বলিউডের মারাঠি অভিনেত্রী

01 Jun 2022, 01:10 PM বলিউড শেয়ার:
বলিউডের মারাঠি অভিনেত্রী

ভারতে কয়েকটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিই নিজস্ব স্বকীয়তা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। বেশ ভালো ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হয় বলিউডের বাইরের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে। তবে বলিউডকেই মূলত ভারতের প্রধান চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ভাবা হয়। মারাঠি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভারতের বেশ সমৃদ্ধ এক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক নায়িকা আছেন যারা বলিউডেও বেশ জনপ্রিয়। অনেকে আবার জন্মসূত্রে মারাঠি। এমন কয়েকজন অভিনেত্রীকে নিয়ে এবারের বলিউড আয়োজন...

নূতন
অসাধারণ প্রতিভা ও সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন নায়িকা নূতন। তার সময়ের আলোচিত ও প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে নূতন অন্যতম। মাত্র ১৪ বছর বয়সে হামারি বেটি সিনেমা দিয়ে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। নায়িকা শোভানা ও কবি কুমার সেনের মেয়ে নায়িকা নূতন। সম্পর্কে তিনি বর্তমান জনপ্রিয় নায়িকা কাজল দেবগণের খালা হন। তিনি এ পর্যন্ত ৫টি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন মারাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী।

স্মিতা পাতিলমহারাষ্ট্রের এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয় স্মিতা পাতিল। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় টিভি নিউজ রিপোর্টার হিসেবে। তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে স্মিতা পাতিল হিন্দি ও মারাঠি অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অনেক প্যারালাল সিনেমায় নিয়মিত কাজ করেছেন তিনি। তার অনবদ্য ও সাবলীল অভিনয়ের জন্য বেশ জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন দু’বার। পদ্মশ্রী পুরস্কারও রয়েছে তার অর্জনের ঝুড়িতে। অভিনেতা রাজ বাব্বরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল স্মিতা পাতিলের। মাত্র ৩১ বছর বয়সে সন্তান প্রতীক বাব্বরকে জন্ম দেওয়ার সময় জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। প্রতীক বাব্বরও কর্তমানে বলিউডের জনপ্রিয় মুখ।

ললিতা পায়ারসিনেমায়

কুটিল ও দুষ্টু নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ললিতা পায়ার। রাজা হরিশচন্দ্র সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন মাত্র ৯ বছর বয়সে। মারাঠি, হিন্দি, গুজরাটি সিনেমা মিলিয়ে প্রায় ৭০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন ললিতা। এক দুর্ঘটনায় চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্যারালাইজড ছিলেন জীবনের শেষ সময়গুলোতে। তিনি প্রথম নারী অভিনয়শিল্পী যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলেন।

রিমা লাগোমারাঠি 

পরিবারে জন্ম নেওয়া রিমা লাগো হিন্দি ও মারাঠি সিনেমার প্রিয় মুখ। তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মারাঠি থিয়েটারে। ১৯৯০ থেকে ২০০১-এর মধ্যে তিনি প্রচুর সিনেমায় মা ও শাশুড়ির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বিখ্যাত টিভি সিরিজ তু তু ম্যায় ম্যায়-তে তিনি শাশুড়ির ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। বৌ-শাশুড়ির খুনসুটি ও নানা মজাদার কাহিনি নির্ভর এই টিভি ড্রামাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। হঠাৎ করেই বুকে ব্যথাজনিত কারণে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন রিমা লাগো।


পদ্মিনী কোলাপোড়ে
মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ প্রাণধারী নাথ ও নিরুপতা কলাপোড়ের ছোটো মেয়ে পদ্মিনী। ছেলেবেলায় ইয়াদো কি বারাত সিনেমায় গান গেয়ে তার ক্যারিয়ারের শুরু। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি সেরা সহ-অভিনেত্রী শাখায় ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জেতেন। আর ১৭ বছর বয়সে জেতেন একই পুরস্কার তবে সেরা অভিনেত্রী শাখায়। তার রোমান্টিক সিনেমা প্রেম রোগ-এর জন্য তিনি এ পুরস্কার জেতেন। তার বড়ো বোন শিবাঙ্গীও অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুলাভাই শক্তিকাপুর বলিউডের নামকরা খল নায়ক। শক্তিকাপুরের মেয়ে শ্রদ্ধা কাপুর তো হাল আমলের বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের একজন। পদ্মিনীর ছোটো বোন তেজস্বীনিও চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত।

রেণুুকা সাহানেগত

 শতকের নয়ের দশকের বিখ্যাত টিভি অভিনেত্রী রেণুকা সাহানে মারাঠি দম্পতি বিজয় কুমার ও শান্তা গোখলের ঘরে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইন্ডিয়ান নেভিতে ছিলেন আর মা মারাঠি থিয়েটারের বেশ জনপ্রিয় মুখ। রেণুকা তার ক্যারিয়ার শুরু করেন মারাঠি সিনেমা হাচ শুনঘাইচা বাহু সিনেমার মাধ্যমে। পরবর্তীসময়ে তিনি হিন্দি টিভি ড্রামা সুরঙিতে অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান। দূরদর্শন চ্যানেলের মিষ্টি হাসির মেয়েটি তখন ঘরে ঘরে পরিচিত। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বলিউড সিনেমা হাম আপকে হ্যা কোন সিনেমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন রেণুকা। বলিউড অভিনেতা আশুতোষ রানার সঙ্গে বিবাহিত জীবনে তার দুই সন্তান রয়েছে। সর্বশেষ তাকে ডিজনি চ্যানেলের ছোটোদের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।

মাধুরী দীক্ষিত
বলিউড নায়িকা মাধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। বলিউডের সর্বকালের সেরা নায়িকাদের কাতারে তার অবস্থান ভাবা হয়। তার হাসি, নাচ ও সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ জনপ্রিয়। মাধুরীর জন্ম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মহারাষ্ট্রের এক মারাঠি পরিবারে। মাত্র ৮ বছর বয়সে মা-বাবার আগ্রহে কত্থক নাচে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন মাধুরী। প্রথম বলিউড সিনেমা অবোধ-এ নিজের নাচের প্রতিভা তিনি দেখিয়েছিলেন। প্রথম সিনেমা খুব একটা সফল না হলেও তার নাচ প্রশংসিত হয়। তিন বছর পর তেহজিব সিনেমায় তার এক দুই তিন গানের সঙ্গে নাচ পুরো বলিউডেই সাড়া ফেলে দেয়। ওই সময় সালমান খান ও আমির খানের মতো সুপারস্টারদের থেকেও বেশি পারিশ্রমিক তিনি পেতেন। দিল, বেটা, সাজান, খল নায়ক তার দারুণ ব্যবসাসফল সিনেমা। আমেরিকান প্রবাসী ডাক্তার নেনেকে বিয়ের পর তিনি সিনেমার জগত থেকে বিদেশে পাড়ি জমান। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে নাচের অনুষ্ঠান আজা নাচলেতে তিনি বিচারক হিসেবে আসেন। এরপর আজা নাচলে সিনেমায় অভিনয় করেন।

উর্মিলা মাতন্ডকার
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া উর্মিলা অনেক মারাঠি, তেলেগু, মালায়লাম সিনেমাতে অভিনয় করলেও মূলত বলিউড অভিনেত্রী হিসেবেই পরিচিত। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কারাস সিনেমাতে শিশুশিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার শুরু। মাত্র ৯ বছর বয়সে কালিযুগ ও মাসুম সিনেমায় অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। বড়ো হয়ে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বড়ো ঘর কি বেটি ও চমৎকার সিনেমাতে। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মালায়লাম সিনেমায় অভিনয় করেও বেশ সাফল্য পান উর্মিলা। রাম গোপাল ভার্মার আন্থাম, রঙ্গিলা, সত্য সিনেমায় তার অভিনয় এখনো প্রশংসিত ও আলোচিত। ১৯৯৫, ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সেরা পারফর্মার হিসেবে সেরা ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জেতেন। ভিন্ন ধারার সিনেমার জন্য উর্মিলা ছিলেন পরিচালকদের প্রথম পছন্দ। অনেক হরর সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন যখন এই ধরনের সিনেমায় অভিনয় করতে অন্য নায়িকারা খুব একটা সাহস পেতেন না। ভূত, এক হাসিনা থি, নায়না, তাহজিব তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা।


লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন