জাপানি অ্যানিমেশন সিনেমাগুলি...

04 Jul 2022, 02:44 PM হলিউড শেয়ার:
জাপানি অ্যানিমেশন সিনেমাগুলি...

অ্যানিমেশন সিনেমা তৈরিতে জাপানিরা সেরা একথা একবাক্যে মেনে নেবে সকলেই। অসাধারণ গল্পের অ্যানিমেশন তৈরি করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে জাপানি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ। অ্যানিমেশন বলতেই অনেকে অবশ্য কার্টুন ভেবে ভুল করে। অসাধারণ গল্প, বাস্তবসম্মত পরিবেশন, সব মিলিয়ে জাপানি অ্যানিমেশন আসলে এককথায় অসাধারণ। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে অ্যানিমেশন যুগের শুরু, তারপর থেকে বড়ো বড়ো পরিচালকেরা তৈরি করে চলেছেন বিখ্যাত সব অ্যানিমেশন সিনেমা। এমনই কিছু অ্যানিমেশন সিনেমার বিস্তারিত থাকছে আমাদের এই আয়োজনে। ঈদের ছুটিতে দেখে নিতে পারেন এই চমৎকার অ্যানিমেশন সিনেমাগুলো...


স্পিরিটেড অ্যাওয়ে

প্রথমেই যে সিনেমার কথা বলবো সেটির নাম স্পিরিটেড অ্যাওয়ে। এটি দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন এটি তো নেহায়েত শিশুদের দৈত্য দানোর অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা। ১০ বছরের ছোট্ট চিহিরো তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যায়। আর সেখানে তার মা-বাবা জন্তুতে পরিণত হয়, লোভের কারণে। এরপর নানা কাল্পনিক জগতের গল্প। এই কাহিনিগুলোতে রূপকভাবে বোঝানো হয়েছে যে, এখনো জাপানের পতিতালয়গুলোতে শিশুদের ব্যবহার করা হয়। বিখ্যাত পরিচালক হায়াও মিয়াঝাকির এই কাজটিকে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ ধরা হয়। আইএমডিবির রেটিংয়ে ৮.৬ স্কোর আছে সিনেমাটির। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

প্রিন্সেস মনোনোকে

কঠিন কথাকে সহজ করে বোঝানোই অ্যানিমেশন সিনেমার মাহাত্ম্য। প্রিন্সেস মনোনোকে তেমনই এক গল্প। নাম দেখে ধরে নেবেন না এটা কোনো রাজকুমারীর গল্প। এটি এক নিগুঢ় সত্যকে প্রকাশ করে। গল্পটি এমনÑ ইমিশি জাতির গ্রাম আক্রমণ করতে আসে এক দৈত্য, কিন্তু গ্রামের রাজকুমার তাকে আগেই হত্যা করে। কিন্তু এতে তার ওপর নেমে আসে দৈত্যের অভিশাপ। এই অভিশাপ কাটানোর জন্য যাত্রা শুরু করে সে। এসময় জঙ্গলের আত্মা, বনের সম্পদ গ্রাসকারীদের যুদ্ধের মাঝে পড়ে। পরিচালক হায়াও মিয়াঝাকি সব সময়ই তার সিনেমায় প্রতীক ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত হয়ে থাকবেন। এটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৪।

ওলফ চিলড্রেন

গল্পটি বেশ মজার। হানা আর ওকামিকের বিয়ে দিয়েই শুরু। নায়ক নায়িকা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। এমন হলে তো গল্পই শেষ তাই না ? আসলে ওকামি হলো ইচ্ছাধারী নেকড়ে। তাদের ছানাও হয় দুটো। গল্পের শুরু মূলত এখান থেকেই। তাদের ছানা ইয়ু কি আর এমি স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। হানার জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। কীভাবে সে মানুষ করবে ছানা দুটোকে। তারা মানুষ হবে ? নাকি নেকড়ে ? আইএনডিবি রেটিং এটির ৮.২। পরিচালনা করেছে মামাকে হোসদা।

ইয়োর নেইম

টান টান উত্তেজনা নিয়ে যারা সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ইয়োর নেইম অ্যানিমেশনটি বেশ উপভোগ্য হবে। একদমই অন্যরকম একটি গল্প। একদিন সকালবেলা মিতসুহা ও তাকি বুঝতে পারে তারা আসলে একে অন্যের শরীরে ঢুকে গেছে। মানে দুজনের আত্মা দুজনের শরীরে ওলটপালট হয়ে গেছে। একে অন্যের জীবন কাটাতে গিয়ে মনের অজান্তেই একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলে। কেন এমন হলো ? নিয়তি কী চায় তাদের কাছে ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে মুভিটি দেখে ফেলুন। এটি মুক্তি পায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। আইএমডিবি রেটিং ৮.৫। ছবিটির পরিচালক মাকোতো শিনকাইয়ে। এটি এখনো জাপানের সর্বোচ্চ আয়ের অ্যানিমেশন।

আকিরা

কল্পকাহিনি ভিত্তিক অ্যানিমেশনও দারুণ জনপ্রিয় পুরো বিশ্বেই। আকিরা তেমনই এক সাইন্সফিকশন গল্প। গল্পে দেখানো হয়েছে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পুরো জাপান জুড়ে অলিম্পিক আয়োজনের উন্মাদনা। দেখানো হয়েছে যে জাপানে এখনো পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষত মুছে যায়নি। এক রাতে একদল তরুণ বাইক নিয়ে বের হয়। ঘটনাক্রমে তাদের সঙ্গে পরিচিত হয় এক অতিমানবীয় শিশুর। এই শিশুটি গোপনে এক ল্যাব থেকে পালিয়েছে। এই শিশুর রয়েছে কিছু ক্ষমতা। এই শিশুর সঙ্গে কি পারমাণবিক বিষ্ফোরণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে। পুরো দেশজুড়ে অস্থিরতার পেছনে কি রয়েছে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র। এসব কাহিনি নিয়েই আকিরা সিনেমাটির আইএমডিবি রেটিং ৮.১। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির পরিচালক কাতসুহিরো ওতমো।

মাই নেইবার টটবো

যারা পারিবারিক গল্প পছন্দ করেন তাদের জন্য মাই নেইবার টটবো দারুণ একটি অ্যানিমেশন। ছোটো দুই বোন সাহসুকি আর মে। হাসপাতালে তাদের মা অসুস্থ। তাদের প্রফেসর বাবা বাসা বদল করে এক জঙ্গলের কাছে বাসা নেয়। জঙ্গলের দৈত্য-দানো নিয়ে চমৎকারভাবে এগুতে থাকে কাহিনি। জাপানি অ্যানিমেশনটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পারিবারিক চলচ্চিত্রের জায়গায় স্থান করে নেয়। এর আইএমডিবি রেটিং ৮.১। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির পরিচালক হায়াও মিয়াঝাকি। ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক। প্রাকৃতিক পরিবেশ, ছোট্ট একদল ভূতের ভালোবাসা সব মিলিয়ে ঠিক আপনাকে শৈশবে ফিরিয়ে নেবে সিনেমাটি।

গ্রেইভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে তৈরি গ্রেইভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস। এটি কিশোর সেইতো ও তার ছোটবোন সেতসু কোর বেঁচে থাকার গল্প। সদ্য সামরিক কর্মকর্তা বাবাকে হারিয়ে বোনকে বুকে নিয়ে বাঁচার লড়াই করে যায় সেঙ্গতা। পুরনো বাংকারের ভেতর তার বাঁচার লড়াই দেখে মন ভারাক্রান্ত হবে না এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা কি শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে জিততে পারবে ? নাকি তারাও হারিয়ে যাবে জোনাকির নিভু নিভু আলোর মতো। আইএমডিবি রেটিং ৮.৫। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে। পরিচালনা করেছেন ইসাও তাকাহাতা।

দ্য গার্ল হু লেপ্ট থ্রু দ্য টাইম

যদি অতীতে ফিরে যান কোনোভাবে, তাহলে কি করবেন ? নিজের জীবনকে কি আরো সুন্দর করবেন ? ভুলগুলো শুধরে নিবেন ? এই গল্পের নায়িকাও তেমনই করতে চেয়েছিলেন। সে হঠাৎই ক্ষমতা পায় লাফ দিয়ে অতীতে ফিরে যাওয়ার। সেও চেয়েছিল তার অতীতের ভুলগুলো শুধরে আরো সুন্দর জীবন। কিন্তু সময় কি তাকে ফেরত নেবে। অজান্তেই কারো ক্ষতির কারণ কি সে হচ্ছে ? এমনই গল্প নিয়ে এই দারুণ অ্যানিমেশনটি। আইএমডিবি রেটিং ৭.৮। পরিচালক মামোবো হোসদা। হ

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন