ভারতীয়দের গ্র্যামি জয়

24 Apr 2022, 01:58 PM নিকটদেশ শেয়ার:
ভারতীয়দের গ্র্যামি জয়

বিশ্ব-সংগীতের অন্যতম সম্মানজনক স্বীকৃতি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। চলতি বছরে ৬৪তম গ্র্যামির পর্দা উঠেছিল লাসভেগাসে। এবারের আসরে দুইজন ভারতীয় শিল্পী ঘরে তুললেন এই সম্মানজনক পুরস্কার। শিশুদের মিউজিক বিভাগে গান গেয়ে পুরস্কার জিতেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফাল্গুনী শাহ এবং ২য় বারের মতো গ্র্যামি পুরস্কার জিতে নিলেন ভারতীয় সংগীতজ্ঞ রিকি কেজ। সংগীতের অস্কারখ্যাত গ্র্যামি পুরস্কার মূলত সংগীতে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারীদের দেওয়া হয়। যদিও এই পুরস্কারে পশ্চিমী দুনিয়ারই আধিপত্য থাকে। তবে অনেক ভারতীয়ও কিন্তু এ পুরস্কার জিতেছেন। আগে যারা জিতেছেন তাদের কয়েকজনের পরিচয় তুলে ধরা হলো-

ফাল্গুনী শাহ

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন গায়িকা ফাল্গুনী শাহ সংগীত জগতে ফালু নামেই পরিচিত। লোকগীতির পাশাপাশি তিনি পাশ্চাত্য সংগীতেও বেশ জনপ্রিয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় তার প্রথম অ্যালবাম। এরপর তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। হরহামেশাই তিনি গান নিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এর আগেও তিনি ‘সেরা চিলড্রেন মিউজিক’ বিভাগে মনোনীত হয়েছিলেন ‘ফালুর বাজার’ অ্যালবামের জন্য। এবার শিশুদের মিউজিক বিভাগে গান গেয়ে জেতেন ‘আ কালারফুল ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড’।


রিকি কেজ

৬৪তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে নিজের দ্বিতীয় গ্র্যামি পুরস্কার জিতে নিলেন ভারতীয় সংগীতজ্ঞ রিকি কেজ। কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট কোপেল্যান্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন রিকি। সেই অ্যালবামের জন্যই তিনি পেলেন গ্র্যামি। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তার অ্যালবাম ‘উইন্ডস অব সামাসারা’র জন্য বেস্ট নিউ এজ বিভাগে প্রথমবার পুরস্কার নিয়েছিলেন রিকি।

পন্ডিত রবিশঙ্কর

পÐিত রবিশঙ্কর তার জীবনে মোট পাঁচবার গ্র্যামি পুরস্কার জিতেছেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে East meets west অ্যালবামের জন্য তিনি প্রথম গ্র্যামি পুরস্কার জেতেন। ১৯৭১ খ্র্টিাব্দে জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য চ্যারিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন সেই ‘Concert For Bangladesh’-এর জন্যও তিনি গ্র্যামি পান। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার অ্যালবাম ‘Full circle : Carnogie hall ২০০০’-এর জন্য গ্র্যামি পান। তার অ্যালবাম The Ziving Room Sessions-এর জন্য তিনি পান তার চতুর্থ গ্র্যামি। আর পঞ্চমটি পান ৫৫তম আসরে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার।

জাকির হোসেন

ভারতীয় বিখ্যাত তবলাবাদক জাকির হোসেন কুরেশি। সারাপৃথিবী অবশ্য তাকে আল্লারাখা কুরেশি নামেই জানে। তিনি প্রথম গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘প্লানেট ড্রাম’ প্রজেক্টের জন্য। কিংবদন্তি সংগীতকার মিকি হার্টের এবং ভিক্টু ভিনয়েকের সঙ্গে যুগ্মভাবে তিনি এ পুরস্কার পান। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৫১তম গ্র্যামি আসরে আবারো মিকি হার্টের সঙ্গে গ্র্যামি পুরস্কার জেতেন। তাদের ‘গোল্ডেন ড্রাম’ প্রজেক্টের জন্য তিনি এ পুরস্কার জেতেন।


টি. এইচ ভিনায়করাম

টি. এইচ ভিনায়করামকে মূলত সবাই ভিক্কু ভিনায়ক নামেই চেনেন। তিনি বিখ্যাত তার ‘ঘটম’ বাদ্যযন্ত্রের জন্য। আদতে এটি একটি মাটির হাঁড়ি। পদ্মভূষণ প্রাপ্ত এই মানুষটি গ্র্যামি পুরস্কার পান তবলাবাদক জাকির হোসেন এবং মিকি হার্টের সঙ্গে তাদের ‘প্লানেট ড্রাম’ প্রোজেক্টের জন্য। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার ‘রানা আবেরি’ অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পুরস্কার জিততে পারেননি।

পন্ডিত বিশ্ব মোহন ভাট

বিশ্ববিখ্যাত সংগীতজ্ঞ মোহন ভাট পরিচিত তার মোহন বীণা বাদ্যযন্ত্রের জন্য। যা সবার কাছে পরিচিত স্লাইডিং গুয়েটার নামে। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে আ মিনিং বাই দি রিভার অ্যালবামের জন্য তিনি যুগ্মভাবে রে কুভারের সঙ্গে এ পুরস্কার জেতেন। দেশি বিদেশি বহু বিখ্যাত গিটারশিল্পী তার কাছে নিয়মিত মোহন বীণা শেখার জন্য আসেন।

এ আর রহমান

ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুরকার এ আর রহমান। সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি একাধিক বাদ্যযন্ত্রেও তিনি বেশ দক্ষ। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মভূষণও জিতেছেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে দুটি গ্র্যামি পুরস্কার জেতেন ‘ স্লামডগ মিলিয়োনিয়র’ ছবির সংগীত পরিচালনার সূত্রে। ‘বেস্ট কোম্পাইলেশন সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম’ এবং বেস্ট সং রাইটার ফর ভিজ্যুয়াল মিডিয়া’ এই দুই ক্যাটাগরিতে তিনি এই পুরস্কার জেতেন।

তানভি শাহ

প্রথম গ্র্যামি বিজয়ী ভারতীয় নারী হলেন তানভি শাহ। তিনি তামিল, হিন্দি, তেলেগু, স্পেনীয়, পর্তুগিজ এবং আরবি ভাষায় একাধিক গান গেয়েছেন। তিনি বলিউডের ফানা ছবিতে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মূলত এ আর রহমানের সুরে জয় হো গানে কণ্ঠ দেওয়ার সুবাদেই তিনি গ্র্যামি পুরস্কারটি জিতে নেন। গ্র্যামির মঞ্চে তিনি জয় হো গানটি স্প্যানিস ভাষায় গেয়ে শোনান। আরো ভারতীয় যারা গ্র্যামি জিতেছেন তারা হলেন সম্পূরণ সিং কানরা [গুলজার], প্রয়াত এইচ শ্রীধর, পিএ দীপক, নোরাহ জোন্স, নীলা ভাসওয়ানি প্রমুখ। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন