সংবাদ হচ্ছে আত্মার সবচেয়ে টাটকা খোরাক -রেহানা পারভীন

01 Jun 2022, 12:39 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
সংবাদ হচ্ছে আত্মার সবচেয়ে টাটকা খোরাক -রেহানা পারভীন

রেহানা পারভীন চিফ নিউজ প্রেজেন্টার বাংলাদেশ বেতার, সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিবিসি বাংলা, ঢাকা। একজন সফল অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে তিনি দেশ বিদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নিয়মিত করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। করেছেন ডাকসু নির্বাচন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দর্শক-শ্রোতাপ্রিয় বহুমাত্রিক প্রতিভার এই সংবাদ উপস্থাপকের বিস্তারিত থাকছে এবারের অনন্দভুবন আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

রেহানা পারভীন, ঢাকার ওয়ারীতে গত শতকের ছয়ের দশকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সেনা অফিসার বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীসময়ে পিতার সিভিল সার্ভিসে বদলির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান, শিক্ষাগ্রহণ এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এবং এর মধ্যেই তিনি বেড়ে ওঠেন। তারপর কখন যে ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির মধ্যে শেকড় গেঁথেছেন রেহানা পারভীন তা নিজেও বুঝতে পারেননি। বাবা এবং বড়ো ভাইকে একই মঞ্চে নাটক করতে দেখেছেন। ভাইবোনদের সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় মায়ের শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল বানিয়ে মায়ের নির্দেশনায় ছোটোদের নাটক করেছেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে যখনই বাড়ি গিয়েছেন তখন সব ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন নিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা করেছেন। এমন আয়োজন সেই সময়ে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘আজকের রেহানা পারভীন হয়ে ওঠার জন্য সকলের কাছে আমি ঋণ স্বীকার করছি।’
রেহানা পারভীন ঐতিহ্যবাহী আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল, বকশী বাজার কলেজে লেখাপড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করাকালীন জাতীয় মহিলা হকি দলে এবং ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের ভলিবল টিমের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি কবি শামীম আজাদের হাত ধরে। শুরুতে সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের নবারুণ এবং অন্যান্য পত্রিকায় কাজ করেন প্রদায়ক হিসেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সক্রিয় কর্মী এবং বন্ধুদের নাট্যদলে মহিলা কর্মী সংকটে নিজেই মঞ্চে উঠেছেন মহিলা নাট্যকর্মী হিসেবে। ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সে সময় যেসব বিজ্ঞাপনে তিনি মডেল হয়েছিলেন সেগুলোর প্রচার বন্ধ করে দেন। অনার্স শেষ করে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়েও সরকারি চাকরি করতে চাননি তিনি। ফিরে এসেছেন সময়ের সঙ্গে থাকতে, সংবাদ পাঠে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সংবাদ হচ্ছে আত্মার খোরাক। যা আমাকে পেশাগত জীবনে আত্মবিশ্বাস ও বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।’
তার এই আত্মবিশ্বাসের ভীত আরো মজবুত করেছে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন, সরকারি-বেসরকারিভাবে বহুবার বিদেশে সাংস্কৃতিক সফর, ছোটো বড়ো সংগঠন এবং পত্রিকার পুরস্কার।
পেশাগত জীবনে নিমকোর প্রশিক্ষণ ছাড়া আর অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও জীবন থেকে প্রতিনিয়ত যে শিক্ষা তিনি গ্রহণ করছেন, সেটিকে কাজে লাগাতে বিশ্বাসী রেহানা পারভীন। তিনি বিশ্বাস করেন, ধৈর্য্য ও আগ্রহের সঙ্গে একনিষ্ঠতার সংমিশ্রণ মানুষকে পরিপূর্ণ করে। পেশাদারিত্ব, কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া, দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন হচ্ছে জীবনের মূলমন্ত্র।
রেহানা পারভীন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে সক্রিয় থেকেছেন লিয়াকত আলী লাকির পরিচালনায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে। টিএসসি, রমনা বটমূলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা’ গীতি আলেখ্য উপস্থাপনে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীসময়ে গীতি আলেখ্যটি ক্যাসেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এখনো কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী রেহানা পারভীন আজিমপুর গার্লস স্কুলে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছেন। সেই মুহূর্তের কথা মনে পড়লে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন রেহানা পারভীন।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রেহানা পারভীন নামেই যার পরিচয়, দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে টেলিভিশন, বেতার এবং বিবিসিতে কাজ করছেন। তিনি অসংখ্য টকশো সঞ্চালনা এবং টকশোতে অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। সরকারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিনিধি দলে এবং ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি ইন্সটিট্যুটের বাংলা প্রমিত উচ্চারণ ও উপস্থাপনা কৌশলের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নিউজ প্রেজেন্টার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াঙ্গনে সবক্ষেত্রেই সপ্রতিভ বিচরণ তার।
রেহানা পারভীনের আদর্শ হচ্ছেন তার বাবা। বাবার মতো কোনো ব্যক্তিত্ব রেহানা পারভীন আজও খুঁজে পাননি।