যেকোনো লেখা খবরের মতো পড়তেন শাওন

05 Oct 2022, 02:43 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
যেকোনো লেখা খবরের মতো পড়তেন শাওন

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন যমুনা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক শাওন দত্ত তাদের মধ্যে অন্যতম...

যমুনা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক শাওন দত্ত উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় এসে ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করার তাগিদ কাজ করত শুরু থেকেই। হঠাৎ করে পত্রিকায় চোখে পড়ে বিজেম -এ সংবাদ উপস্থাপনা কোর্সের একটি বিজ্ঞপ্তি। তখনই সেখানে যোগাযোগ করেন এবং ভর্তি হয়ে যান। সেখানে ১০ দিনব্যাপী ক্লাসে দেশের স্বনামধন্য টিভি চ্যানেলের বেশ কয়েকজন সংবাদ উপস্থাপক ক্লাস নেন। কোর্স শেষে বিজেম-এর পরিচালক মির্জা তারেকুল কাদের সিভি বানাতে ও জমা দিতে সাহায্য করেন। সিভি জমা দেওয়ার কিছুদিন পরেই ডাকা হয় একুশে টিভি থেকে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২২ আগস্ট অডিশন হয়। তারিখটা এজন্য মনে আছে কারণ, ২২ আগস্ট ছিল শাওনের জন্মদিন। এরপর একুশে টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি। কিন্তু শাওনের আগ্রহের জায়গা ছিল সংবাদ উপস্থাপনায়। তাই যমুনা টেলিভিশন নামে একটি নিউজ চ্যানেল আসছে শুনেই সেখানে সিভি জমা দেন। সেখান থেকে তাকে ডাকেন এবং সিলেক্টেড হয়ে যোগ দেন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল। তখন থেকেই কাজ করছেন যমুনা টেলিভিশনে।

শাওন দত্ত বেড়ে উঠেছেন একটি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন অনেকেই নাচ, গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সুবাদে গান শিখেছেন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তবে ওভাবে আলাদা করে চিন্তা করেননি যে সংবাদ উপস্থাপক হবেন কখনো। ছেলেবেলা থেকেই বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন শাওন। যেখানে যা বই পেতেন গোগ্রাসে পড়ে নিতেন। নেশার মতো ছিল বই পড়া। স্কুলে বাংলা শিক্ষক সবসময় তাকে পাঠ্যবই-এর কোনো এক অংশ পড়তে বলতেন। তিনি বলতেন তোমার বাচনভঙ্গি খুব সাবলীল সুন্দর আর সুরেলা। বাড়িতে শাওনের বাবা ‘ভোরের কাগজ’ পত্রিকা রাখতেন। তখন থেকে পত্রিকা পড়ারও একটা নেশা হয়ে গিয়েছিল। টিভিতে যখন খবর হতো, শাওন তখন অন্য কোনো লেখা খবরের মতো করে পড়তেন, সেটা দেখে তার দিদিরা খুব হাসত আর মজা পেত। হয়ত তখনই মনের মধ্যে সুপ্ত একটা ইচ্ছে তৈরি হয়েছিল। সেটিই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।

ছেলেবেলা থেকেই শাওনের মা-বাবা ছায়ার মতো পাশে থেকে সব কাজে তাকে সহোযোগিতা করে গেছেন। পড়ার জন্য মা রাত জেগে তার পাশে বসে থাকতেন। কোথাও গানের প্রতিযোগিতা হলেও মা-বাবা তার পাশে থাকতেন। পরিবার রাজবাড়িতে থাকার কারণে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার বেলায় তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি ঠিকই, তবে তারা মানসিকভাবে সমর্থন করেছেন। শাওনের বাবা সবচেয়ে বড়ো উৎসাহ দাতা। সত্যি কথা বলতে, পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া এই পেশায় টিকে থাকা অসম্ভব না। একজন গণমাধ্যমকর্মী বা একজন সংবাদ উপস্থাপককে ভোর থেকে শুরু করে রাতের যেকোনো সময়ে কাজ করতে হয়। কখনো ভোরে নিউজ পড়তে হয়, আবার কখনো দুপুরে কখনো-বা রাতে। বিয়ের পরে তাঁর জীবনসঙ্গী ও শশুরবাড়ির লোকজনও তাকে দারুণ সহযোগিতা করছেন।

শাওন মনে করেন, সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে সফল হতে হলে সবার আগে শুদ্ধ উচ্চারণ জানতে হবে, সুন্দর বাচনভঙ্গীরর অধিকারী হতে হবে আর পোশাক নির্বাচনসহ সবকিছুতে থাকতে হবে পরিমিতিবোধ। তাছাড়া আত্মবিশ্বাস, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাবলীলতা থাকা খুব জরুরি। সবচেয়ে বড়ো কথা, সবার কাছে যে সংবাদটি আমি পৌঁছে দিচ্ছি সে সম্পর্কে আমার যেন সঠিক জ্ঞান থাকে সেটি নিশ্চিত করা। সময়ানুবর্তিতা একটি অনেক বড়ো গুণ। যা একজন সংবাদ উপস্থাপকের অবশ্যই থাকা উচিত।

অবসরে গান শুনতে ভালোবাসেন শাওন। গান শোনেন এবং নিজেও গান করেন। মাঝেমাঝে বই পড়েন। বারান্দায় গাছের যত্নে নেন। যদিও অবসর খুব কমই মেলে তার। বেড়াতে খুব ভালো লাগে। যেকোনো কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, প্রকৃতির কাছাকাছি পরিবেশ উপভোগ করেন। প্রিয় রং নীল। প্রিয় খাবার- মায়ের হাতের যেকোনো রান্না। আলাদা করে বলতে গেলে খিচুড়ি, খাসির মাংস। চা আর কফি চলে দিনভরম বলতে গেলে এই দুই পানীয়ের ভক্ত তিনি।

লেখা : শহিদুল ইসলাম এমেল