মৌসুমীর মরসুম

সময়টা এখন মৌসুমীর। তাকে নিয়ে গুঞ্জন চারদিকে। মৌসুমী-ওমর সানীর সংসারজীবন ২৬ বছরের। কম কথা নয় : মিডিয়ার মানুষের বিয়ে বেশিদিন টেকে না, এটা সাধারণ মানুষের কথা। মিডিয়ার লোকেদের সংসার না টেকার তালিকাটাও বেশ লম্বা। সেই সবকিছুকে ছাপিয়ে মৌসুমী ও ওমর সানী তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রায় ২৬ বছর পার করেছেন। যখন কোনো শিল্পীর সংসার ভেঙে যেত, তখন মৌসমী ও সানীকে দিয়ে উদাহরণ দেওয়া হতো, কতই না সুখী পরিবার সানী-মৌসুমী ! তারা তো এখনো ঠিক আছেন, সেই নিশ্চয়তা কি এখন দেওয়া যাচ্ছে ? কয়েকদিন আগে বললে হয়ত ব্যাপারটা নিয়ে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হতো, তবে বর্তমানে এখনো আশা রাখা যায় মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বাঁধন ভাঙবে না। যদিও মৌসুমী বলেছেন শামুকের মতো গুটিয়ে রয়েছেন তিনি, তবুও অনেকে মনে করেন, মরসুমটা এখন মৌসুমীরই। এই জুটির ভক্তরা মনেপ্রাণে চাইছেন, তাদের প্রিয় জুটির বন্ধন অটুট থাকুক। ওমর সানী-মৌসুমীর ভক্তদের পাশাপাশি আমাদেরও এমনই প্রত্যাশা। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

ভালোবাসা হচ্ছে এমনই এক শক্তি যা সব বাধা-বিপত্তিকে উপড়ে ফেলে জয় করতে পারে সমগ্র পৃথিবী। বিশ্বাস, অনুভূতি আর একে অপরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার ফলে দু’টি মানুষ এক হয়ে ওঠে। আর সেই ভালোবাসার বহু কাহিনি রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসঙ্গে থাকার জন্য বা দু’টি হাত এক হওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয়েছেন তখন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন অনেকে। আবার ভালোবাসার অপরাধে মৃত্যুকেও বরণ করে নিয়েছেন অনেকে। কোটি কোটি মানুষ যা দেখার জন্য এখনো ভিড় জমায়।
যুগের পর যুগ এভাবেই চলে আসছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে, জীবন থাকবে, ততদিন প্রেম থাকবে। এই জন্য প্রেম শাশ্বত। প্রেম স্বর্গীয়। যুগে যুগে প্রেমের টানেই মানুষ কখনো অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, কখনো নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ নিয়েছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই প্রেম করে বিয়ে করেন, আবার সেই বিয়ে ভেঙেও যায়। কিন্তু কিছু সম্পর্কের দৃঢ়তাও দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলা চলচ্চিত্রের দুই প্রিয় মুখ ওমর সানী ও মৌসুমীর কথা। যাদের সুখ দেখে অনেকেই হয়ত হিংসা করতেন। দীর্ঘ ২৭ বছর বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ সুখের ঘরে দুঃখের আগুন। তবে সেই আগুন যেন স্থায়ী না হয়, সেইদিকে বিশেষ নজর দেন ওমর সানী। খুব সুন্দরভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি।
যখন ওমর সানী ও মৌসুমীর বিষয়টি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন হচ্ছিল স্বভাবতই দুই তারকার কাছের মানুষ ও ভক্ত-অনুরাগীরা হতবাক। প্রশ্ন উঠছিল, দীর্ঘদিন ধরেই তারা ঢালিউডে আদর্শ দম্পতি হিসেবে সমাদৃত। হঠাৎ কী এমন হলো, যা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় হলো। তাদের মনে প্রশ্ন উঠে আসে সানী-মৌসুমী কি সত্যিই আলাদা হয়ে যাচ্ছেন ?
ঘটনার সূত্রপাতঅভিনেতা ওমর সানীকে পিস্তল বের করে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অভিনেতা জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন ওমর সানী। এই দিকে জায়েদ খান নির্দোষ বলে দাবি করেন মৌসুমী। মৌসুমী জানান, জায়েদ কখনোই তাকে অসম্মান করেনি, বরং মিথ্যা কথা বলছে ওমর সানী। জায়েদ অনেক ভালো ছেলে। তবে ওমর সানী ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেন তা বুঝতে পারছেন না এই অভিনেত্রী। মৌসুমীর বক্তব্যের পর পাল্টা কথা বলেন ওমর সানী। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমার ৩২ বছরের ফিল্ম ক্যারিয়ারে আজ পর্যন্ত কেউ আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি। বিশেষ করে আমার স্ত্রীকে [মৌসুমী] আমি বিয়ে করেছি ২৭ বছর। আমার দুইজন ছেলেমেয়ে আছে। আমি গতকাল জায়েদ খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে একটি অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের বিষয়ে আমি এখনো অটল। মৌসুমী কী ভেবে জায়েদ খানকে ভালো বলেছে আমি জানি না। এই ঘটনাটি সামনে আমার অভিভাবক হিসেবে আমার ছেলে ফারদিন সবাইকে পরিষ্কার করবে। আমি চাই না সংসার জীবনের এই ২৭ বছরে এসে পরিবারের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হোক। কিন্তু একজন বাইরের মানুষ এসে আমাদের সংসার ভাঙার চেষ্টা করছে। আপনারা নিজেরাই জানেন সে মানুষটি কে।
ওমর সানী বলেন, আপনারা দয়া করে মৌসুমীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না। আপনারা সবাই জানেন জায়েদ খান কী। এর আগে মৌসুমী বলেন, আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি, ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটি খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে ও আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর ওর মধ্যে গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনই আমাকে অসম্মান করেনি।
মৌসুমী আরো বলেন, কেন এই প্রশ্নটা বারবার আসছে, সে আমাকে বিরক্ত করছে, উত্ত্যক্ত করছে। এই জিনিসটা আমার আসলে... জানি না এটি কেন হচ্ছে। এটি যদিও একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে সমস্যা আমাদের পারিবারিকভাবেই সমাধান করা দরকার ছিল।

সানী ভাই কেন এমন করছেন
আমি জানি না -মৌসুমি
এই দিকে মৌসুমী, স্বামীকে [ওমর সানী] ভাই সম্বোধন করেও সমালোচনায় মুখোমুখি হন।
সম্প্রতি অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অভিনেতা ওমর সানীকে পিস্তল বের করে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আরেক অভিনেতা জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন ওমর সানী। তবে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ঘি ঢেলে দেন অভিনেত্রী মৌসুমী। দুই দিন চুপ থাকার পর অবশেষে মুখ খোলেন তিনি।
সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে বললেন, ওমর সানী মিথ্যাচার করছে, জায়েদ আমাকে অসম্মান করেনি।
মৌসুমী বলেন, আমি মনে করি, আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটি খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে ও আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর ওর মধ্যে গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনই আমাকে অসম্মান করেনি।
অভিনেত্রী মৌসুমীকে নানাভাবে হয়রানি ও বিরক্ত করেন জায়েদ খান। এমন অভিযোগে সম্প্রতি ডিপজলের ছেলের বিয়েতে জায়েদকে চড় মারেন ওমর সানি। এসময় জায়েদ রেগে কোমর থেকে পিস্তল বের করে সানীকে গুলি করার হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
১২ জুন শিল্পী সমিতির সভাপতি বরাবর ওমরসানী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। সেখানে তিনি তার সংসার ভাঙার চেষ্টা ও গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন।
এদিকে সোমবার [১৩ জুন] গণমাধ্যমে অডিওবার্তা দিয়ে মৌসুমী বোমা ফাটালেন। তিনি দাবি করেছেন, ওমরসানি মিথ্যা বলেছেন। জায়েদ ভালো ছেলে। মৌসুমীর এই বক্তব্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তবে কি ওমর সানি ও মৌসুমীর সংসার ভাঙনের পথে ? স্বামীর বিপক্ষে গিয়ে তাকে নিয়ে মজা করে ‘ভাই’ ডেকে মৌসুমীর বক্তব্য অবাক করেছে অনেককে। মৌসুমী যেন সরাসরি ওমর সানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাই করে দিলেন।
বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমীকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। তাকে কেন্দ্র করে ওমর সানী-জায়েদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, এরপর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, সংসার ভাঙনের গুঞ্জন-সহ নানা বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। শেষ পর্যন্ত দূরত্ব মিটিয়ে আবার এক হয়ে গেছেন সানী-মৌসুমী।
২ আগস্ট ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই জনপ্রিয় জুটি। ওমরসানী-মৌসুমীর সুখের সংসারে রয়েছে দুই সন্তানÑ ছেলে ফারদিন ও মেয়ে ফাইজা। বড়ো ছেলে ফারদিন বিয়ে করেছেন গেল বছর। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া দীলিপ সোম পরিচালিত ‘দোলা’ ছবির মাধ্যমে জুটি বাঁধেন ওমর সানী ও মৌসুমী। এর মধ্যে রয়েছে আত্ম অহংকার, প্রথম প্রেম, মুক্তির সংগ্রাম, হারানো প্রেম, গরিবের রানি, প্রিয় তুমি, সুখের স্বর্গ, মিথ্যা অহংকার, ঘাত প্রতিঘাত, লজ্জা, কথা দাও, সাহেব নামে গোলাম। বিনোদন জগতে যখন বিচ্ছেদের খবরের ছড়াছড়ি চারদিকে তখন টেকসই দাম্পত্য জীবনের উদাহরণ হয়ে আছেন ওমর সানী ও মৌসুমী জুটি। দেখতে দেখতে ২৬ বছর পেরিয়ে গেল ঢালিউডের এই জনপ্রিয় জুটির সংসার জীবনের।

ছবি : জাকির হোসেন, সংগ্রহ