সবার আগে সংবাদকর্মী হতে হয় - রীতা চৌধুরী

08 Nov 2022, 04:05 PM সংবাদ উপস্থাপক শেয়ার:
সবার আগে সংবাদকর্মী হতে হয়  - রীতা চৌধুরী

টিভি সংবাদ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট উচ্চারণ, সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং দর্শকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে হাতে গোনা যে-ক’জন সংবাদ উপস্থাপক এগিয়ে আছেন একুশে টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক রীতা চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম। দর্শকনন্দিত এই সংবাদ উপস্থাপককে নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের আয়োজনে ...

একুশে টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক রীতা চৌধুরী প্রায় দুই যুগ ধরে সংবাদ উপস্থাপনা পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন। এরপর ১৯৯৯-এ চ্যানেল আইতে স্টেশন অ্যাংকর হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিন বছর কাজ করার পর ২০০২-এ এটিএন বাংলায় সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানেও কাজ করেন প্রায় ছয় বছর। এরপর ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করেন। সেখান থেকে সর্বশেষ ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে যোগ দেন একুশে টেলিভিশনে। এখন পর্যন্ত একুশে টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এছাড়া তিনি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ বেতারেও সংবাদ পাঠ করছেন।

রীতা চৌধুরী নিজের ইচ্ছে থেকেই এটিএন বাংলায় সংবাদ উপস্থাপনার জন্য অডিশন দিয়েছিলেন। অডিশনে পাশ করে সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত হন এটিএন বাংলায়। ছেলেবেলা থেকেই সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ইচ্ছে ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাহ, এমন কোনো ইচ্ছা ছিল না। তবে, আমি অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। খুব ছোটো থেকেই এমন ইচ্ছে মনের ভেতর ছিল। সেটা আর করা হয়নি। এখন অভিনয় করার ইচ্ছে নেই। আমি যখন চ্যানেল আইতে স্টেশন অ্যাংকর ছিলাম তখন ওখানে সংবাদ শুরু হয়নি। আমি ওখান থেকে চলে আসার পর সংবাদ শুরু হয়। ওখান থেকে এসে আমি এটিএন বাংলায় সংবাদ উপস্থাপকের জন্য অডিশন দিই এবং টিকেও যাই। এটিএন বাংলা থেকেই শুরু হয়েছিল আমার সংবাদ উপস্থাপনা। ব্যাংকে যোগদানের জয়েনিং লেটার পেয়েও যোগদান করিনি, আমার সন্তানদের মানুষ করবো আর সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে থাকবো বলে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার ব্যাপারে আমাকে পরিবারের সবাই সহযোগিতা করেছে। পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে আমি এতদিন নিয়মিত সংবাদ উপস্থাপনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারতাম না। আমি সবকিছুই করেছি আমার বিয়ের পর। আমি ছোটো ছোটো সন্তান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি। আমি একান্নবর্তী পরিবারের ছোটোবউ। শাশুড়ি আমাকে সহযোগিতা করেছেন প্রতিমুহূর্তে। আমার হাজব্যান্ড সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন।

আমার সন্তানেরা এটা দেখেই বড়ো হয়েছে যে, মা ঘরেও আমাদের জন্য রান্না করবে, আমাদের পড়াবে, আবার টিভিতেও যাবে। ওদের কাছে এটাই নিয়ম। তাই আমার কোনো সমস্যা কখনো সমস্যা হয়ে টিকতে পারেনি।’

রীতা চৌধুরীর প্রথম সংবাদ উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা সেরকমভাবে বলার মতো কিছু নেই। কারণ, তার ক্যামেরার সঙ্গে সখ্য ছিল অনেক আগে থেকেই। শুধু ভালো লাগা ছিল মনের ভেতর। প্রথম সংবাদ পাঠ শেষে অনেকেই প্রশংসা করেছেন।

একজন ভালো সংবাদ উপস্থাপক হতে হলে কী কী গুণ থাকা দরকার এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর সংবাদ উপস্থাপনার মধ্যে পার্থক্য অনেক। এখন যারা সংবাদ উপস্থাপনায় আসছেন তারা নিজেরা অনেক গুণী। নয়ত এত কমপিটিশনে তারা টিকতে পারত না। এখন যারা এই পেশায় আসছেন তারা এটা বুঝেই আসছেন। এরপরও আমি বলবো, একজন সংবাদ উপস্থাপকের প্রথমে সংবাদকর্মী হতে হয়। উচ্চারণ শুদ্ধ এবং স্পষ্ট হতে হবে। বাংলা-ইংরেজি দুটো মিলিয়ে ফেলা যাবে না। পোশাকের বিষয়ে যতœবান হতে হবে। প্রতিদিন জোরে জোরে খবরের কাগজ পড়তে হবে, যেটা আমি এখনো নিয়মিত করি। এতে কণ্ঠস্বরের চর্চা হয়।’ সংবাদ উপস্থাপনা করতে গিয়ে টেকনিক্যাল সমস্যাসহ অনেক বিব্রতকর অবস্থার মুখেই পড়েছেন তিনি। তবে এসব সমস্যাকে বিব্রতকর মনে না করে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সামলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই কাজটাকে অনেক ভালোবাসি, তাই সব জটিলতাই আমার জন্য সহজ হয়।’ সংবাদ উপস্থাপনার জন্য আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ নেননি তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্বকলা কেন্দ্রে আবৃত্তি করেছেন এবং আবৃত্তির ক্লাস করেছেন।

সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার ইচ্ছে আছে তার। এছাড়া আর কোনো ইচ্ছে নেই। তিনি মনে করেন, সংবাদ উপস্থাপকের সম্মানী খুবই কম। তিনি আশা করেন এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া হবে। অবসর খুব একটা পান না তিনি। যেটুকু পান, এখনো প্রিয় লেখকের বই পড়েন, বাংলাসাহিত্যে এমএ করেছেন, তাই সাহিত্য তাকে খুব টানে। এছাড়া গান শোনেন, সেলাই করেন। সময় পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যান।

সমুদ্র তাকে খুব টানে। প্রিয় রং সাদা। প্রিয় খাবার মায়ের হাতের রান্না। যেটা এই জীবনে আর খাওয়া হবে না। কারণ, দীর্ঘ ৩৩ বছর হলো মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যেখান থেকে আর আসা যায় না। তাই মাঝে মাঝে নিজে রান্না করে মায়ের গন্ধ খোঁজেন।

রীতা চৌধুরী মনে করেন শুধু নিজে ভালো থাকলে, ভালো থাকা যায় না, চারপাশের মানুষদেরও ভালো রাখতে হয়। এটাই তার চিন্তাধারা। তার চিন্তাধারা সফল হোক, আনন্দভুবনের পক্ষ থেকে এই প্রত্যাশা... 

সাক্ষাৎকার : শহিদুল ইসলাম এমেল