’টির পাশে একটি করে ঘোড়া বসবে। ঘোড়ার পাশের ঘুটিটি হবে হাতি। এরপর বাকি থাকবে অবশিষ্ট দু’টি ঘর। একটি সাদা ও অপরটি কালো। কালো ঘরে কালো মন্ত্রী এবং সাদা ঘরে সাদা মন্ত্রী রেখে বাকি ঘরটিতে রাজাকে বসাতে হবে। দ্বিতীয় সারিতে বড়েগুলোকে পাশাপাশি রেখে সাজাতে হবে। ব্যাস্, এভাবেই দাবা বোর্ডে ঘুটিগুলো ক্রমান্বয়ে সাজাতে হয়।


ঘুটি চালানোর নিয়ম

রাজা : চারদিকে যেকোনো এক ঘর যেতে পারে। এক ঘরের বেশি যেতে পারবে না।

মন্ত্রী : চারদিকে নিজস্ব লাইনে সোজাসুজি অথবা কোনাকুনি যতদূর ইচ্ছা যেতে পারে।

হাতি : চারদিকে কোনাকুনি যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

ঘোড়া : ইংরেজি খ অক্ষরের ন্যায় সোজাসুজি দুই ঘর এবং পরে যেকোনো একপাশে এক ঘর যেতে পারবে। যাকে আড়াই ঘরও বলা হয়।

নৌকা : যেকোনো দিকে সোজাসুজি যতঘর ইচ্ছা যেতে পারে।

বড়ে : প্রথম চালে একঘর অথবা দুই ঘর এবং পরবর্তী চালগুলোতে সামনের দিকে একঘর করে যেতে পারে এবং ঘুটি খাওয়ার সময় কোনাকুনিভাবে খেতে পারে।

তাছাড়া কোনো ঘুটিই এমন কোনো ঘরে যেতে পারবে না যেখানে আগে থেকেই অন্যকোনো ঘুটি অবস্থান করছে। ঘোড়া ব্যতীত অন্য কোনো ঘুটি অপর একটি ঘুটিকে টপকে যেতে পারবে না।

এছাড়াও রাজা ও নৌকার একটি বিশেষ চাল আছে যাকে ক্যাসলিং বলে। বড়ের পদোন্নতিসহ এন প্যাসান্ট নামক আরো একটি বৈচিত্র্যময় চাল রয়েছে।

দেশ-বিদেশের দাবার কয়েকজন গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে- নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান, রাণী হামিদ ও রিফাত বিন সাত্তার [বাংলাদেশ], বিশ্বনাথন আনন্দ [ভারত], ববি ফিশার [যুক্তরাষ্ট্র], নাইজেল শর্ট [ইংল্যান্ড], কাসপারভ ও কারপভ [সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন], ম্যাগনাস কার্লসেন [নরওয়ে] অন্যতম। 

গ্রন্থনা : শহিদুল ইসলাম এমেল