সুপার স্টার উইল স্মিথ

24 Apr 2022, 12:23 PM হলিউড শেয়ার:
সুপার স্টার উইল স্মিথ

এবারের ৯৪তম অস্কার অনুষ্ঠানটি ছিল ঘটনাবহুল। কিন্তু সকল ঘটনা নি®প্রাণ হয়ে গেল এক চড়ের শব্দে। অস্কার মঞ্চে ঘটল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত অভিনেতা উইল স্মিথ মঞ্চে উপস্থিত কমেডিয়ান ক্রিস রককে সজোরে মারলেন এক চড়। এর কিছুক্ষণ পর অবশ্য মঞ্চে উঠে অস্কার পুরস্কার হাতে নিয়ে অনেক কথাই বলেন। তার এই আচরণের পেছনে সমালোচনা-আলোচনা দুটোই হচ্ছে। উইল স্মিথকে একটু গম্ভীরভাবে জানব আমরা এবারের হলিউড আয়োজনে...
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় জন্ম নেন উইল স্মিথ। পিতা উইলার্ড ক্যারল স্মিথ ছিলেন মার্কিন বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ও রেফ্রিজারেশন প্রকৌশলী এবং মাতা ক্যারোলাইন ফিলাডেলফিয়া স্কুল বোর্ডের প্রশাসক। পামেলা নামে তার এক বড়ো বোন এবং হ্যারি ও অ্যানেন নামে তার দুই যমজ ভাই-বোন রয়েছে। উইল স্মিথের পুরো নাম উইলার্ড ক্যারল স্মিথ জুনিয়র। তবে অসাধারণ দুষ্টামি বুদ্ধি ও দুষ্টু হাসি দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন বলে স্কুলের শিক্ষকরা তাকে ডাকতেন প্রিন্স কিংবা প্রিন্স চামিং বলে। সকলকে খুব সহজেই আপন করে নেওয়ার জাদুকরী ক্ষমতা ছিল সেই ছেলেবেলা থেকেই। তিনি যে অঞ্চলে থাকতেন সেখানে খ্রিষ্টান, ইহুদি ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল। কট্টর ক্যাথলিক পরিবারে বেড়ে উঠেও তিনি ছিলেন দারুণ সংস্কৃতিমনা। স্কুলের সহপাঠী ডিজে জেফরি টাউনসের সঙ্গে মিলে শুরু করেন হিপহপ গান। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বের হয় তাদের প্রথম গান ‘গার্লস অ্যাইন’ট অ্যানিথিং বাট ট্রাবল’। তাদের প্রথম অ্যালবাম রক দ্য হাউজ। সেটি বিলবোর্ড শীর্ষ ২০০-তে স্থান করে নেয় ফলে স্মিথ রাতারাতি একজন মিলিয়নিয়ার বনে যান মাত্র ১৮ বছর বয়সে।

পড়াশোনাতেও বেশ ভালো ছিলেন তিনি। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হোক। বোস্টনের বিশ্বখ্যাত এমআইচির একটি প্রি-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তিও হন কিন্তু তার মন ছিল তখন অন্য দিকে। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তার র‌্যাপ গান ‘প্যারেন্টস জাস্ট ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড’ দিয়ে জিতে নেন গ্র্যামি পুরস্কার। এর পরের অ্যালবামটি তেমন ব্যবসার মুখ দেখেনি, আর তখন হঠাৎ অর্থনৈতিক সঙ্কটও দেখা দেয় তার। এক পার্টিতে তার পারফর্মেন্স দিয়ে টিভি প্রযোজক বেনি মেডিনার মন জয় করে নেন তিনি। তার র‌্যাপ পারসোনার আদলে নির্মিত হয় ‘দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অব বেল এয়ার’ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ৬টি সিজন বেশ সাফল্যের সঙ্গে প্রচার হয়। সিরিজ চলাকালীনই তিনি বিয়ে করন শিরি জ্যামপিনোকে। তিন বছর সংসার করার পর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাদের। ট্রে স্মিথ নামে এক ছেলে রয়েছে এই দম্পতির। হোয়ার দ্য ডে টেকস ইউ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া অ্যাকশন কমেডি ‘ব্যাড বয়েজ’।

পরের বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ড ডে’-এর মাধ্যমে স্মিথ ভালোভাবেই জায়গা করে নেন প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে। স্টিভেন স্পিলবার্গ প্রযোজিত কমেডি সায়েন্স ফিকশন ‘মেন ইন ব্ল্যাক’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে আরেকবার সাড়া ফেলেন বক্স অফিসে। সে বছর গ্রীষ্মে মেন ইন ব্ল্যাক-এর থিম সং দিয়ে সংগীতেও যুক্ত হন তিনি। সেই বছরই গাঁট বাঁধেন অভিনেত্রী জাভা পিংকেটের সঙ্গে। ছেলে জ্যাডেন স্মিথ ও মেয়ে উইলোকে নিয়ে তার এ সংসার। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অভিনয় করেন বক্সার মোহাম্মদ আলির ভূমিকায়। এ জন্য প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এই গুণী অভিনেতা। সনি লিস্টন, জো ফ্র্যাজিয়ারের মতো বিখ্যাত বক্সারদের কাছে ট্রেনিংও নিয়েছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন তার জীবনের সেরা পারফর্মেন্সটি দিয়েছিলেন ‘আলি’ মুভিতেই। আর তিনি এই ছবির জন্য অস্কার মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

পরের বছর আই রোবট-এ অভিনয় করেন। আবারো বক্স অফিস মাতালেন স্মিথ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের হিচ মুভিটিও তার আরেকটি ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় মুভি। ‘দ্য পারসুইট অব হ্যাপিনেস’ মুভিটি বলা যেতে পারে উইল স্মিথের জীবনের সেরা একটি সিনেমা। জীবনে বিপর্যস্ত এক পিতার ভূমিকায় অভিনয় করেন, নিজের ছেলে জ্যাভেনের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। এই সিনেমার জন্যও পান অস্কার মনোনয়ন। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তার অভিনীত ৮টি মুভি ১০০ মিলিয়নের ওপর আয় করেছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে স্মিথ দারুণ এক সুযোগ পান। টেনিস তারকা ভেনাস ও সেরনা উইলিয়ামের উত্থান নিয়ে নির্মিত ‘কিং রিচার্ড’ মুভিতে তাদের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। সত্তরের দশকে বর্ণবাদের সময়, রিচার্ড উইলয়াম তার দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে টেনিস তারকা বানান সে গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘কিং রিচার্ড’ সিনেমাটি। এই সিনেমাটিই তাকে এবারে এনে দিল অস্কার।স্ত্রী জাডার চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে অস্কারের উপস্থাপক ক্রিস রকের স্থূল রসিকতাকেও ছাড় দেননি সব সময় হাসি-খুশিতে মেতে থাকা মানুষটি। সোজা চড় বসিয়ে দেন গালে। এর পরেই মঞ্চে উঠে সেরা অভিনেতার পুরস্কার নেন তিনি। তিনি একজন সুপারস্টার। কমেডি, অ্যাকশন, ড্রামা, সংগীত সব ক্ষেত্রেই তার প্রতিভা দেখিয়েছেন। একজন ভালো মানুষ হিসেবেও তিনি সমাদৃত। নিজ পরিবার ও ভক্তদের দারুণ গুরুত্ব দেন তিনি। সত্যিকারের সাফল্য তো এটিই যখন প্রিয় মানুষগুলো পাশে থাকে।

বিখ্যাত সিনেমা
হোয়ার দ্য ডে টেকস ইউ [১৯৯২], মেইড ইন আমেরিকা [১৯৯৩], ব্যাড বয়েস [১৯৯৫], ইন্ডিপেনডেন্স ডে [১৯৯৬], দ্য লিজেন্ড অব বেনার ভেন্স [২০০০], আলি [২০০১], স্লো টাইম [২০০২], আই রোবট [২০০৩], হিচ [২০০৫], হ্যানকক [২০০৮], দ্য কারাতে কিড [২০১০], আফটার আর্থ [২০১৩], সুইসাইড স্কোয়াড [২০১৬], ভ্যাজা [২০১৯], ব্যাড বয়েস অব লাইফ [২০২০], কিং রিচার্ড [২০২১]।
লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন