সাহিত্যিকের জীবন নিয়ে সিনেমা

03 Jan 2021, 02:47 PM হলিউড শেয়ার:
সাহিত্যিকের জীবন নিয়ে সিনেমা

সাহিত্যিক হতে চাইলে দেখে ফেলুন এই সিনেমাগুলো ! কল্পনা করুন তো, একজন সাহিত্যিকের জীবন কেমন হতে পারে ? বাইরের চোখে আমরা কেবল একজন শিল্পী, সাহিত্যিক বা সৃজনশীল পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের বর্ণাঢ্য জীবনটাই দেখতে পাই। কিন্তু এর বাইরেও এ-মানুষদের আরেকটা জীবন আছে, যেখানে অবস্থান করে তাদের দৈনন্দিন প্রাত্যহিকতা আর টানাপোড়েন। সে জীবনটা কিন্তু আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই সাধারণ। মূলত এই সাধারণ জীবন থেকে উঠে আসা অসাধারণ কিছু চিন্তা আর উদ্ভাবনাই বদলে দেয় পরবর্তী বিশ্বকে। তবে কথাটা যত সহজে বলে ফেলা গেল, আদতে বিষয়টা তত সহজ নয়। তো এমন সব অসাধারণ মানুষের জীবনে যদি একটু উঁকি দিয়ে দেখা যেত, তাহলে হয়ত ব্যাপারটা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে এমন কিছু সিনেমা, যা আপনাকে সাহায্য করবে এ-ধরনের মানুষের ঘটনাবহুল জীবনকে আরেকটু কাছে থেকে দেখতে। সৃজনশীল পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকুন বা না থাকুন- এ পাঁচটি সিনেমা যে আপনার প্রাত্যহিক চিন্তা-প্রক্রিয়ায় কিছুটা বাড়তি প্রণোদনা যোগ করতে পারে সেটা খুব নিশ্চিত করেই বলা যায়।


শেক্সপিয়ার ইন লাভ [১৯৯৮]

ঐতিহাসিক সত্যতার বিচারে এই সিনেমাটির ব্যাপারে সমালোচকদের ভিন্নমত থাকলেও সারাবিশ্বে প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার আয় করা এ কমেডি-ড্রামা ধাঁচের সিনেমাটির দর্শকপ্রিয়তা সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। ১৫৯৩ সালে, লন্ডনে ইংরেজ সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ লেখার সমকালীন একটি প্রেমের ঘটনার ওপর ভর করে এ সিনেমাটি নির্মিত ; যেখানে একটি প্রেমের গল্পকে কেন্দ্র করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন লেখকের আন্তরিকতা, চিন্তা-প্রক্রিয়া আর সৃজনশীল সংগ্রাম।


মিজারি [১৯৯০]

স্টিফেন কিং-এর উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯০ সালে নির্মিত এই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ধাঁচের সিনেমাটিতে উঠে এসেছে পল সেলডন নামে একজন ঔপন্যাসিক আর তার এক অন্ধ ভক্তের ঘটনা। মিজারি নামের একটি সফল উপন্যাসের পরপর তার পরবর্তী উপন্যাসের পাÐুলিপি নিয়ে কাজ করছেন। এমন সময়ে হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় লেখককে উদ্ধার করে নিজ বাসায় নিয়ে আসেন এ্যানি ওয়াইকস্ নামে এক মহিলা, যিনি নিজেকে লেখকের সবচেয়ে বড়ো ভক্ত হিসেবে পরিচয় দেন। আহত অবস্থায় সে ভক্তের বাসায় শুশ্রæষাকালীন লেখক আর ভক্তের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া নিয়ে এগিয়ে চলে সিনেমাটির কাহিনি।


ডেড পোয়েটস্ সোসাইটি [১৯৮৯]

একজন শিক্ষকের চিন্তা-প্রক্রিয়া এবং জীবন-দর্শনের ওপর নির্মিত এ সিনেমাটি সারাবিশ্বের সৃজনশীল পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, শিল্পী তথা সাধারণ দর্শকদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৫৯ সালে, ওয়েলটন একাডেমি নামে একটি ছেলেদের বোর্ডিং স্কুলে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন জন কিটিং যিনি তার অপ্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতির কারণে অল্প সময়েই ছেলেদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীসময়ে তার শিক্ষা ছাত্রদের মনোজগতে ঠিক কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটা জানতে এখনি দেখে ফেলতে পারেন অনবদ্য এ সিনেমাটি।


দ্য হেল্প [২০১১]

২০০৯ সালে প্রকাশিত ক্যাথরিন স্টকেট এর উপন্যাস ‘দ্য হেল্প’ অবলম্বনে নির্মিত এ মুভিটি সারাবিশ্বের সিনেমা বাজার থেকে আয় করেছে প্রায় ২১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৬৩ সালে ঘটে যাওয়া আমেরিকান সিভিল রাইটস্ মুভমেন্ট সময়কালীন ইউজিনিয়া স্কিটার নামে এক তরুণী সাংবাদিককে ঘিরে গড়ে উঠেছে এ সিনেমার পট। সে সময়ের সভ্য সমাজের মানুষদের মধ্যে বেঁচে থাকা বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদ হিসেবে স্কিটার তৎকালীন এক আফ্রিকান-আমেরিকান গৃহ-পরিচারিকার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে একটি বই লেখার সিদ্ধান্ত নেন ; যেখানে তিনি তুলে ধরতে চান সমাজের এই শ্রেণির মানুষদের দুর্ভাগ্য আর বঞ্চনার ইতিহাস। কেবল একটা ভালো লেখাই যে একটা সময়ে বিশ্ব-বিবেককে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই সিনেমাটিতে।


মিডনাইট ইন প্যারিস [২০১১]

গিল পেন্ডার নামে হলিউডের একজন পেশাদার চিত্রনাট্য লেখকের ঘটনা নিয়ে নির্মিত ফ্যান্টাসি/ কমেডি-ড্রামা ধাঁচের সিনেমাটি ২০১১ সালে বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়। ২০১০ সালে প্রথম উপন্যাস লেখার জন্য প্রেমিকা আইনেজকে নিয়ে প্যারিসে ছুটি কাটাতে এসে গিল-এর সঙ্গে রহস্যজনকভাবে দেখা হয়ে যায় ১৯২০-এর দশকের বিখ্যাত কিছু মানুষের- যাদের মধ্যে রয়েছেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, স্কট ফিটজগারেল্ড, পাবলো পিকাসো আর সালভাদর ডালির মতো ব্যক্তিগণ। পুরো সিনেমাটিতে চিত্রায়িত হয়েছে এ-সকল মানুষদের শিল্প-ভাবনা আর দর্শনের প্রকাশ। চমৎকার সংলাপে ভরা এই সিনেমাটি সেরা চিত্রনাট্যের জন্য জিতে নিয়েছে অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব-এর মতো পুরস্কার। 